আইনি সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট বিচারপ্রার্থীরা
|
আগে মামলার যেকোনো তথ্য জানতে ঘুরতে হতো আদালতের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। এতে সময়ের পাশাপাশি অপচয় হতো অর্থের। তবে ‘আমার আদালত’ অ্যাপ চালুর পর থেকে ঘরে বসে কিংবা ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রে গেলে মুহূর্তে জানা যাচ্ছে মামলার সর্বশেষ তথ্য। এতে সবচেয়ে সুফল পাচ্ছেন পাহাড়ের দুর্গম এলাকার বিচারপ্রার্থীরা। দেশের সবচেয়ে বড় জেলা রাঙামাটি। ভূপ্রকৃতির কারণে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে কিছুটা ভিন্ন। একেক উপজেলা থেকে সদরে যেতে লেগে যায় প্রায় সারাদিন। এমন জায়গাও রয়েছে যেখানে পৌঁছাতে লাগে দুই দিন। সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য পৌঁছাতে না পারায় এসব এলাকার বাসিন্দাদের বিচার পাওয়া নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হতো। এ ধরনের সেবায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন এসব এলাকার বিচারপ্রার্থীরা। জেলা জজ আদালতের আইনজীবীরা বলছেন, অনলাইনে এমন সেবা চালু হওয়ায় বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ কমবে। অ্যাপের মাধ্যমে জানা যাবে মামলার দৈনন্দিন কার্যতালিকা। এ ছাড়া চালু আছে জুডিশিয়াল মনিটরিং ড্যাশবোর্ড। এ সেবার মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ অনেক কমে আসবে। জেলা আদালত সূত্রে জানা যায়, রাঙামাটির চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এক হাজার ৫৩২টি মামলার সবগুলোর তথ্য অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাত হাজার মামলার মধ্যে প্রায় চার হাজার মামলার তথ্য অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাকিগুলো অন্তর্ভুক্ত করার কাজ প্রক্রিয়াধীন। গত ৪ এপ্রিল লংগদু উপজেলার বাসিন্দা সোহেল রানার মামলার শুনানি হয়। আইনজীবীর ব্যস্ততার কারণে মামলার পরবর্তী তারিখ জেনে যেতে পারেননি। ইতিমধ্যে গত ১৪ এপ্রিল থেকে আদালতে চলমান মামলার তথ্য অনলাইনে দেওয়া হয়েছে। ফলে নিজের মোবাইল থেকে অ্যাপের মাধ্যমে জেনে নিয়েছেন মামলার বর্তমান অবস্থা ও পরবর্তী শুনানির তারিখ। রাঙামাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবন একই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বরকল উপজেলার ভূষণছড়া গ্রামের অরিফুর রহমান। এই বিচারপ্রার্থী বলেন, ‘মোবাইলে আমার মামলার সর্বশেষ তথ্য জেনে নিয়েছি। এতে কোনও ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়নি। আগে হাজিরা কিংবা শুনানির তারিখের জন্য পেশকার এবং আইনজীবীকে ফোন করতে হতো। অনেক সময় তারাও ফোন ধরতেন না। এ অবস্থায় দুই-তিন হাজার টাকা খরচ করে আদালতে যেতাম। এখন আর কাউকে ফোন করতে হয় না। মোবাইলে মামলার সর্বশেষ অবস্থা জেনে নির্ধারিত দিনে আদালতে গেলেই হয়।’ জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আফসার আলী বলেন, ‘সরকারের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। অনেক সময় ব্যস্ততার কারণে মক্কেলদের মামলার বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে সময় লাগতো। এতে ভোগান্তিতে পড়তেন বিচারপ্রার্থীরা। এখন অনলাইন সেবায় বিচারপ্রার্থী নিজেই নিজের মামলার সব তথ্য জানতে পারছেন। এতে আমাদের চাপ অনেক কমে গেছে। সেইসঙ্গে সুফল পাচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা।’ এটিকে স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট কাজ বলে উল্লেখ করেছেন জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি সাইফুল ইসলাম অভি। তিনি বলেন, ‘সরকার সব ক্ষেত্রে সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। অ্যাপের মাধ্যমে আইনি সেবা তার একটি বাস্তব উদাহরণ।’ অ্যাপে আইনি সেবা চালু হওয়ায় বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ কমেছে বলে জানালেন জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এই অ্যাপের বিষয়ে এখনও অনেক বিচারপ্রার্থী জানেন না। সব বিচারপ্রার্থীকে বিষয়টি জানানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সবাই উপকৃত হতেন।’
|