রবিবার ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৩১ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একমাত্র গন্ডারটি জাতীয় চিড়িয়াখানায়
প্রকাশ: রবিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৩, ০২:৪৮ অপরাহ্ণ

দেশে বর্তমানে মাত্র একটি গন্ডার আছে এবং সেটির বসবাস ঢাকার মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায়। ২০১১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দুটি গন্ডার আনা হয়েছিল— একটি নারী, অন্যটি পুরুষ। তখন তাদের বয়স ছিল সাড়ে তিন বছর।

জাতীয় চিড়িয়াখানার এই গন্ডারটি হোয়াইট রাইনো প্রজাতির আফ্রিকান গন্ডার, যার বৈজ্ঞানিক নাম সেরাটোথেরিয়াম সিমুম। এই প্রাণী দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, মোজাম্বিক, জাম্বিয়া, তানজানিয়া, অ্যাঙ্গোলা, বতসোয়ানা, কেনিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে পাওয়া যায়। এদের দেহের রঙ হলুদ, বেগুনি থেকে ধূসর বর্ণের হয়। ওজনে ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ কেজির হয়ে থাকে। শরীরের তুলনায় পা ছোট থাকে। গন্ডার কাদা পানিতে গড়াগড়ি করতে পছন্দ করে। এদের দৃষ্টির চেয়ে ঘ্রাণশক্তি প্রখর। গন্ডাররা ৩০ মিটার দূরের কোনও কিছু দেখতে পায় না।

সবুজ ঘাস ও শাকসবজি গন্ডারের প্রিয় খাদ্য। স্ত্রী গন্ডার ৬ থেকে ৭ বছরে বয়োঃপ্রাপ্ত হয়। ১৬ থেকে ১৮ মাস গর্ভধারণের পর বাচ্চা দেয়। গন্ডারের গড় আয়ু ৩৫ থেকে ৪০ বছর।

জাতীয় চিড়িয়াখানায় আগে যে দুইটি গন্ডার ছিল, তার মধ্যে পুরুষ গন্ডারটি ২০১৩ সালে মারা যায়। ব্রেন হেমোরেজে পুরুষ গন্ডারটি মারা গিয়েছিল বলে জানায় চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, সম্ভবত এটি স্ট্রোক ছিল, যার কারণে ব্রেন হেমোরেজ হয়েছিল, তারপর গন্ডারটি মারা যায়।

জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘পুরুষ গন্ডারটি মারা যাওয়ার পর স্ত্রী গন্ডারটি একাকিত্বে ভুগছিল। তার একাকিত্ব ঘোচানোর জন্য একটি ভেড়া দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে গন্ডারটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। তারপর থেকে একাই আছে।

চিড়িয়াখানার একমাত্র গন্ডাটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘পুরুষ গন্ডারটি মারা যাওয়ার পর স্ত্রী গন্ডারটি সঙ্গীহীন হয়ে পড়েছিল। খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল। তার বিহেভিয়ার আর নরমাল থাকলো না। প্রাণীর ওপরেও যে মানসিক প্রভাব পড়ে তার প্রমাণ এটা। সে সময় আমরা বিভিন্ন চিড়িয়াখানার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করলাম যে, কেন এরকম হয়ে গেলো। কিভাবে তাকে রিকভার করা যায়। পরে তারা আমাদের বললো, একটি উপায় হলো তাকে নিঃসঙ্গ অবস্থা থেকে বের করে আনা। সেটার জন্য তারাই গন্ডাটির সঙ্গী হিসেবে একটি ভেড়া দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিল। দেখা গেলো, ভেড়ার সঙ্গে তার সখ্যতা তৈরি হয়েছে। তারপর আস্তে আস্তে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

পুরুষ গন্ডারটি মারা যাওয়ার পর স্ত্রী গন্ডারটির একাকিত্বে ঘোচানোর জন্য একটি ভেড়া দেওয়া হয়েছিল| চিড়িয়াখানায় নতুন কোনও গন্ডার আনার পরিকল্পনা আছে কিনা প্রশ্নে রফিকুল বলেন, ‘আমাদের এখানে গন্ডার আনার পরিকল্পনা আছে। তবে সেটি জাতীয় চিড়িয়াখানাকে ঢেলে সাজানোর যে পরিকল্পনা রয়েছে, সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পর।’ তিনি বলেন, আমাদের পরিকল্পনা ইতোমধ্যে অনুমোদিত হয়েছে। সেক্ষেত্রে গন্ডারের বাসস্থানটি নতুন করে রিমডেলিং করবো। নতুন করে বাসস্থান রিমডেলিং করার পরেই নতুন গন্ডার আনবো। তার আগে আনার কোনও পরিকল্পনা নাই।’

গন্ডারের বর্তমান বাসস্থানটি তাদের জন্য অনুপযোগী কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন গন্ডারের যে বাসস্থানটি আছে, সেটি উপযোগী। কিন্তু আমরা সেটিকে আরও আধুনিকায়ন করবো। সে জন্য আরও ন্যাচারাল পরিবেশ সৃষ্টি করবো। তারপর নতুন গন্ডার আনা হবে।’

জাতীয় চিড়িয়াখানায় গন্ডারের থাকার জন্য যে জায়গা আছে, সেটি উপযুক্ত করেই তৈরি। কিন্তু আমরা চাচ্ছি— গন্ডারের জন্য আরও বেশি জায়গা দেওয়ার। ওরা একটু স্পেসিয়াস জায়গা চায়। ভবিষ্যতে স্পেস আরও বাড়াবো। এখানে গন্ডারের জন্য যে জলাধার বানানো আছে, আমরা চেয়েছিলাম সেই জলাধারে পানি দিয়ে গন্ডারটি সেখানে রাখার জন্য। কিন্তু আমাদের যে গন্ডারটি আছে, সে পানিতে নামে না। শুধু কাদায় থাকতে চায়। সেটাও একটা ভাবনার বিষয়। এজন্যই নতুন গন্ডার আনার ক্ষেত্রে তার বাসস্থান অ্যাডজাস্টমেন্টের বিষয় আছে। তাই আমরা গন্ডারের নতুন গন্ডার আনোর আগে অ্যাডজাস্টমেন্ট অনুযায়ী বাসস্থান তৈরি করবো।’

চিড়িয়াখানার পরিচালক বলেন, ‘গন্ডার অনেক মূল্যবান একটি প্রাণী। তার আমাদের এই চিড়িয়াখানায় বর্তমান এনভায়রনমেন্টে অ্যাডজাস্টমেন্টের একটা বিষয় আছে। সুতরাং, যতটা ন্যাচারাল পরিবেশ দিতে পারবো ততটাই ভালো। সে জন্যই এত মূল্যবান একটা প্রাণী আনার আগে তার বাসস্থান রিমডেলিং করা জরুরি।’

বর্তমানে দেশের একমাত্র গন্ডারের শারীরিক অবস্থা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, জাতীয় চিড়িয়াখানার গন্ডারটি বর্তমানে শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ আছে, ভালো আছে। তার আচরণও ভালো। যিনি অ্যাটেনডেন্স আছেন, তার সঙ্গেও গন্ডারটির দারুণ সখ্যতা রয়েছে।

চিড়িয়াখানার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাতীয় চিড়িয়াখানায় বর্তমানে ১৩১ প্রজাতির ৩ হাজার ৩৪২টি প্রাণী আছে। এর মধ্যে বাঘ আছে ১৩টি, সিংহ ৭টি, হাতি ৫টি, জিরাফ ৭টি, জেব্রা ৮টি, জলহস্তী ১৩টি, ক্যাঙ্গারু ২টি, ভাল্লুক ৪টি ও হায়েনা আছে ৩টি।







সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ