বাড়বে সংসার খরচ, আরও চাপে পড়বে স্বল্প আয়ের মানুষ
|
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশচুম্বী দামে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে পরিবারের খরচ মেটাতে স্বল্প আয়ের মানুষেরা এখন চোখে অন্ধকার দেখছে। এরই মধ্যে ‘উন্নয়ন অগ্রযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শিরোনামে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট নিয়ে আসছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরের বাজেটে ব্যয়ের অঙ্ক যেমন বড়, তেমনই আয়ের লক্ষ্যমাত্রাও বৃহৎ। যেখানে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ লাখ কোটি টাকা ধরার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিশাল অঙ্কের এ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ককর বা ভ্যাট বাড়ানোর পরিকল্পনা নিচ্ছে সরকার। এতে লেখার কলম থেকে শুরু করে ফেসিয়াল টিস্যু, টয়লেট টিস্যু, সিমেন্ট, কাজু বাদাম, বাসমতি চাল, চশমা, মাইক্রোওয়েব ওভেন, এলপি গ্যাস সিলিন্ডার, প্লাস্টিকের পাত্র, অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র, সিগারেট, জর্দা-গুল, খেজুর, বিদেশি টাইলস ও মোবাইল ফোনসহ বেশকিছু নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম আগামী দিনে আরও বাড়তে পারে। আসছে বাজেটে নিত্যপণ্যে শুল্ককর বা ভ্যাট বাড়লে তা নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জন্য হবে ‘বোঝার ওপর শাকের আঁটি’র মতো। তাদের তখন সংসার চালাতে খরচের বোঝা আরও বেড়ে যাবে। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বে সীমিত আয়ের মানুষেরা। শুধু নিত্যপণ্যই নয়, আগামীতে সংসার খরচের পাশাপাশি বাড়বে ভ্রমণ খরচও। কারণ, নতুন অর্থবছরের বাজেটে বিমানের টিকিটের ওপর ভ্রমণ কর বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আবার অধিক সংখ্যক মানুষকে করজালের আওতায় আনতে এবার শূন্য আয় (করযোগ্য সীমার নিচে বার্ষিক আয়) দেখিয়ে রিটার্ন জমার স্লিপ (প্রাপ্তি স্বীকারপত্র) নিতে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর আরোপের পরিকল্পনা নিচ্ছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১ জুন নতুন অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার যে বাজেট দেবেন অর্থমন্ত্রী, সেখানে ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। এ ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আর সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ২৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৫১ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১ লাখ ১০ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ হিসেবে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে। নতুন বছরের বাজেটে পাঁচ লাখ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে গিয়ে বেশকিছু নিত্যপণ্যের ওপর শুল্ককর বা ভ্যাট বাড়ানোর পথে হাঁটছে সরকার। যেমন- নতুন অর্থবছরে বাসমতি চাল আমদানিতে ভ্যাট বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়ছে। ফলে বিরিয়ানি-তেহারির অন্যতম প্রধান উপকরণ এ চালের দাম আরও বাড়তে পারে। এতে যারা শখ করে উৎসব-পার্বণে বিরিয়ানি বা তেহারি খেতে পছন্দ করেন, খরচ বাবদ তাদের গুনতে হবে বাড়তি টাকা। বাড়তি অর্থ গুনতে হবে প্লাস্টিকের তৈরি সব ধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালি সামগ্রীতেও। কারণ এসব পণ্যের উৎপাদনে ভ্যাট বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এসব পণ্যের উৎপাদনে ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে। একই হারে ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি গৃহস্থালি সামগ্রী ও তৈজসপত্রের (হাড়ি-পাতিল, থালা-বাসন) ক্ষেত্রেও। বর্তমানে কিচেন টাওয়াল, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন টিস্যু, ফেসিয়াল টিস্যু/পকেট টিস্যু ও পেপার টাওয়াল উৎপাদনে ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে, এটি বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ফলে আগামীতে এসব পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে। সরকারের আয় বাড়াতে অর্থমন্ত্রীর নজর থেকে বাদ যাচ্ছে না কাজু বাদাম ও খেজুর। নতুন অর্থবছরের বাজেটে তাজা ও শুকনা খেজুর আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়ছে। দেশে বাদাম চাষকে উৎসাহিত করতে কাজু বাদাম আমদানিতে শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৩ শতাংশ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফল ও বাদামের আমদানি শুল্কও বাড়ানো হতে পারে। শুল্ক ফাঁকি রোধে নতুন অর্থবছরের বাজেটে সব ধরনের ওভেন আমদানির শুল্ক ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে মোট করভার ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে বিদেশি ওভেনের দাম বাড়তে পারে। অবশ্য দেশে ওভেন উৎপাদনের ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা দেওয়া আছে। ফলে বিদেশি ওভেনের দাম বাড়লেও দেশি ওভেনের দাম না-ও বাড়তে পারে। বর্তমানে সারাদেশে রান্নার কাজে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যাপক হারে ব্যবহার হয়। আগামী অর্থবছরের বাজেটে সিলিন্ডার উৎপাদনে ব্যবহৃত স্টিল ও ওয়েল্ডিং ওয়্যার আমদানিতে শুল্ক আরোপ এবং উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ফলে আগামীতে রান্নার চুলার জন্যও গুনতে হবে বাড়তি টাকা। ধূমপায়ীদের জন্যও এবারের বাজেটে দুঃসংবাদ থাকছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়তে পারে। নিম্নস্তরের এক প্যাকেট (২০ শলাকার) সিগারেটের (হলিউড, ডার্বি) দাম ৯০ টাকা, মধ্যমস্তরের (স্টার, নেভি) সিগারেটের দাম ১৩৪ টাকা, উচ্চস্তরের (গোল্ডলিফ) সিগারেটের দাম ২২৬ টাকা এবং অতিউচ্চ স্তরের (বেনসন, মালবোরো) সিগারেটের দাম ৩০০ টাকা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জর্দা-গুলের দামও বাড়ানো হতে পারে। তবে বিড়ির দাম অপরিবর্তিত থাকবে। এবার আইএমএফের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) পরামর্শে মোবাইল ফোনকে বিলাসী পণ্য বিবেচনায় নিয়ে বাজেটে ভ্যাট আরোপের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে মোবাইল ফোন উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি আছে, সেখানে ২ শতাংশ ভ্যাট বসানো হচ্ছে। আর সংযোজন পর্যায়ে ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। এ কারণে খুচরা পর্যায়ে মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে পারে। লেখার প্রধান উপকরণ কলমের দামও নতুন অর্থবছরে বাড়তে পারে। কলম উৎপাদনে বর্তমানে ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে, সেখানে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে কলমের দাম বাড়তে পারে। চশমার ফ্রেম ও সানগ্লাস আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ এবং উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ফলে সামনে এসব পণ্যের দামও বাড়তে পারে। নতুন অর্থবছরে সাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সিরিশ কাগজ আমদানিতেও শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। ভাঙা জিনিস জোড়া দেওয়ার আঠা বা সুপার গ্লু সংরক্ষণমূলক শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। বাড়ি নির্মাণের প্রধান উপকরণ সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানিতে বর্তমানে টনপ্রতি ৫০০ টাকা শুল্ক রয়েছে, নতুন অর্থবছরে এটি বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হচ্ছে। এ কারণে সিমেন্টের দাম বাড়তে পারে। বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত বিদেশি টাইলস আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। ফলে বিদেশি টাইলসের দামও বাড়তে পারে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে একাধিক গাড়ি রেজিস্ট্রেশন বা ফিটনেস নবায়নে ‘কার্বন সারচার্জ’ আরোপের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ১৫০০ সিসি বা ৭৫ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন গাড়ির জন্য ২৫ হাজার টাকা, ১৫০০ সিসি (৭৫ কিলোওয়াট) থেকে ২০০০ সিসির (১০০ কিলোওয়াট) গাড়ির জন্য ৫০ হাজার টাকা, ২০০০ সিসি (১০০ কিলোওয়াট) থেকে ২৫০০ সিসির (১২৫ কিলোওয়াট) গাড়ির জন্য ৭৫ হাজার টাকা, ২৫০০ সিসি (১২৫ কিলোওয়াট) থেকে ৩০০০ সিসির (১৫০ কিলোওয়াট) গাড়ির জন্য এক লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৩০০০ সিসি (১৫০ কিলোওয়াট) থেকে ৩৫০০ সিসির (১৭৫ কিলোওয়াট) গাড়ির জন্য দুই লাখ টাকা এবং ৩৫০০ সিসির (১৭৫ কিলোওয়াট) বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন গাড়ির জন্য সাড়ে তিন লাখ টাকা কার্বন সারচার্জ আরোপের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে একাধিক গাড়ি রেজিস্ট্রেশন বা ফিটনেস নবায়নে দ্বিতীয় গাড়ির ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ বাড়তি অগ্রিম আয়কর দিতে হয়। আগামীতে এর সঙ্গে কার্বন সারচার্জ যুক্ত হলে একাধিক গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়বে। বর্তমানে বিমানে দেশের অভ্যন্তরে কোনো ভ্রমণ কর দিতে হয় না। তবে স্থলপথে বিদেশ যেতে ৫০০ টাকা ও নৌপথে ৮০০ টাকা কর দিতে হয়। নতুন অর্থবছরের বাজেটে এটি বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আকাশপথে সার্কভুক্ত দেশ ভ্রমণে এক হাজার ২০০ টাকা কর দিতে হয়, আগামী বাজটে এটি বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা করা হতে পারে। এছাড়া অন্য দেশ ভ্রমণে তিন হাজার টাকা কর দিতে হয়, সেটি বাড়িয়ে চার হাজার টাকা করতে পারে সরকার। আকাশপথে উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, চীন, জাপান, হংকং, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া ও তাইওয়ান ভ্রমণে যাত্রীপ্রতি ৬ হাজার টাকা কর আরোপের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এসব দেশে ভ্রমণে বর্তমানে চার হাজার টাকা ভ্রমণ কর দিতে হয়। এদিকে ৫ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য নির্ধারিত হারের অর্ধেক ভ্রমণ কর দিতে হয়। আগামীতে পাঁচ বছরের কম বয়সী যাত্রী, ক্যানসার আক্রান্ত রোগী, অন্ধ ব্যক্তি, বাংলাদেশি ও বিদেশি কূটনীতিক, তাদের পরিবার, বিমান ক্রু, বিমানকর্মী, হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের ভ্রমণ কর দিতে হবে না। তবে বর্তমানে আকাশপথে দেশের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতে ভ্রমণ কর দিতে হয় না। এক্ষেত্রে আগামীতে ২০০ টাকা দিতে হতে পারে। শূন্য আয় (করযোগ্য সীমার নিচে বার্ষিক আয়) দেখিয়ে বিনা পয়সায় আগামীতে রিটার্ন জমা স্লিপ (প্রাপ্তি স্বীকারপত্র) পাওয়া যাবে না। করযোগ্য আয় না থাকলেও আগামীতে রিটার্ন জমা স্লিপ নিতে দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে। আর রিটার্ন জমার স্লিপ না নিলে সরকারি-বেসরকারি ৪৪ ধরনের সেবা পাওয়া যাবে না। এরমধ্যে রয়েছে- ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ, সঞ্চয়পত্র কেনা, ব্যাংক ঋণ, গাড়ির ফিটনেস নবায়ন ও বাড়ির নকশা অনুমোদনের মতো সেবা। আগামী অর্থবছরে অর্থমন্ত্রী দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষকে করজালে আটকালেও আয়করের ক্ষেত্রে কিছুটা সুখবর দিতে পারেন। নতুন অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করা হতে পারে। একই সঙ্গে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থিত করদাতার ন্যূনতম কর পাঁচ হাজার টাকা করা হতে পারে। অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকার করদাতাদের চার হাজার টাকা এবং সিটি করপোরেশনের বাইরে অন্য এলাকার করদাতাদের ন্যূনতম তিন হাজার টাকা কর নির্ধারণ করা হতে পারে। আগামীতে ব্যাংকে বেশি টাকা জমালে বেশি কর ছাড় পাওয়া যেতে পারে। কারণ, নতুন বাজেটে ব্যাংক ডিপিএসে (ডিপোজিট পেনশন স্কিম) কর রেয়াতের সীমা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে মাসিক ৫ হাজার টাকা বা ৬০ হাজার টাকার ডিপিএসে কর রেয়াত সুবিধা দেওয়া হয়। আগামীতে এটি বাড়িয়ে মাসিক ১০ হাজার টাকা বা এক লাখ ২০ হাজার করা হতে পারে। বর্তমানে শেয়ারবাবাজারে সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করলে কর রেয়াত পাওয়া যায়। তবে আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ সুবিধা তুলে দেওয়া হতে পারে। অবশ্য প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুযায়ী কর রেয়াত সুবিধা বহাল থাকবে। বর্তমানে আট হাজার বর্গফুটের বেশি আয়তনের গৃহসম্পত্তি, একাধিক গাড়ি বা তিন কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলে সারচার্জ অর্থাৎ সম্পদ কর দিতে হয়। নতুন অর্থবছরের বাজেটে এটি বাড়িয়ে চার কোটি টাকা করা হতে পারে। ফলে সম্পদশালীদের করের বোঝা কিছুটা হলেও কমবে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে অপ্রত্যাশিত বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা মোকাবিলায় তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও এ অর্থ ব্যয়ের কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। ফলে অর্থ ছাড় করতে জটিলতা তৈরি হয়। তাই প্রথমবারের মতো আর্থিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য আগামী বাজেটে পৃথক বরাদ্দ রাখা হতে পারে। এক্ষেত্রে চার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গবেষণা, উদ্ভাবন ও উন্নয়ন বাবদ ১০০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ বরাদ্দ বাড়িয়ে ১ লাখ ২৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা করা হতে পারে। একই সঙ্গে কর্মসূচির আওতায় সুবিধাপ্রাপ্তদের ভাতার পরিমাণ কিছুটা বাড়বে। বর্তমানে ৫৭ লাখ ১ হাজার নারী-পুরুষ বয়স্ক ভাতা পান। নতুন অর্থবছরের বাজেটে এ সংখ্যা বাড়িয়ে ৫৮ লাখ করা হতে পারে। একই সঙ্গে বাড়ানো হতে পারে ভাতার পরিমাণও। বর্তমানে ৫০০ টাকা ভাতা দেওয়া হয়, এটি বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হতে পারে। এছাড়া যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ও চিকিৎসা ভাতা, শহীদ পরিবারের ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, হিজড়া ও বেদেসহ অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য ভাতা, মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি এবং প্রতিবন্ধী ভাতা দিচ্ছেন সরকার। আগামীতে এসব ভাতা অব্যাহত থাকবে এবং ভাতার পরিমাণও বাড়তে পারে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে সার, বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে ভর্তুকি বাবদ বাড়তি বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ খাতে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা রাখা হয়েছিল। পরবর্তীকালে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা করা হয়। নতুন অর্থবছরের বাজেটে এসব খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। এরমধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ১৭ হাজার কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ বাড়িয়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। |