জুমার দিন যে বিশেষ ইবাদত করতে বলা হয়েছে
|
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার ওপর জুমার দিন বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কারণ আমার উম্মতের দরুদ জুমার দিন আমার কাছে পৌঁছানো হয়। যে ব্যক্তি আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পাঠাবে সে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন সবচেয়ে আমার কাছাকাছি হবে। (তারগিব ১৬৭৩) জুমার দিন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি বেশি বেশি দরুদ পড়ার দিকনির্দেশনা এসেছে হাদিসে। এটি জুমার দিনের বিশেষ ইবাদত ও আমল। অন্য হাদিসে হাদিসে জুমার দিনের শ্রেষ্ঠত্ব ও দরুদের আমলের প্রতি বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে এভাবে- হজরত আওস ইবন আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘দিনসমূহের মধ্যে জুমার দিনই সর্বোৎকৃষ্ট। এই দিনই আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয় এবং এই দিন তিনি ইন্তিকাল করেন। ঐ দিনে শিংগায় ফুঁ দেয়া হবে। ঐ দিন সমস্ত সৃষ্টিকুল বেহুশ্ হবে। অতএব তোমরা এ দিন আমার উপর বেশি বেশি দরুদ পাড়ো, কেননা তোমাদের দরুদ আমার সম্মুখে পেশ করা হয়ে থাকে। সাহাবিগণ জিজ্ঞাসা করেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার দেহ তো গলে যাবে। এমতাবস্থায় আমাদের দরুদ কিরূপে আপনার সম্মুখে পেশ করা হবে? তিনি বলেন, আল্লাহ জাল্লা জালালুহু আম্বিয়ায় কেরামের দেহসমূহ মাটির জন্য (বিনষ্ট করা হতে) হারাম করে দিয়েছেন।’ (আবু দাউদ ১০৪৭, নাসাঈ ১৩৭৪, ইবন মাজাহ ১০৮৫) মনে রাখতে হবে: হাদিসে জুমার দিনে দরুদ পড়ার দিকনির্দেশনাই নয়, বরং আল্লাহ তাআলা মানুষকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে- اِنَّ اللّٰهَ وَ مَلٰٓئِکَتَهٗ یُصَلُّوۡنَ عَلَی النَّبِیِّ ؕ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا صَلُّوۡا عَلَیۡهِ وَ سَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবির প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও নবির জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। হে বিশ্বাসীগণ! তোমরাও নবির জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং তাকে উত্তমরূপে অভিবাদন কর। (দরুদ ও সালাম পেশ কর।)’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৫৬) হাদিস থেকে প্রমাণিত জুমার দিনের সর্বোত্তম আমলের মধ্যে দরুদ একটি। এ দিনের দরুদের আমলের বরকতে মহান আল্লাহ মানুষকে অনেক বিপদ থেকে হেফাজত করবেন। যেহেতু এ হাদিসে কেয়ামতের কিছু কথাও আলাচিত হয়েছে। তারপরই দরুদ পড়ার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং সবার উচিত, জুমার দিন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি বেশি বেশি দরুদ পড়া। ছোট-বড় অনেক দরুদ রয়েছে। যদি কেউ বড় দরূদে ইবরাহিম বা দরূদে উম্মি পড়তে না পারেন, তবে ন্যূনতম সালাত ও সালামের এ ছোট্ট অংশটুকু পড়ে নেওয়ার মাধ্যমে ঘোষিত ফজিলত পাওয়া যাবে। তাহলো- ১. صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّم ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ এছাড়া দরুদে ইবরাহিমও পড়া যেতে পারে। তাহলো- ২.اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন; কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম; ইন্নাকা হামিদুম মাঝিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিনও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন; কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম; ইন্নাকা হামিদুম মাঝিদ। অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন; যেভাবে আপনি ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও তাঁর বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি অতি প্রশংসিত, অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী। হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর বংশধরদের উপর তেমনি বরকত দান করুন যেমনি আপনি বরকত দান করেছেন ইবরাহিম আল্লাইহিস সাালম ও তার বংশধরদের উপর। নিশ্চয়ই আপনি অতি প্রশংসিত, অতি মর্যাদার অধিকারী।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ) ৩. اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আযওয়াঝিহি ওয়া জুররিয়্যাতিহি কামা সাল্লাইতা আলা আলি ইবরাহিমা; ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আযওয়াঝিহি ওয়া জুররিয়্যাতিহি কামা বারাকতা আলা আলি ইবরাহিম; ইন্নাকা হামিদুম মাঝিদ।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর, তাঁর স্ত্রীগণের উপর এবং তাঁর বংশধরদের উপর রহমত নাজিল করুন; যেভাবে আপনি রহমত নাজিল করেছেন ইবরাহিম আলাইহিস সালামের বংশধরদের উপর। আর আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর, তাঁর স্ত্রীগণের উপর এবং তাঁর বংশধরগণের উপর এমনিভাবে বরকত নাজিল করুন যেভাবে আপনি বরকত নাজিল করেছেন ইবরাহিম আলাইহিস সালামের বংশধরদের উপর। নিশ্চয়ই আপনি অতি প্রশংসিত এবং অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ) আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার দিন দরুদের আমল ও ইবাদতে নিজেদের নিয়োজিত করার তাওফিক দান করুন। বেশি বেশি দরুদ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন। |