বনবিভাগ স্থানীয়দের ফাঁদের দায় নিতে নারাজ
|
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার সীমান্ত এলাকায় হাতির আক্রমণে একের পর এক প্রাণহানি, ঘরবাড়ি ধ্বংস, ফসলের ক্ষতিতে অতিষ্ঠ মানুষ। প্রাণ ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন অনেকে। হাতির আক্রমণ থেকে বাঁচতে টাকা তুলে সীমান্ত এলাকায় বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরি করেছেন স্থানীয়রা। তবে বন বিভাগের দাবি, স্থানীয়রা নির্দেশনা অমান্য করে বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে। এই ফাঁদে হাতির ক্ষতি, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। এমনটি হলে এর দায়ভার নেবে না বনবিভাগ। সম্প্রতি জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার গাজিরভিটা ইউনিয়নের সীমান্তের বারাকপাড়া এলাকায় হাতি তাড়ানোর জন্য বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরি করতে দেখা গেছে। এই বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরি করেছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা বলছেন, হাতির আক্রমণ থেকে বাঁচতে গ্রামবাসী নিজ নিজ এলাকায় টাকা তুলে সীমান্ত এলাকা থেকে আনুমানিক ৭০০ থেকে ৮০০ গজ দূরে দুই লাইন বিশিষ্ট জিআই চিকন তার দিয়ে বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরি করেছেন। তৈরি করা এই বৈদ্যুতিক ফাঁদে হাতির কোনো ক্ষতি হবে না বলে দাবি স্থানীয়দের। এসব ফাঁদ বারাকপাড়া, লামছাপাড়া, ডাকিয়াপাড়া, কান্দাপাড়া, গাবরাখালী, গলোইভাঙা, কড়ইতলীসহ জেলার হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার সীমান্ত এলাকায় তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় পাহাড় থেকে খাবারের সন্ধানে বন্য হাতির দল প্রায় প্রতিদিনই লোকালয়ে নেমে আসে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর হাতি অনেক বেশি ক্ষয়ক্ষতি করেছে। ধান, সবজি, কলাবাগান, ঘরবাড়ি এমনকি বেশ কয়েকজন মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। এসব ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচতে প্রশাসনের কোনো অগ্রগতি না দেখে গ্রামবাসী নিজেরা উদ্যোগী হয়ে টাকা তুলে দুই লাইন বিশিষ্ট জিআই তার দিয়ে বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরি করেছে। তারা জানান, কিলোমিটার প্রতি এই ফাঁদ তৈরিতে খরচ আনুমানিক ৫০ হাজার। এই ফাঁদে জেনারেটরের মাধ্যমে আর্থিং দেওয়া হয়। আর্থিং দেওয়ার কারণে জিআই তারে হাতি স্পর্শ করলে বৈদ্যুতিক শক লাগবে। এতে হাতি ভয় পেয়ে চলে যাবে। তাছাড়া এই জিআই তারে পলিথিন বেঁধে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে দূর থেকে দেখেই হাতি চলে যায়, আর কাছে আসে না। তবে ময়মনসিংহ বন বিভাগের গোপালপুর বিট (হালুয়াঘাট ও নালিতাবাড়ী বিটের অংশ) কর্মকর্তা মাজাহারুল হক বলেন, ওই এলাকায় সরকারিভাবে হাতি তাড়ানোর সৌরবিদ্যুতের ফাঁদ তৈরি করা হয়নি। স্থানীয়রা আমাদের নির্দেশনা অমান্য করে জিআই তার দিয়ে বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরি করেছেন। এই ফাঁদে হাতির ক্ষতি এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। এমনটি হলে দায় স্থানীয়দের নিতে হবে, বনবিভাগ এর দায়ভার নেবে না। তাছাড়া, এসব ফাঁদ অপসারণ করার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি। গাজীরভিটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মান্নান বলেন, শুনেছি সীমান্ত এলাকায় স্থানীয়রা হাতি তাড়াতে বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরি করেছে। তবে কে বা কারা করেছে, তা কেউ স্বীকার করে না। বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরি না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারপরও গ্রামবাসী কারো কথা শুনছে না। ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ.ন.ম আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, গোপালপুরে দুই কিলোমিটার সৌরবিদ্যুতের ফাঁদ নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ২৫ কিলোমিটার সৌরবিদ্যুতের ফাঁদ নির্মাণের পাশাপাশি সীমান্তে কাঁটাযুক্ত গাছ লাগানোর প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এসব বাস্তবায়িত হলেই বন্য হাতির আক্রমণ অনেকটা কমে আসবে। তবে সীমান্তে বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরির বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরি করা হয়ে থাকে তাহলে তা দ্রুত অপসারণের ব্যবস্থা করা হবে। |