রবিবার ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৩১ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃষিপণ্যের উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনবে ‘পার্টনার’
প্রকাশ: রবিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৫৫ অপরাহ্ণ

সরকার দেশের খাদ্যশষ্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনতে চায়। বিদ্যমান কৃষি ব্যবস্থাকে রূপান্তর ঘটিয়ে বাণিজ্যিক কৃষিতে পরিবর্তন আনতে চায়। দেশের কৃষিপণ্যের বৈচিত্র্য বাড়ানোসহ রফতানি বাজার সম্প্রসারণ করতে চায়। একইসঙ্গে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, রফতানিমুখী কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি, জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষিতে সম্প্রসারণ ঘটাতে চায় সরকার। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, এ লক্ষ্যে ‘প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুর‌্যাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রেশন, এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ- (পিএআরটিএনইআর)’ বা ‘পার্টনার’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ‘জাতীয় কৃষিনীতি-২০১৮’ এর মূল লক্ষ্য নিরাপদ, লাভজনক কৃষি এবং টেকসই খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে প্রকল্পটি সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সরাসরি সঙ্গতিপূর্ণ। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকের অনুমোদন পেয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, দেশের ৮টি বিভাগের ১৪টি কৃষি অঞ্চল, ৬৪টি জেলাসহ ৪৯৫টি উপজেলার সব ইউনিয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এটি বাস্তবায়নে মোট ৬ হাজার ৯১০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় হবে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে ১ হাজার ১৫১ কোটি ১৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা আইডিএ এবং ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট-ইফাদ থেকে ঋণ সহায়তা বাবদ পাওয়া যাবে ৫ হাজার ৭৫৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বিদ্যমান কৃষি ব্যবস্থাকে রূপান্তর ঘটিয়ে বাণিজ্যিক কৃষিতে পরিবর্তন করা, খাদ্যশস্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনা, কৃষিপণ্য রফতানির উদ্দেশ্যে কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি ও উন্নয়ন করা এবং জলবায়ু সহিষ্ণু এগ্রিফুড ভ্যালু-চেইনের সম্প্রসারণ ঘটানোর উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে সরকার। প্রকল্পটি চলতি ২০২৩ সালের জুলাইতে শুরু হয়ে ২০২৮ সালের জুন নাগাদ মেয়াদে শতভাগ বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করছে উদ্যোক্তা মন্ত্রণালয়।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাধ্যমে কৃষক, উদ্যোক্তা এবং কর্মচারীদের ব্যবহার করে প্রযুক্তিগত প্রদর্শনী, কৃষক স্মার্ট কার্ড প্রবর্তনের মাধ্যমে ডিজিটাল কৃষিসেবা নিশ্চিতকরণ, সেচ অবকাঠামো আবাসিক, অনাবাসিক ভবন নির্মাণ, মোবাইল ক্রপ ক্লিনিক ও কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়, জাতীয় ও আঞ্চলিক সেমিনার ও ওয়ার্কশপ আয়োজন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ ও উচ্চ শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন ঘটানো হবে।

কৃষি বিপণন অধিদফতরের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ, শস্য গুদাম, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, প্রসেসিং হাউজ ভবন নির্মাণ, বাজার চাহিদা, মূল্য পূর্বাভাস ইত্যাদি সম্পর্কে গবেষণা, দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হবে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাঊন্সিলের মাধ্যমে রাস্তা, সেচ ব্যবস্থাপনা, ট্রেনিং কমপ্লেক্স, রিসার্চ কনসোর্টিয়াম অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে, উচ্চ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল রিসোর্স সিস্টেমের সক্ষমতা বাড়ানো ও যন্ত্রপাতি কেনা হবে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, সেচ যন্ত্রপাতি ও ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি কেনা হবে। বীজ উৎপাদন ও সার বিতরণ করা হবে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে আধুনিক শস্যের স্বত্ব চালুকরণ ও ফসলের জাত উদ্ভাবন, ল্যাব ও ট্রেনিং কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। বিজ্ঞানীদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ ও উচ্চ শিক্ষা দেওয়া হবে। গবেষণাগারের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা হবে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে ফলনের সম্ভাবনা বাড়ানোর গবেষণা ও অ্যাডাপটিভ ট্রায়াল, ক্রপিং প্যাটার্ন উন্নয়ন ও সেচ প্রযুক্তির উদ্ভাবনের গবেষণা, নতুন জাত উদ্ভাবন ও উদ্ভাবিত জাতের প্রদর্শনী, অ্যাক্রেডিটেশন পরীক্ষা ও গবেষণা যন্ত্রপাতি কেনা হবে।

এছাড়া বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সেচ যন্ত্রপাতি ক্রয় ও সেচ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন করা হবে। দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

কমিশন সূত্র আরও জানিয়েছে, ‘প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রেশন, এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড রেজিলিয়েশন ইন বাংলাদেশ (পিএআরটিএনইআর) ‘পার্টনার’ শীর্ষক প্রকল্পটি চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের আরএডিপিতে বৈদেশিক অর্থায়ন অংশে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

কমিশন জানিয়েছে, সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বর্ণিত ফসল উপখাতের উৎপাদনশীলতা ও উৎপাদন বৃদ্ধি বাস্তবায়নে প্রত্যক্ষভাবে সঙ্গতিপূর্ণ। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-২ এ বর্ণিত খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টিমান অর্জন এবং টেকসই কৃষির প্রসার, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-৮ এ বর্ণিত উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃজন এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-১৩ এ বর্ণিত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সঙ্গতিপূর্ণ। জাতীয় কৃষি নীতি-২০১৮ এর মূল লক্ষ্য নিরাপদ, লাভজনক কৃষি এবং টেকসই খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে প্রকল্পটি প্রত্যক্ষভাবে সঙ্গতিপূর্ণ।

একনেকের অনুমোদনের সুপারিশ করে পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলা হয়েছে— বাংলাদেশের কৃষি পণ্যের বৈচিত্র্য বৃদ্ধিকরণ, কৃষিপণ্যের রফতানি বাজার সম্প্রসারণ, পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, রফতানিমুখী কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি, জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষি সম্প্রসারণে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ কারণে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়।

কমিশন আরও জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার, আইডিএ এবং ইফাদ এর যৌথ অর্থায়নে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (লিড এজেন্সি) কর্তৃক প্রস্তাবিত প্রকল্পটি মোট ৬৯১০.৯৪ কোটি (জিওবি ১১৫১.১৪ কোটি এবং প্রকল্প ঋণ ৫৭৫৯.৮০ কোটি) টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে জুলাই ২০২৩ হতে জুন ২০২৮ মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একনেক-এর অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলো।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানিয়েছেন, দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে। মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন হচ্ছে। ফলে দেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিদ্যমান কৃষি ব্যবস্থাকে রূপান্তর ঘটিয়ে বাণিজ্যিক কৃষিতে পরিবর্তন আসবে। কৃষিপণ্যের বৈচিত্র্য বাড়বে।কৃষিপণ্যের রফতানি বাজার সম্প্রসারিত হবে।







সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ