শুকিয়ে যাচ্ছে মুহুরী-সিলোনিয়া
|
কয়েক মাস ধরে বৃষ্টি নেই। ভারতের উজান থেকে পানি না আসা বন্ধ দীর্ঘদিন। দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে ফেনীর মুহুরী ও সিলোনিয়া নদী। ফলে বোরো ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। কৃষিপণ্য উৎপাদনে বাড়ছে ব্যয়। সংকটে পড়েছেন মৎস্যজীবীরাও। কৃষি অফিসের তথ্য মতে, ফেনীর পরশুরাম উপজেলায় চলতি বছর ৩ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে আর ফুলগাজীতে ৪ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু নদীর পানি সংকটে অন্তত ১ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ব্যাহত হয়েছে। আরও আবাদকৃত জমি পানির অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৃষ্টি না হওয়ায় ও ভারতের উজান থেকে পানি না আসায় মুহুরী নদীর ফুলগাজী উপজেলার দেড়পাড়া গ্রাম থেকে পরশুরাম পর্যন্ত পানি শুকিয়ে গেছে। নদীর কিছু অংশ মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। এতে বেশ কয়েকটি গ্রামের কৃষক বোরো ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। অপরদিকে সিলোনিয়া নদীর ফুলগাজী উপজেলার বন্দুয়া সেতু অংশের পূর্ব-পশ্চিম পাশে দেড় কিলোমিটার এলাকা ছাড়া বাকি অংশে পানি নেই। পানির অভাবে মাঠে ধান শুকিয়ে চিটা হয়ে গেছে। কোথায় কোথাও গরমে ধান ক্ষেত পুড়ে গেছে। নদীর দুপাশে নিলক্ষী, গোসাইপুর, করইয়া, শ্রীবউরা, নোয়াপুর, কামাল্লা, রাজেশপুর, মনতলা, গাবতলা, মান্দারপুর ও পৈথারা গ্রামের হাজারও কৃষক বোরো ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ছেন। নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় এবং খনন না হওয়ায় নদীর পানি ভূগর্ভে যেতে পারছে না। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্থিতিতল নিচে নামছে। স্থানীয়রা জানান, পলি মাটি, বালি ও ময়লা পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীগুলো মরা খালের মতো হয়ে গেছে। এরপরও বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতেই নদীর পানি উপচে আশপাশের এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। ফুলগাজী উপজেলার নোয়াপুর গ্রামের কৃষক রবিউল হক টিটু বলেন, দীর্ঘ ৫০ বছর এ জায়গায় আমরা জমি আবাদ করছি। পাঁচ বছর আগেও সিলোনিয়া নদীর পানি দিয়ে আমরা সেচ পানি দিতাম। এবার মাঠের কৃষি জমির ধান শুকিয়ে গেছে। এ মৌসুমে দুই একর জমিতে বোরো ধান চাষ করছি। ফসল পাবো কি-না দুশ্চিন্তায় আছি। কৃষক আবু মিয়া বলেন, নদী মরুভূমির মতো হয়ে গেছে। বর্তমানে মাটিতে গর্ত করে ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি উত্তোলন করে ক্ষেতে দিতে হচ্ছে। মাটির নিচ থেকেও ঠিকমতো পানি ওঠানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে ডিজেলের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। গ্রামের কৃষক কবিরুল ইসলাম বলেন, মুহুরী নদীর উজানের অংশে ভারত সীমান্তে পানি আটকে রাখায় বাংলাদেশের অংশে পানি প্রবাহ কমে গেছে। পানি প্রবাহ না থাকায় নদী একেবারেই শুকিয়ে গেছে। সেচ পাম্প চালুর কিছু সময়ের মধ্যে পানি সংকটে তা বন্ধ হয়ে যায়। পরশুরাম পৌর এলাকার কোলাপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল খায়ের বলেন, মুহুরী নদীর উজানের অংশে ভারত সীমান্তে পানি আটকে দিচ্ছে। এদিকে বাংলাদেশ অংশে বাজারের পোলট্রি খামারের ময়লা আবর্জনা ফেলাসহ নানা কারণে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে নদী শুকিয়ে গেছে। পরশুরাম উপজেলার বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের বাগমারা এলাকার সেচ পাম্প মালিক মো. মোস্তফা শামীম বলেন, গ্রামের বেশিরভাগ জমিতে পানি দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে নদীতে পানি না থাকায় মৎস্যজীবীরাও সংকটে পড়ছেন। দেশি প্রজাতির মাছের স্বাদ বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় বাসিন্দা জমির হোসেন বলেন, বাড়ির পাশেই সিলোনিয়া নদী। কয়েক বছর আগেও এ নদী থেকে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালিয়েছি। কিন্তু এখন আর নদীতে পানি নেই। ফলে মাছও পাওয়া যায় না। আমি এখন মাছ ধরা বাদ দিয়ে অটো চালাই। এভাবে আমার মতো অনেকেই পেশাবদল করেছেন। ফুলগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। আবার নদীতে নাব্যতাও কম, খনন জরুরি। মির্জানগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ভুট্টু বলেন, কৃষকদের পানি সংকটের বিষয়টি জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি। পানি সংকটে বোরোর ফলন ব্যাহত হচ্ছে। ফেনীস্থ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আখতার হোসেন বলেন, মুহুরী নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ার ঘটনা এর আগে কখনো হয়নি। পানি সংকটে এবারের বোরোর ফলন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা আছে। পরশুরাম পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেল বলেন, জেলা প্রশাসন ও কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। |