সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশিদেরও ফেরত আনবে ভারত
প্রকাশ: সোমবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৩, ১১:০৬ অপরাহ্ণ

দেশের দুই সেনা জেনারেলের মধ্যে সংঘাতে এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত পূর্ব আফ্রিকার দেশ সুদান। সেখানে আটকে পড়া ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনতে দিল্লি ‘অপারেশন কাবেরী’ নামে যে বিশেষ ইভ্যাকুয়েশন অভিযান শুরু করেছে, তার আওতায় বাংলাদেশ, নেপাল বা শ্রীলঙ্কার নাগরিকরাও সুদান থেকে দেশে ফেরার সুযোগ পাবেন।

দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ আইএনএস সুমেধা খুব শিগগিরই পোর্ট সুদানে ভিড়তে চলেছে। এই জাহাজে করে অন্তত কয়েক হাজার ব্যক্তিকে সুদান থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। এছাড়া ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিশেষ বিমানও সুদানের উদ্দেশে রওনা হয়েছে, সেগুলোও একই কাজে ব্যবহার করা হবে।

তবে শুধু ভারতের নাগরিকরাই নন, বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা-নেপালের মতো বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশগুলোর নাগরিকদেরও এই অভিযানের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লি।

ভারতের শীর্ষস্তরের এক সরকারি কর্মকর্তার ভাষ্য— ‘এর আগেও আমরা যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেন থেকে ভারতীয়দের পাশাপাশি বাংলাদেশি ও নেপালি নাগরিকদের ফিরিয়ে এনেছি। ইউক্রেনে যখন গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হয়, তখন পার্শ্ববর্তী দেশ পোল্যান্ড বা হাঙ্গেরি হয়ে যাদেরকে বিশেষ বিমানে ভারতে নিয়ে আনা হয়েছিল, তাদের মধ্যেও অনেক বাংলাদেশি নাগরিক ছিলেন।’

এখন ভারতের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হলো ‘নেইবারহুড ফার্স্ট’– অর্থাৎ প্রতিবেশীরা সবার আগে। সেই নীতি অনুসরণ করেই সুদানেও বন্ধু প্রতিবেশী দেশগুলোর নাগরিকদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সুদানে বিভিন্ন শিল্প কারখানায়, অবকাঠামো প্রকল্পে, নির্মাণ ও আবাসন খাতে মোট প্রায় ৪ হাজার ভারতীয় নাগরিক কাজ করেন বলে ধারণা করা হয়। সে দেশে বাংলাদেশ ও নেপালেরও বেশ কয়েক হাজার নাগরিক আছেন।

সপ্তাহখানেক আগে সুদানে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই এদের অনেকেই নিজ নিজ দেশে ফেরার জন্য উতলা হয়ে উঠেছেন।

রাজধানী খার্তুমের বিমানবন্দরে যেহেতু এখন পুরোদস্তুর যুদ্ধ চলছে, তাই বিদেশি নাগরিকদের ইভ্যাকুয়েশনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে লোহিত সাগরের তীরবর্তী বন্দর শহর পোর্ট সুদানকে। সোমবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যার দিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, দেশে ফেরার লক্ষ্যে প্রায় শ’পাঁচেক ভারতীয় ইতোমধ্যেই পোর্ট সুদানে এসে পৌঁছেছেন। আরও অনেকেই এখনও রয়েছেন পোর্ট সুদানের পথে।

খার্তুম থেকে সড়কপথে পোর্ট সুদানের দূরত্ব প্রায় সাড়ে ৮০০ কিলোমিটার। এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে যারা জাহাজে সুদান ত্যাগ করতে চাইছেন, তাদের মধ্যে ভারতীয় ছাড়াও বহু বাংলাদেশি ও নেপালি নাগরিকও আছেন বলে ভারতীয় দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, গত শনিবার (২২ এপ্রিল) সৌদি আরব বিভিন্ন দেশের প্রায় শ’দেড়েক লোককে সুদান থেকে উদ্ধার করে নিরাপদে ফিরিয়ে এনেছে। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যাদের উদ্ধার করা হয়েছে, তার মধ্যে ৯১ জন তাদের দেশের এবং ৬৬ জন অন্যান্য ‘ভ্রাতৃপ্রতিম ও বন্ধুপ্রতিম’ দেশের নাগরিকরা আছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদান থেকে এটাই ছিল প্রথম ‘বেসামরিক ইভ্যাকুয়েশন’।

এই ৬৬ জনের মধ্যে তিন জন ভারতীয় যেমন আছেন, তেমনই বাংলাদেশ, পাকিস্তান, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, তিউনিসিয়া, বুলগেরিয়া, ফিলিপাইন, কানাডা ও বুরকিনা ফ্যাসোর নাগরিকরাও আছেন বলে জানানো হয়েছে। সুদান থেকে এই বিদেশিদের নিয়ে সৌদি একটি জাহাজ শনিবার জেদ্দা বন্দরে এসে ভিড়ে।

এর আগে গত মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সুদান থেকে ভারতীয়দের ফেরানোর ব্যাপারে তার সৌদি কাউন্টারপার্ট ফয়সল বিন পারহান আল সৌদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন।

আর সোমবার (২৪ এপ্রিল) তিনি নিজেই ‘অপারেশন কাবেরী’ নামে ভারতীয় অভিযান শুরু করার কথা ঘোষণা করেছেন, যার আওতায় ভারতীয়দের পাশাপাশি বন্ধু দেশের নাগরিকদেরও সুদান থেকে ফিরিয়ে আনবে দিল্লি।







সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ