নিষেধাজ্ঞায় দুশ্চিন্তায় জেলেরা
|
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মা নদীর নাব্যতা কমেছে, এখন স্রোত নেই বললেই চলে। সেইসঙ্গে নদীতে জেগেছে চর। ফলে গত মৌসুমে তেমন মাছের দেখা পাননি জেলেরা। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এ অবস্থায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে জেলেদের। তারা বলছেন, পদ্মায় ডুবোচরের কারণে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। মাঝেমধ্যে জেগেছে চর। আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। মাছ না পাওয়ায় গত কয়েক সপ্তাহে জাল নিয়ে শূন্যহাতে বাড়ি ফিরেছেন। ফলে এবার নিষেধাজ্ঞার সময়ে কষ্টে দিনাতিপাত করতে হবে তাদের। কয়েকজন জেলের অভিযোগ, জেলে নিবন্ধন তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন একাধিক প্রকৃত জেলে। ফলে নিষেধাজ্ঞার সময়ে তাদের দুর্ভোগে পড়তে হবে। তবে মৎস্য কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রকৃত জেলেদের নিবন্ধন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ আছে। বাদ পড়া কেউ আবেদন করলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সোমবার (২২ মে) সরেজমিনে গোয়ালন্দ ঘাট এলাকায় দেখা গেছে, কিছু কিছু স্থানে পদ্মা নদী শুকিয়ে গেছে। মাঝ নদীতে জেগে উঠেছে চর। জেলেদের নদীর পাড়ে অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছেঁড়া-ফাটা জাল মেরামত করছেন। কেউবা জাল গুটিয়ে খামাল (স্তূপ) দিয়ে রাখছেন। আবার কেউ নৌকা সংস্কার করছেন। দৌলতদিয়া ঘাটের ছাত্তার মেম্বার পাড়ার কয়েকজন জেলে জানিয়েছেন, পদ্মার মিঠা পানির ইলিশ সবার প্রিয়। একসময় জাল ফেললে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়তো। এমনকি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে যেতো এসব মাছ। কিন্তু এখন নদী যেমন ছোট হয়ে আসছে, তেমনি চর পড়েছে, আবার শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে কমে গেছে ইলিশ। নদীর গভীরতা না থাকায় আগের মতো ইলিশ ধরা পড়ছে না। এদিকে, সামুদ্রিক মাছের নিরাপদ প্রজনন ও উৎপাদন বাড়াতে গত শুক্রবার (১৯ মে) মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত বলবৎ থাকবে এই নিষেধাজ্ঞা। ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে নদী থেকে জাল উঠিয়ে তীরে ফিরেছেন জেলেরা। দৌলতদিয়া ঘাটের ছাত্তার মেম্বার পাড়ার জেলে কালিদাস হালদার বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা শুরুর কয়েকদিন আগে থেকে নদীতে প্রতিদিন জাল ফেললেও ইলিশ পাইনি। মাছ না পেলে আড়তদারদের দেনা বাড়ে। নিষেধাজ্ঞার সময় ঘরে বসে থাকতে হয়। এতে ঋণের বোঝা দিন দিন বাড়ছে। তবু ঘরে ফিরেছি শূন্যহাতে। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময়ে কীভাবে সংসার চালাবো বুঝতেছি না। হরিরামপুর উপজেলার বাল্লা গ্রামের শিব প্রসাদ হালদার পদ্মা নদীতে ২৫ বছর ধরে মাছ শিকার করেন। তিনি বলেন, ‘এ বছর মাছের আকাল। নদীতে গভীরতা নেই। কয়েকদিন আগেও দিনরাত নদীতে জাল ফেলে এক-দেড় কেজি ইলিশ পেয়েছি। তবে এখন বড় ইলিশ এখানে পাওয়া যায় না। এর মধ্যে শুরু হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এই সময়ে ঘরে বসে অলস সময় কাটাতে হবে।’ একই এলাকার জেলে কোরবান শেখ বলেন, ‘জেলে নিবন্ধন তালিকা থেকে আমার মতো প্রকৃত অনেক জেলে বাদ পড়েছেন। ফলে নিষেধাজ্ঞার সময় কষ্টে দিন কাটাতে হবে আমাদের। আগের মতো পদ্মায় মাছ পাওয়া যায় না জানিয়ে দৌলতদিয়া ৫ নম্বর ফেরিঘাটের মাছ ব্যবসায়ী মো. চান্দু মোল্লা বলেন, ‘আমরা জেলেদের ওপর নির্ভরশীল। তারা যদি মাছ না পায় তাহলে আমরা কীভাবে কিনবো, আর কীভাবে ব্যবসা করবো। তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হন, ঠিক তেমনি আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হই।’ নদীতে নাব্যতা সংকটের কথা উল্লেখ করে গোয়ালন্দ উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ শাহরিয়ার জামান বলেন, ‘এখন নদীতে স্রোত নেই। চর পড়ে ভরাট হয়ে গেছে অনেক স্থান। নাব্যতা না থাকায় মাছ কমে যাচ্ছে দিন দিন। এভাবে নদীতে চর পড়তে থাকলে ভবিষ্যতে ইলিশের দেখা মিলবে না। ইলিশ গভীর পানির মাছ। সব ধরনের মাছের চলাচলের জন্য নদীর গভীরতা প্রয়োজন।’ প্রকৃত জেলেদের নিবন্ধন তালিকা থেকে বাদ পড়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোনও জেলে তালিকা থেকে বাদ পড়লে নতুন করে আবেদন করলে তাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সেইসঙ্গে সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে।’ |