বুধবার ১৬ অক্টোবর ২০২৪ ৩১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চোরাচালানী ও বখরাবাজদের স্বর্গরাজ্য গোয়াইনঘাট সীমান্ত
প্রকাশ: রবিবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ০২:২৫ পূর্বাহ্ণ

সিলেট প্রতিনিধিঃ সিলেটের গোয়াইনঘাট সীমান্ত চোরাচালানী ও বখরাবাজদের স্বর্গরাজ্য। সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে অবাঁধে আসছে ভারতীয় গরু মহিষ, চিনি, পান মসলা প্রভৃতি পণ্যের চালান। বিপরীতে যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে মূল্যবান পণ্য সামগ্রী ও বৈদেশিক মূদ্রা। এমন অভিযোগ স্থানীয় জনগনের।

সীমান্ত সূত্র থেকে প্রাপ্ত অভিভযোগে জানা যায়, সম্প্রতি বাংলাদেশে গো-মাংস ও চিনির দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় গোয়াইনঘাট সীমান্ত হয়ে ওঠেছে গরু ও চিনি চোরচালানের ট্রানজিট পয়েন্ট। সক্রিয় হয়ে ওঠেছে চোরাকারবারি ও বখরা সিন্ডিকেট।
অভিযোগে প্রকাশ, চোরাকারবারিদের প্রধান হচ্ছেন গোয়াইনঘাটের রাধানগর গ্রামের আব্দুল্লাহ। আব্দুল্লাহই নিয়ন্ত্রন করে চোরাকারবারীদের এই সিন্ডিকেট।

অন্যদিকে চোরচালান নির্বিঘ্নে করার জন্য গোয়াইনঘাটে গড়ে ওঠেছে আরেকটি বখরা সিন্ডিকট। এই বখরা সিন্ডিকেটে রয়েছেন গোয়াইঘাট থানা পুলিশের দুইজন অফিসার সহ ৮ লাইনম্যান। বখরা সিন্ডিকেট সদস্য তথা লাইম্যানরা থানার ওসি কেএম নজরুল-এর নামে বখরা আদায় করে থাকেন। তারা চোরকারবরিদের কাছ থেকে ভারতীয় গরুপ্রতি ১হাজার টাকা করে পুলিশের বখরা আদায় করে থাকেন। চোরাইপথে আনা চিনির বস্তা প্রতি আদায় করেন ২শ’ টাকা করে।

এভাবে প্রতিদিন হাজার হাজার গরু-মহিষ ও হাজার বস্তা চিনি আমদানী হচ্ছে থানার বিছনাকান্দি ও প্রতাপপুর-সোনারহাট সীমান্ত দিয়ে।
বখরাবাজ লাইম্যানরা হচ্ছেন সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার এসআই জহির ও এসআই মিহির। তাদের নিয়োজিত লাইনম্যানরা হচ্ছেন বিছনাকান্দি সীমান্তে থাকা শেরগুল ও নুরু। প্রতাপপুর সীমান্তে থাকা মোস্তফা ও হেলাল এবং সোনারহাট সীমান্তে বিএনপির মেম্বার কামাল ও শাকিল। শাকিল উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ফারুক আহমদের ভাই। শাকিল প্রত্যহ চোরাই ১ হাজার গরু থেকে গরুপ্রতি ১ হাজার টাকা করে থানার ওসির তহবিলে দিয়ে থাকেন এবং তিনি সকল লাইনম্যানদের সমন্বয় করে থাকেন বলে অভিযোগে প্রকাশ।

অভিযোগে রয়েছে, ওসি কে এম নজরুল থানার এসআই মিহিরকে বিছনাকান্দি সীমান্তে বখরা আদায়ের জন্য নিয়োজিত করে রেখেছেন। এই সীমান্ত দিয়ে গরুপ্রতি প্রথমে বখরা আদায় করেন শেরগুল ও নুরু। পরে তারা থানা পুলিশের টাকার ভাগ এসআই মিহিরে কাছে বুঝিয়ে দেন।
সোনারহার্ট-প্রতাপপুৃর সীমান্তে গরুর টাকা আদায় করেন বিএনপির কামাল মেম্বার ও হেলাল মেম্বার। এই দুইজনই থানার এসআই জহিরকে পুলিশের টাকার হিসাব বুঝিয়ে দেন।

এছাড়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ফারুক আহমদের ভাই সাকিল আলাদা করে ওসির নামে ১শ’ টি গরুর টাকা আদায় করে তা সরাসরি ওসিকে বুঝিয়ে দেন। লাইনম্যান হেলাল মেম্বার মাস শেষে বখরার একটা অংশ স্থানীয় কিছু নেতা-খেতাদের মোবাইলে বিকাশ করে পাঠিয়ে দেন।
গরু ছাড়াও প্রতিদিন সীমান্ত দিয়ে গাড়ি ভর্তি ভারতীয় খাসিয়া পান ও ভারতীয় চিনি প্রবেশ করে । এসব পণ্যের বখরা একাই বুঝে নেম গোয়াইঘাট থানার এসআই জহির। চিনির বস্তা প্রতি এসআই জহিরকে ২শ’ টাকা করে দিতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
চোরচালানের বিষয়ে নিউজ না করার জন্য সিন্ডিকেট প্রধান আব্দুল্লাহ এ প্রতিবদকের সাথে দেখা করার প্রস্তাব দিলে প্রতিবেদক তা প্রত্যাখ্যান করেন।

এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার এসআই জহির ও এসআাই মিহির’র সাথে সেলফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা বখরা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তারা উপরে বর্ণিত লাইনম্যানদের কাউকে চিনেন না বলেও জানান। গোয়াইনঘাট থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মেহেদী হাসানের সাথে সেলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগের বিষয়ে সত্য-মিথ্য কোনো বক্তব্য না দিয়ে ফোনে শুধুমাত্র বখরাবাজদের নাম লিখে নেন।

অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য নিতে গোয়াইনঘাট থানার ওসি কেএম নজরুলের সরকারি সেলফোনে বার বার কল দিলেও তিনি সাংবাদিকের মোবাইল ফোন রিসভ করেননি। গোয়াইনঘাট সার্কেলের এএসপি প্রবাস কুমার সিংহের সেলফোনে কল দিলে তিনি এটা সম্পূর্ণ ওসির ব্যক্তিগত বিষয় বলে কল কেটে দেন।







সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ