ধূমপান সমর্থন করে না ইসলাম
|
‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’ এ উক্তির সঙ্গে মানবসমাজ বেশ পরিচিত। তারপরও ধূমপানের প্রতি মানুষের আসক্তির যেন কমতি নেই। এর মাধ্যমে মানুষের সুন্দর শরীর যেমন দিনের পর দিন অসুস্থ শরীরে পরিণত হয়; তেমনই মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়ে। বিশ্বে যত লোকের মৃত্যু ঘটে, তার মধ্যে দ্বিতীয় প্রধান কারণ হচ্ছে ধূমপান। বর্তমানে সিগারেটের ব্যাপকতা, সুন্দর ও নৈতিকতাপূর্ণ সমাজ গঠনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধূমপানের মতো বদ অভ্যাস থেকে বিরত থাকতে ইসলাম সব সময় উৎসাহ জুগিয়েছে। কারণ এসব কিনলে অর্থের অপচয় ঘটে। ইসলাম অপচয় ও অপব্যয়কে সমর্থন করে না। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, انه لا یحبّ الۡمسۡرفِیۡن অর্থাৎ, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ অপব্যয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা আরাফ: ৩১) لا ضرر ولا ضرار অর্থাৎ, ‘নিজের স্বার্থে অন্যের ক্ষতি করবে না, তদ্রুপ পরস্পর কারো ক্ষতি করবে না।’ (ইবনে মাজাহ: ২৩৪০) অথচ অনেকে মনে করেন, ধূমপানের মাধ্যমে ক্লান্তি ও টেনশন দূর হয় এবং মানসিক শান্তি পাওয়া যায়। কিন্তু ধূমপানের মাঝে এসব কিছুই নেই। বরং অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর মাধ্যমে মানব শরীরে অসংখ্য রোগের উৎপত্তি ঘটে। যেমন হাঁপানি, মাথা ব্যথা, লিভার সিরোসিস, ব্রেন স্ট্রোক, নাকের অনুভূতি শক্তির দুর্বলতা ও দাঁতগুলো হলুদ বর্ণ ধারণ করে প্রভৃতি। গবেষকদের মতে, সিগারেটের একটি টানে তিন হাজারেরও বেশি রাসায়নিক পদার্থ মানব শরীরে প্রবেশ করে। বিড়ি-সিগারেটের মধ্যে থাকা তামাক ও নিকোটিন অত্যন্ত ক্ষতিকর। কারণ এগুলো মানুষকে নেশাগ্রস্ত করে এবং নিকোটিন দ্বারা শরীরের সব টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অথচ ইসলামে নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ অর্থাৎ, ‘আর যা নেশা উদ্রেক করে, তাই নিষিদ্ধ।’ (সহিহ মুসলিম: ৫১১৪) শুধু তা-ই নয়, ধূমপানের কারণে সৃষ্ট সবচেয়ে ক্ষতিকর রোগ হলো ক্যানসার। মানব শরীরের ফুসফুসে, জিহ্বায়, কিডনি ও মুখে ক্যানসারসহ সব রকমের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গবেষণায় দেখা যায়, সিগারেটে ৬৫ ধরনেরও বেশি ক্যানসার সৃষ্টিকারী পদার্থ থাকে। আর ক্যানসার রোগে আক্রান্ত হওয়ার মাধ্যমে মানুষ মৃত্যুর দিকে পতিত হয়। ফলে ধূমপানের মাধ্যমে মানুষ নিজেই নিজের জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অথচ আল্লাহ্ বলেন, وَلَا تُلۡقُوۡا بِاَیۡدِیۡکُمۡ اِلَی التَّهلُکة অর্থাৎ, ‘তোমরা নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের দিকে প্রসারিত করো না।’ (সুরা বাকারা: ১৯৬) এজন্য সমসাময়িক যুগের অধিকাংশ আলেমের মতে, ‘ধূমপান করা নাজায়েজ। অনুরূপ ধূমপানের ব্যবসাও মাদকদ্রব্যের ন্যায় নাজায়েজ।’ কেননা ধূমপান হচ্ছে নিকৃষ্ট কাজ এবং এর মধ্যে ক্ষতিকর পদার্থ রয়েছে। যার মাধ্যমে মানুষের ক্ষতিসাধন হয়। আর ইসলাম সব ক্ষতিকর ও অপবিত্র বস্তু হারাম ঘোষণা করেছে। অথচ এ ব্যাপারে অনেকেই গুরুত্ব প্রদান করে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ویُحِلّ لَهمُ الطّیّبٰتِ ویُحَرّمُ عَلَیۡهمُ الۡخَبٰئِث অর্থাৎ, ‘তিনি তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করেন, আর অপবিত্র বস্তু হারাম করেন।’ (সুরা আরাফ: ১৫৭) তাই ধূমপান থেকে বিরত থাকা একজন মুসলিম ব্যক্তির জন্য অত্যাবশ্যক। তবে ধূমপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি এর থেকে পরিত্রাণ পেতে কিছু পন্থা অনুসরণ করতে পারেন। যেমন- وَتُوۡبُوۡۤا اِلَی اللّٰه جَمِیۡعًا اَیُّه الۡمُؤۡمِنُوۡنَ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ অর্থাৎ, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা আন-নূর: ৩১) ২. বেশি বেশি নামাজ, রোজা ও কুরআন তেলাওয়াত করা। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, ৩. অসৎ বন্ধু পরিহার করে সৎ ব্যক্তিকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করা। এ ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করে আল্লাহ্ বলেন, ৪. ধূমপানের কথা স্মরণ হওয়া মাত্রই আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা ও জাহান্নামের শাস্তির কথা স্মরণ করা উচিত। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, ৫. নৈতিক শিক্ষা প্রদান। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় এর অভাব বেশ লক্ষ্যণীয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান সমাজে উঠতি বয়সী তরুণরা ধূমপানের সঙ্গে বেশ সম্পৃক্ত আছে। এর পেছনে যেসব কারণ আছে- এর জন্য প্রত্যেক বাবা-মার উচিত সন্তানকে বাল্যকালেই ধর্মীয় মূল্যবোধ শিক্ষা দেওয়া। কেননা ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ফরজ। যেমন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সর্বোপরি ব্যক্তি থেকে শুরু করে সামাজিক পর্যায়ে এ ক্ষতিকর ধূমপান নির্মূলে সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। তবেই সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গঠন করা সম্ভব হবে। আল্লাহ্ সবাইকে তৌফিক দান করুন, আমিন। |