বৃহস্পতিবার ০৮ জুন ২০২৩ ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিলুপ্তির হুমকিতে সাড়ে ৫ হাজারেরও বেশি প্রাণী
প্রকাশ: শনিবার, ২৭ মে ২০২৩, ০৪:২১ অপরাহ্ণ

প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশের ক্ল্যারিয়ন ক্লিপারটোন জোন (সিসিজেড) এলাকায় সম্প্রতি ৫ হাজারেরও বেশি প্রজাতির প্রাণীর সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে এসব প্রাণী আর কতদিন এ পৃথিবীতে টিকে থাকবে সেই প্রশ্ন ইতোমধ্যে ওঠা শুরু হয়েছে জোরেশোরে।

কারণ যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ থেকে মেক্সিকো পর্যন্ত বিস্তৃত ৬০ লাখ বর্গ কিলোমটার বিস্তৃতির এই অঞ্চলটিতে আর সামনের বছর থেকেই শুরু হতে যাচ্ছে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের তৎপরতা; আর তা শুরু হলে স্বাভাবিকভাবেই অস্তিত্বের হুমকিতে পড়বে এসব প্রজাতি।

যুক্তরাজ্যের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম লন্ডনের গভীর সমুদ্রের বাস্তুসংস্থান বিশেষজ্ঞ ম্যুরিয়েল র‌্যাবোনের নেতৃত্বে একটি দল সম্প্রতি এ সম্পর্কিত একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রস্তুত করেছেন। জীববিজ্ঞান সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সাময়িকী কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে সেই গবেষণাপ্রবন্ধ প্রকাশিতও হয়েছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমকে ম্যুরিয়েল র‌্যাবোন জানান, গত কয়েক বছরে সিসিজেডে ৫ হাজার ৫৭৮ প্রজাতির প্রাণী শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা যেগুলোর ৯২ শতাংশই নতুন আবিষ্কৃত। এমনকি অনেক প্রজাতির নামকরণও এখনও করা হয়নি।

‘এখন পর্যন্ত এই প্রজাতিগুলোর মধ্যে মাত্র ৪৩৮টির নামকরণ হয়েছে। বাকি ৫ হাজার ১৪২টি প্রানীর বৈজ্ঞানিক নাম এখনও দেওয়া হয়নি। বিজ্ঞানীরা এসব প্রজাতিকে ইনফর্মাল বিভিন্ন নামে অভিহিত করে থাকেন,’ আলজাজিরাকে বলছিলেন র‌্যাবোন।

‘এমনকি নতুন এই প্রজাতির অনেকগুলোর পূর্ণাঙ্গ বিবরণও এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এসব প্রজাতি কোন বর্গের— তা আমরা বলতে পারব কিন্তু প্রজাতিগুলোর বিস্তারিত বৈজ্ঞানিক বিবরণ এখনও আমাদের অজানা।’

সিসিজেড অঞ্চলে নতুন যেসব প্রাণী পাওয়া গেছে— সেগুলোর অধিকাংশই অর্থোপোডা বা সন্ধীপদী বর্গের প্রাণী। এই বর্গের যেসব প্রাণী আমাদের চারপাশে দেখা যায়, সেসব হলো কাঁকড়া, কাঁকড়াবিছা, চিংড়ি, প্রজাপতি, শতপদী ইত্যাদি। সিসিজেডে যেসব নতুন প্রজাতির সন্ধান মিলেছে, সেগুলোও কোনো না কোনো প্রকারের কাঁকড়া, চিংড়ি বা এই জাতীয় প্রাণী, তবে সমুদ্রের একেবারে গভীর তলদেশে সেগুলোর বাস বলে এতদিন পর্যন্ত এসব প্রজাতি সম্পর্কে জানত না মানুষ।

সমুদ্রের তলদেশ গবেষণা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল সি বেড অথরিটির উদ্যোগে এক দশক আগে ট্যাক্সোনমিক পদ্ধতিতে জরিপ চালানোর সময় প্রথম এসব প্রাণীর সম্পর্কে জানতে পারে মানুষ।

অধিকাংশ প্রজাতিই বসবাস করে সমুদ্রের তলদেশে, যেখানে সূর্যের আলোও ঠিকমতো পৌঁছাতে পারে না। প্রসঙ্গত, সমুদ্রের ২০০ ফুট গভীর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে সূর্যালোক।

আলজাজিরাকে ম্যুরিয়েল র‌্যাবোন বলেন, বিশ্বের আর কোনো সমুদ্রের কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় এত সংখ্যক প্রজাতির বসবাসের তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।

খনিজ সম্পদের ভাণ্ডার: হাজার হাজার প্রজাতির প্রাণীর মতো খনিজ সম্পদেরও এক বিশাল ভাণ্ডার প্রশান্ত মহাসাগরের ক্ল্যারিয়ন ক্লিপারটোন জোন। গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে— নিকেল, ম্যাঙ্গানিজ, তামা, দস্তা ও কোবাল্টসহ বিভিন্ন খনিজের সমৃদ্ধ মজুত রয়েছে সিসিজেডের তলদেশের গভীরে।

চলতি জুলাই মাস থেকেই ক্ল্যারিয়ন ক্লিপারটোন জোনে খননকাজ চালাতে ইচ্ছুক কোম্পানিগুলোর আবেদনপত্র গ্রহণ করা শুরু করবে ইন্টারন্যাশনাল সি বেড অথরিটি। তার পর সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে খনন কাজ।

ক্ল্যারিয়ন ক্লিপারটন জোনে খননকাজ চালাতে ইচ্ছুক কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান দ্য মেটাল কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহী গেরার্ড ব্যারনও স্বীকার করেছেন, বাস্তুসংস্থানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সিসিজেডে খননকাজ চালানো উচিত বলে মনে করে তার প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য কোম্পানিরও এ বিষয়টিতে সচেতন থাকা প্রয়োজন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসিকে গেরার্ড ব্যারন বলেন, ‘সমুদ্রের তলদেশে খননকাজ চালানো হলো স্বাভাবিকভাবেই সেখানকার বাস্তুসংস্থানের ওপর প্রভাব পড়বে— এটা এড়ানোর কোনো উপায় নেই।’

‘কিন্তু প্রশ্ন হলো, সেই প্রভাবের মাত্রা কতখানি হবে। আমাদের নিশ্চয়ই এমনভাবে খননকাজ চালানো উচিত হবে না যা প্রজাতিগুলোর অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়। যে পদ্ধতিতে খনন করলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সর্বনিম্নে রাখা যায়, সেই পদ্ধতিই অনুসরণ করতে হবে আমাদের।

 

Please follow and like us:







সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ