বিশ্ববাজারে গুঁড়া দুধের দাম কমেছে, বেড়েছে দেশে
|
বিশ্ববাজারে গত সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত গুঁড়া দুধের দাম প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে। কিন্তু এই এক বছরে দেশের বাজারে দাম কমার বদলে বেড়েছে কয়েক দফায়। ফলে ঠকছেন ক্রেতারা। দাম বাড়ার খড়গ তাদের ওপর নামলেও দাম কমার কোনো সুফল তারা পাচ্ছেন না। বাজারের তথ্য বলছে, চলতি বছরে বাজারে কয়েক দফা গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে। সে সময় ‘বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধি’র কথা বলে প্রতিটি কোম্পানি কেজিতে দাম বাড়ায় ৪০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। তাতে এখন মানভেদে গুঁড়া দুধের দাম দাঁড়িয়েছে প্রতি কেজি ৭২০ থেকে ৯৫০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে, বিশ্বব্যাপী দুধের দাম নিয়ে কাজ করে গ্লোবাল ডেইরি ট্রেড। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিশ্ববাজারে এক টন গুঁড়া দুধের দাম ছিল ৩ হাজার ৬১০ ডলার। এরপর থেকে বিশ্ববাজারে গুঁড়া দুধের দাম কয়েক দফায় কমেছে। কমতে কমতে চলতি আগস্টের ১৫ তারিখে প্রতি টন গুঁড়া দুধের দাম নেমে এসেছে ২ হাজার ৫৪৮ ডলারে। অর্থাৎ এক বছরে বিশ্ববাজারে দাম কমেছে ২৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। অন্যদিকে একই সময়ে বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি গুঁড়া দুধের দাম ৩ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানিয়েছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সংস্থাটির তথ্য বলছে, বিদেশি দুই কোম্পানি ডানো ও ডিপ্লোমা গত এক বছরে যথাক্রমে ৩ দশমিক ১৪ এবং ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ দাম বাড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি বাড়িয়েছে দেশি ব্র্যান্ড ফ্রেশ ও মার্কস। এ দুই ব্র্যান্ডের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ১৭ দশমিক ২৭ ও ১৪ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে এখন প্রতি কেজি ডানো ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধের খুচরা দাম ৮২০ থেকে ৯৫০ টাকা, ডিপ্লোমা ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধ ৮৪০ থেকে ৮৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ড্যানিশ, অ্যাংকর মিল্ক, ফ্রেশ, মার্কস, আড়ংসহ অন্যান্য ব্র্যান্ডের দুধ ৮৪০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশের বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুধের মূল্যবৃদ্ধির কারণ বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া এবং ডলারের মূল্যবৃদ্ধি। মূলত ২০২১ সালের শুরু থেকে দেশে ডলারের দাম সমন্বয়ে গুঁড়া দুধের দাম বাড়ছে। তিন বছর আগে যেখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের এক কেজি দুধের দাম ৬০০ টাকার নিচে ছিল, তা এখন ৮০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে । দেশে গুঁড়া দুধের দাম বিশ্ববাজারের উল্টোপথে থাকার কারণ জানতে চাইলে দুধ বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো প্রথমেই দায় চাপাচ্ছে ডলারের অস্বাভাবিক দামের ওপর। পাশাপাশি সরবরাহ সংকট, প্রক্রিয়াজাত খরচ বৃদ্ধি, প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়ালের সংকট, পণ্য বিক্রি কমে যাওয়া, পরিবহন খরচ বৃদ্ধিসহ অন্যান্য খরচ বাড়ার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে পারটেক্স স্টার গ্রুপের ড্যানিশ ব্র্যান্ডের হেড অব বিজনেস সাঈদুল আজহার সরওয়ার বলেন, দেশে দাম না কমার মূল কারণ ডলারের দাম। যে পণ্যগুলো আগে ৯৫-৯৬ টাকায় কেনা যেত, সেটি এখন ১১২-১১৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। প্রতি ডলারে খরচ বেড়ে যাচ্ছে ২০ টাকার মতো। এতে প্রতি কেজি দুধের দামে বড় ইমপ্যাক্ট পড়ছে। তিনি বলেন, এছাড়া এলসি খোলায় বিলম্ব হচ্ছে। এলসি নিষ্পত্তিতে বাড়তি খরচ দিতে হচ্ছে। সে লোকসান বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানকে গুণতে হচ্ছে। আবার এখনো যোগানের সংকট রয়েছে। বড় চালান খোলার সুযোগ এখনো হচ্ছে না। সাঈদুল আজহার সরওয়ার বলেন, অন্যদিকে সব নিত্যপণ্যের দাম ও জীবনযাত্রার খরচ বাড়ায় দুধের বিক্রি কমেছে। অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক কারণে ব্যবসায় অস্থিরতা রয়েছে। এরমধ্যে বেড়েছে পরিবরহন, প্রক্রিয়াকরণ ও প্যাকেটজাতকরণের খরচ। সবকিছু মিলে দুধের দাম বেড়ে রয়েছে। তবে তিনি এ-ও বলেন, তারপরও আমরা দুধের দাম কমিয়ে সমন্বয়ের কথা চিন্তা করছি। ভোক্তাকে যদি আমরা পণ্য পৌঁছাতে না পারি তবে টিকে থাকতে পারবো না। তাই যতটুকু লাভ না করলেই নয়, সেভাবে সমন্বয়ের চিন্তা করছি। এদিকে নিত্যপণ্যের চড়া দামের মধ্যে দুধের এমন অনৈতিক মূল্যবৃদ্ধি মধ্যবিত্ত পরিবারের উপর চাপ বাড়িয়েছে। কোম্পানিগুলো যেমন বলছে তাদের বিক্রি কমেছে, তেমন ক্রেতা-বিক্রেতারাও দুধের ব্যবহার কমার তথ্য দিয়েছেন। খিলগাঁও বাজারে এসএম এন্টারপ্রাইজ নামের দোকানের স্বত্বাধিকারী ফরিদ হোসেন বলেন, এখন দামের কারণে দুধের বিক্রি কম। আগে যারা প্রতি মাসে এক কেজি গুঁড়া দুধ নিত, এখন হয়তো হাফ কেজি নেয়। কেউ কেউ কেনাই বাদ দিয়েছে। ওই বাজারে গুঁড়া দুধ কেনার সময় আল আমিন নামের এক ব্যক্তি বলেন, নানা ধরনের পায়েশ ফিরনির মতো মিষ্টান্ন আগে বাসায় প্রতিদিন বিকেলে হতো। সেজন্য গুঁড়া দুধ একসময় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ছিল। এখন শুধু বিশেষ কোনো পদ রান্না হলে দুধ কেনা হয়।
|