রুট বদলের নতুন কৌশলে মাদক কারবারিরা
|
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অতুনধিদফতর কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়াতে মাদক ব্যবসায়ীরা বারবার কৌশল পরিবর্তন করছে। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা ঢুকছে ভারত হয়ে। আর হেরোইন ঢুকছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে। মাদকবিরোধী অভিযান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ অংশে ঢোকার পর মাদক বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেটকার ব্যবহার করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দিচ্ছে কারবারিরা। সড়ক, রেল ও নৌপথে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে মাদক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদক ব্যবসার পেছনে জড়িতদের চিন্তিত করে আইনের আওতায় আনলেই শুধু হবে না, এ বিষয়ে থাকতে হবে জিরো টলারেন্স। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের গোয়েন্দারা বলছেন, মিয়ানমার থেকে ভারতের মিজোরাম-আসাম ও পরে ত্রিপুরা হয়ে সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে দেশে ঢুকছে ইয়াবা। এছাড়া মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা মণিপুরে আসার পর সেখান থেকে ত্রিপুরা হয়ে বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনাতলা মসজিদ স্থলবন্দর ব্যবহার করে ভারত থেকে আনা হচ্ছে হেরোইন। রাজশাহী সীমান্তের গোদাগারী, সিলেট সীমান্ত এবং যশোর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে ঢুকছে মাদক। রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল হয়ে রাজধানীতে পৌঁছে যাচ্ছে এসব মাদক। সীমান্ত দিয়ে হেরোইন ঢোকার পর পণ্যবাহী ট্রাকে করে পৌঁছে যাচ্ছে ঢাকায়। ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। রাজধানীতে এজেন্ট নিয়োগ করে চলছে খুচরা বিক্রি। এছাড়া ঢাকার আশপাশে নারায়ণগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর এসব এলাকায়ও রয়েছে এজেন্ট। চোরাচালান রুটে পরিবর্তন এনেছে মাদক চোরাকারবারিরা। কর্মকর্তারা আরও জানান, কক্সবাজার ও টেকনাফ হয়ে মিয়ানমার দিয়ে পুরনো রুটেও ঢুকছে ইয়াবা ও আইসসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক। রোহিঙ্গাদের অবাধ যাতায়াতের কারণে তারা সঙ্গে করে নিয়ে আসছে এসব মাদক। পরবর্তীতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো থেকে বিভিন্ন জায়গায় তা ছড়িয়ে পড়ছে। মাদকের টাকা হুন্ডির মাধ্যমে মিয়ানমারে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় যে বিষয়, বাংলাদেশে যারা এ ধরনের মাদক ব্যবসায় জড়িত তাদের প্রলুব্ধ করতে মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীরা অগ্রিম মাদক দিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশের মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক বিক্রি করে পরে টাকা পরিশোধ করছে তাদের। এছাড়া কোনও মাদকের চালান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হলে সেই চালানের টাকা নেয় না মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা কাটআউট পদ্ধতিতে কাজ করে থাকে। কে কার কাছে মাদক পৌঁছে দিচ্ছে এসব বিষয়ে পূর্ব কোনও পরিচয় থাকে না তাদের মধ্যে। শুধু একটি নম্বরে ফোন দিয়ে মালটি নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অভিযানে আমরা দেখতে পেয়েছি ভারতের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে মাদক বাংলাদেশে ঢুকছে। এসব মাদক মিয়ানমার থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে আসছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি। এসব বিষয় খতিয়ে দেখছি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপপরিচালক রাশেদুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন অভিযানে অনেককে গ্রেফতারের পর মাদক চোরাকারবারিদের নতুন নতুন কৌশল সম্পর্কে আমরা জানতে পারছি। যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে, সেখানেই মাদক চোরাকারবারিদের আনাগোনা কিছুটা শিথিল হয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে নতুন নতুন স্পট সৃষ্টি করে সেখান দিয়ে মাদক বাংলাদেশে ঢুকছে। এসব বিষয় চিহ্নিত করে আমরা সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় নজরদারি জোরদার করেছি। মাদক সংশ্লিষ্টতায় যারা বাহক হিসেবে কাজ করে, তাদের তৈরির পেছনে যারা রয়েছে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে মাদক চোরাচালান ঠেকানো যাচ্ছে না বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক। তিনি বলেন, সরকার জিরো টলারেন্স নিয়েছে, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সীমান্তরক্ষী বাহিনীসহ সবার সমন্বিত নজরদারি কিংবা অভিযান পরিচালনা করা হলে মাদক কারবারিরা কিছুটা ভীতসন্ত্রস্ত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, প্রতিনিয়ত অভিযানের ফলে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাদক ধরা পড়ছে, কিন্তু মাদকের পেছনে যারা রয়েছে তারা নেপথ্যে থেকে যাচ্ছে। যারা ধরা পড়ছে তারা বাহক বা ক্যারিয়ার। এছাড়া তদন্তের ধীরগতির কারণে মাদকের পেছনে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার সম্ভব হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
|