বুধবার ৩০ অক্টোবর ২০২৪ ১৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজীপুরে পুলিশ-পোশাক শ্রমিক সংঘর্ষ, নারী নিহত
প্রকাশ: বুধবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:২৮ অপরাহ্ণ

গাজীপুরে আন্দোলনরত পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে আঞ্জুয়ারা খাতুন নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন অন্তত আরও ১০ শ্রমিক।

বুধবার (৮ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানিয়েছেন নিহতের স্বামী জামাল বাদশা ও ভাই মোস্তফা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া আঞ্জুয়ারার মৃত্যুর বিষয়টি  নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুজন ঢামেকে এসেছিলেন। এদের মধ্যে আঞ্জুয়ারা নামে এক নারীকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেকের জরুরি বিভাগের মর্গে আছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে জানানো হয়েছে।

তবে কোনাবাড়ী থানার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার খায়রুল আলম  বলেন, নারীশ্রমিক নিহতের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নই। তবে গুরুতর আহত অবস্থায় ওই নারীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি পদদলিত হয়ে নাকি অন্য কোনোভাবে আহত হয়েছেন তা জানা যায়নি।

নিহত আঞ্জুয়ারা কোনাবাড়ী জরুন এলাকার ইসলাম গার্মেন্টস-২ এর সেলাই মেশিন অপারেটর পদে চাকরি করতেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুর থানার চরগিরিশ এলাকায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বেতন বাড়ানোর দাবিতে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে আসছিলেন। এরপর ৭ নভেম্বর পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট না শ্রমিকরা।

তাই গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকদের একাংশের বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। সকালে মহানগরীর কোনাবাড়ী ও জরুনসহ বিভিন্ন এলাকায় পোশাক শ্রমিকরা বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।

এ সময় পুলিশ বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের মহাসড়কে উঠতে বাধা দেয়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাঁধে। শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশও রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে নারীসহ অন্তত ১১ শ্রমিক আহত হন।

আহতদের মধ্যে আঞ্জুয়ারা ও নেত্রকোনর কেন্দুয়া থানার বাসাটি গ্রামের বাসিন্দা ও ইসলাম গার্মেন্টসের সুপারভাইজার জালাল উদ্দিনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। বাকিদের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন।

আঞ্জুয়ারার স্বামী জামাল বাদশার দাবি, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গার্মেন্টস শ্রমিকরা বেতন ভাতার দাবিতে আন্দোলনে নামে। এ সময় ইসলাম গার্মেন্টসের সামনে পুলিশের গুলিতে তার স্ত্রী আঞ্জুয়ারা ও জালাল গুরুতর আহত হন। সহকর্মীরা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতাল পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আঞ্জুয়ারাকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত জালাল জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন।

বাদশা আরও বলেন, আমার স্ত্রী ইসলাম গার্মেন্টেসের কর্মী ছিল। আমরা গাজীপুর কোনাবাড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকি। আমাদের এক ছেলে এক মেয়ে আছে। এখন আমার সন্তানদের কে দেখবে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আশরাফ উদ্দিন  বলেন, শ্রমিকরা আঞ্চলিক সড়কগুলোতে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। এছাড়া ভাঙচুরের চেষ্টা করেন। শ্রমিকদের মহাসড়কে নামতে দেওয়া হয়নি। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক।

 







সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ