বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে নতুন মজুরি গ্রহণ সম্ভব নয়’
|
সরকার ঘোষিত সর্বনিম্ন মজুরি প্রত্যাখ্যান করেছে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র। তারা এ মজুরি পুনর্বিবেচনা করে ন্যূনতম ২৫ হাজার টাকা মজুরি করার দাবি জানায়। একই সঙ্গে পোশাকশ্রমিক নিহতের ঘটনায় বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানায় সংগঠনটি। তারা বলছে, বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে নতুন মজুরি শ্রমিকদের পক্ষে গ্রহণ সম্ভব নয়। শুক্রবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর পুরানা পল্টনে মণি সিংহ সড়কে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানানো হয়। এতে গাজীপুর, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন শিল্প এলাকার শ্রমিকরা অংশগ্রহণ করেন। গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাজাহানের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান শামীম, সহ-সভাপতি জলি তালুকদার, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর মঈন, কেন্দ্রীয় নেতা দুলাল সাহা, আজিজুল ইসলাম প্রমুখ। সমাবেশে শ্রমিক নেতারা বলেন, বেসিক ৬৫ শতাংশ, ইনক্রিমেন্ট ১০ শতাংশ, ১ ও ২ নম্বর গ্রেড বহাল, হেলপার এবং অপারেটরের বেতনের যৌক্তিক পার্থক্য নিশ্চিত করা না হলে শ্রমিক বিক্ষোভ শান্ত হবে না। একই সঙ্গে মালিকদের চক্রান্তমূলক ১৩ (১) ধারা প্রয়োগ বন্ধ করে উৎপাদন চালু করতে হবে। শ্রমিকনেতা মন্টু ঘোষ বলেন, নিরস্ত্র শ্রমিকদের ওপরে গুলি চালিয়ে, তাদের হত্যা করে সরকার যে সহিংসতা চালাচ্ছে তা নিন্দার অযোগ্য। শ্রমিকরা ন্যায্য দাবি করেছেন। আলোচনার পথে তা সমাধান না করে বরং রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগ সরকারের গণবিরোধী চরিত্রকে উন্মোচন করেছে। মালিকপক্ষ নানা কূটকৌশলের মাধ্যমে শ্রমিকদের বাঁচার মতো মজুরি বঞ্চিত করতে চাচ্ছে। সরকার মালিকদের আজ্ঞাবহ লাঠিয়াল হিসেবে শ্রমিক বিক্ষোভ দমনের নামে হত্যাকাণ্ডসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অবিলম্বে শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে ঘোষিত মজুরি পুনর্বিবেচনা করে সংকটের সুরাহা করতে হবে। সমাবেশে শ্রমিকনেতা সাদেকুর রহমান শামীম বলেন, বাজার পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে শ্রমিকের পক্ষে নতুন মজুরি কাঠামো গ্রহণ করা সম্ভব নয়। সরকার যদি জোর করে অগ্রহণযোগ্য মজুরি কাঠামো চাপিয়ে দেয়, আন্দোলনের পথেই শ্রমিকরা তার উপযুক্ত জবাব দেবেন। তিনি বলেন, সহিংসতা বন্ধ করে শ্রমিকদের দাবি মেনে না নেওয়া হলে ২০০৩, ২০০৬, ২০১০ সালের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঠেকানো যাবে না। সব ধরনের ক্ষয়ক্ষতির দায়ও নিতে হবে সরকারকে। সমাবেশে শ্রমিকনেতা জলি তালুকদার বলেন, সরকার লাখ কোটি টাকা ঋণ করে যে উন্নয়নের বড়াই করছে, তার নেপথ্যে প্রধান অবদান এদেশের পোশাকশ্রমিকের। অথচ তারাই আজ সবচেয়ে বেশি অবহেলিত ও শোষিত। পোশাকশ্রমিকরা রপ্তানি আয়ের যোগান দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার সীমাহীন লুটপাট ও অর্থপাচারের মধ্যদিয়ে রিজার্ভ শূন্য করে ফেলেছে। এখন শ্রমিকের শক্তি ক্ষয় করে দেশের অর্থনীতি সচল রাখার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীনরা অর্থনীতিকে ধ্বংস করে চলেছে। বাঁচার মতো মজুরি দাবি করায় শ্রমিকদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করছে। সমাবেশ থেকে ১২ নভেম্বর শ্রম মন্ত্রণালয়ে ঘোষিত মজুরি কাঠামোর বিষয়ে শ্রম আইন অনুসারে আপত্তি প্রদান ও মজুরি পুনর্বিবেচনার দাবি পেশ করার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এছাড়া সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল পুরানা পল্টন মোড় থেকে নূর হোসেন চত্বর ঘুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে গিয়ে শেষ হয়। |