গাজীপুর-বিমানবন্দর রুট: ঈদের আগেই খুলছে আরও ৪.৫ কিমি ফ্লাইওভার
|
গাজীপুর-টঙ্গী-উত্তরা-বিমানবন্দর করিডোরে ২০ কিলোমিটার বিআরটি (বাস র্যাপিড ট্রানজিট) লাইনের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। এরইমধ্যে উত্তরার হাউজ বিল্ডিং থেকে টঙ্গী স্টেশন পর্যন্ত প্রকল্পের ফ্লাইওভারের একাংশের উদ্বোধন করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রকল্পের অপর অংশ হাউজ বিল্ডিং থেকে চেরাগআলী পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার এলিভেটেড ফ্লাইওভারও ঈদুল আজহার আগে খুলে দেওয়া হবে। ঈদ সামনে রেখে বিমানবন্দর ফ্লাইওভারের দুদিকে যান চলাচল শুরুর বিষয়ে মন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ী কাজও চলছে জোরেশোরে। ঈদের আগেই বিমানবন্দর সড়কের উভয়পাশ ও জসিমউদদীন সড়ক-সংলগ্ন রুটও খুলে দেওয়া হবে। এতে দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান হবে, যাতায়াতে ফিরবে স্বস্তি। জানা গেছে, আরামদায়ক, ব্যয়সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব, আধুনিক, টেকসই ও নিরাপদ নগর পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে গাজীপুর-টঙ্গী-উত্তরা-বিমানবন্দর করিডোরে বিআরটি লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। হাউজ বিল্ডিং থেকে চেরাগআলী পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার এলিভেটেড ফ্লাইওভার ও সেতু। এর মধ্যে সাড়ে তিন কিলোমিটার ছয় লেনের সড়ক। এক কিলোমিটার দুই লেনের সড়ক। ছয়টি এলিভেটেড স্টেশন ও একটি ১০ লেনের টঙ্গী সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এ রুটে চলাচলের জন্য আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে কেনা হবে ৫০টি আর্টিকুলেটেড বাস। এসব গাড়ি কখনো মাটি ঘেঁষে আবার কখনো এলিভেটেড সড়কে চলাচল করবে। এ র্যাপিড ট্রানজিট লাইন চালু হলে দুর্ভোগের ঢাকা-গাজীপুর সড়ক মাত্র ৪০ মিনিটেই পাড়ি দেওয়া যাবে। এ রুটে বাস মিলবে দেড় থেকে তিন মিনিট পরপর। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. ইসহাক বলেন, ‘সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশনা রয়েছে, যাতে ঈদের আগেই বিআরটি লেনের কিছু অংশ খুলে দেওয়া হয়। নির্দেশনার আলোকে প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা রাত-দিন নিরলস পরিশ্রম করছেন। আশা করছি, দ্রুত উত্তরার জসিমউদদীন সড়কের অংশ ও বিমানবন্দর সড়কের উভয়পাশ খুলে দেওয়া সম্ভব হবে। পাশাপাশি সাড়ে চার কিলোমিটার এলিভেটেড ফ্লাইওভারও খুলে যাবে। ঈদের আগে এ সড়কে চলাচলে কষ্ট থাকবে না। বিমানবন্দর থেকে টঙ্গী সহজেই যাতায়াত করা যাবে।’ তিনি বলেন, ‘ভোগরা পর্যন্ত সব স্টেশনের কাজ ঈদের আগে শেষ করা সম্ভব। জয়দেবপুর ফ্লাইওভারের ৫৪টি পিসি গার্ডারের মধ্যে ৪৭টির স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি মাত্র সাতটি। চৌরাস্তা ফ্লাইওভারের গার্ডারের বিষয়ে সওজের প্রধান প্রকৌশলীর পর্যালোচনা অনুযায়ী- বুয়েটের সঙ্গে আলাপ করে এবং পরিদর্শন শেষে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে বুয়েট বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এখনো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। এ রুটে চলাচলকারী মানুষের দুর্ভোগের সীমা নেই। ঈদে এ রুটে ট্রাফিক কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ২০ কিলোমিটার সড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তবে ঈদের আগে এ সড়কে স্বস্তি মিলবে বলে জানিয়েছে সওজ। চার হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা (এএফডি) ও গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ) অর্থায়ন করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সম্পূর্ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নে সওজের কাজ ১৬ কিলোমিটার, যার মধ্যে সাতটি ফ্লাইওভার রয়েছে। এর মধ্যে একটি চুক্তির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। পাকেজের একটি ভ্যারিয়েশন প্রক্রিয়াধীন। সেই ভ্যারিয়েশন অনুযায়ী- প্যাকেজের ভৌত অগ্রগতি ৯০ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৭৩ শতাংশ। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের আওতায় ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণের অগ্রগতি ৮৫ শতাংশ। অন্যদিকে এলজিইডির আওতাধীন দুটি প্যাকেজের অগ্রগতি শতভাগ। প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৮৮ দশমিক ৩ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। চলতি অর্থবছর বরাদ্দ ৩০২ কোটি টাকা, যার মধ্যে ২৬৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। অবশিষ্ট ৩৬ কোটি টাকা এ অর্থবছর খরচ করা সম্ভব। তবে ঠিকাদারের কাজের অগ্রগতি আশানুরূপ নয়। বিমানবন্দর ফ্লাইওভারের কাজ এ অর্থবছরে শেষ করার চেষ্টা চলছে। একদিকে এরইমধ্যে যান চলাচল শুরু হয়েছে। অপর অংশে যান চলাচল জুলাইয়ে শুরু করা সম্ভব হবে। সওজের অংশের কাজ প্রকল্পের উদ্দেশ্য অন্যদিকে যাত্রীরা দ্রুত কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারবে। ফলে কর্মদক্ষতা বাড়বে, যা অর্থনীতিতে ব্যাপক গতি আনবে। যাত্রীরা অর্থনৈতিকভাবে উপকৃতও হবেন। তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। ১০০টি আর্টিকুলেটেড বাসের টিকিট বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত টাকা সরকারের রাজস্ব খাতকে শক্তিশালী করবে। |