আঁখির দাফন সম্পন্ন, গ্রামজুড়ে কান্নার রোল
|
ভুল চিকিৎসায়’ নবজাতকের পর চলে গেলেন প্রসূতি মাহবুবা রহমান আঁখিও। রাজধানীর গ্রিন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায়’ নবজাতকের মৃত্যুর পর রবিবার (১৮ জুন) দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। সোমবার (১৯ জুন) সন্ধ্যায় তার লাশ নিয়ে নিজ বাড়ি কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভার গাইনের ডহরা গ্রামে আসেন পরিবারের সদস্যরা। লাশ নিয়ে আসার খবরে আশপাশের অন্তত ১০ গ্রামের মানুষ ভিড় করে আঁখিদের বাড়িতে। গাইনের ডহর গ্রামের পাশের গ্রাম কৃষ্ণপুরের বাসিন্দা মোর্শেদুল আলম জানান, পাশের গুনতি, কইয়ারপাড়, তালতলা, দিঘিরপাড়, নরপাটি, উত্তরকূল ও আজগরাসহ প্রায় ১০ গ্রামের মানুষ আঁখিদের বাড়িতে আসে। চঞ্চল মেয়েটার এভাবে চলে যাওয়া যেন কেউই মানতে পারছে না। লাশ নিয়ে গ্রামে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের শব্দে যেন গ্রামে জুড়ে একটা শোকের আবহ সৃষ্টি হয়। সবাই কান্নায় ভেঙে পড়ে। আঁখির মা অচেতন হয়ে পড়ে। স্বজনরা তাকে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। এদিকে অনেক দূর থেকে মানুষ এসে স্থানীয় মসজিদে এশার নামাজ শেষে আঁখির জানাজার অংশ নেয়। পরে জানাজা শেষে আঁখিকে বাড়ির কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। নিহত আঁখির চাচাতো ভাই মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, এক গাড়িতে বোন (আঁখি) আর ভাগিনা ইরহাম আবদুল্লাহ আরাফের লাশ এনেছি। মৃত অবস্থাতেই তার নাম রেখেছি আমরা। জানাজা শেষ। বোনকে শেষ বিদায় দিয়েছি। তার স্মৃতি কী করে ভুলবো? শাখাওয়াত আরও জানান, আঁখির বাবা পুলিশের সাবেক সাব ইন্সপেক্টর মাহাবুবুর রহমান মজুমদার ঢাকার পান্থপথ এলাকায় কর্মরত অবস্থায় ১৯৯৯ সালে একমাত্র সন্তানকে রেখে মারা যান। জানা গেছে, গত তিন মাস ধরে সেন্ট্রাল হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন আঁখি। এ সময় তার শারীরিক অবস্থা ‘স্বাভাবিক’ ছিল বলেও চিকিৎসক জানিয়েছিলেন। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমেই সন্তান প্রসব সম্ভব বলে আশ্বস্তও করেছিলেন ডা. সংযুক্তা সাহা। প্রসব ব্যথা ওঠায় গত ৯ জুন দিবাগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. সংযুক্তার অধীনে তাকে ভর্তি করা হয়। ওই সময় ডা. সংযুক্তা সাহা দেশেই ছিলেন না, অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর স্বজনদের জানায়, সংযুক্তা সাহা আছেন এবং ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) কাজ করছেন। অন্য চিকিৎসকের মাধ্যমে স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা ব্যর্থ হলে তখন অস্ত্রোপচার করে বাচ্চা বের করা হয়। পরদিন মারা যায় শিশুটি। আঁখির অবস্থাও অবনতি হলে তাকে পাশের ল্যাব এইড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রবিবার (১৮ জুন) দুপুরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনিও মারা যান।
|