ইলিশ ছাড়াই ফিরছেন জেলেরা
|
বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। সাগরে ইলিশ ধরা না পড়ায় সরগরম নেই কুয়াকাটা, আলীপুর ও মহিপুর মৎস্য পল্লিতে। মাঝেমধ্যে দুই এক ট্রলার অল্প কিছু মাছ পেলেও বেশিরভাগ ট্রলার সমুদ্র থেকে ফিরছে ইলিশশূন্য। ফলে উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে চলছে হাহাকার। ঋণের বোঝায় দিশেহারা কলাপাড়া উপজেলার অত্যন্ত ৩০ হাজার জেলে পরিবার। মৎস্য পল্লি ঘুরে ঘুরে দেখা গেছে, মৎস্য আড়তগুলোতে আগের মতো কর্মব্যস্ততা নেই। ঘাটের বয়স্ক শ্রমিকরা বেকার বসে আছেন। যুবক শ্রেণির শ্রমিকরা আড়তে জড়ো হয়ে টেলিভিশন দেখছেন। পাইকাররা চায়ের দোকানে বসে গল্প-আড্ডায় সময় পার করছেন। জেলেরা পুরোনো ছেঁড়া জাল ঠিক করছেন। আড়তের মালিকরা ব্যবসার লাভক্ষতি হিসাব কষছেন। এক কথায় কর্মব্যস্ত মাছ বাজারের মানুষগুলো কর্মহীন অবস্থায় সময় পার করছেন। এ চিত্র আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের। মৎস্য শ্রমিক মো. হাসান বলেন, ‘গত দুই মাস ধরে মাছ খুবই কম। ট্রলার ঘাটে এলে কিছু সময় কাজ থাকে। দিনের বেশিরভাগ সময় অলস থাকতে হয়। আয় কম, সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে।’ ধুলাসার ফিশ নামক আড়তের মালিক আবু জাফর হাওলাদার বলেন, ‘সমুদ্রে মাছ কম। বাজার সওদা করে ট্রলার সাগরে পাঠাই, ফিশিং শেষে শূন্য হাতে ফিরে আসে। গত মাসে আমার আট লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।’ খাপড়াভাঙ্গা নদীর পাশের একটি মৎস্য আড়তে পুরোনো জাল বুনছেন কয়েকজন জেলে। কথা হয় তাদের সঙ্গে। জানান, প্রচণ্ড গরমে সাগরে মাছ নেই। বৃষ্টি না হলে সাগরে গিয়ে লাভ নেই। গত দুই মাসে পাঁচবার সাগরে গিয়ে শূন্যহাতে ফিরে এসেছেন। প্রতিবারই বাজারের টাকা লোকসান হয়েছে। তাই এখন সাগরে না গিয়ে পুরোনো জাল বুনছেন। মাছের দেখা মিললে সমুদ্রে মাছ শিকার করতে যাবেন। আলীপুরের মনি ফিশের মালিক আব্দুল জলিল ঘরামী বলেন, ‘আমার আড়তে আগে দিনে যে মাছ উঠতো তা এবার মৌসুমে আসেনি। ব্যবসার অবস্থা ভালো না। অন্য ব্যবসার চিন্তা করছি। যে হারে বৈধ-অবৈধভাবে মাছ শিকার চলছে তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মাছই থাকবে না। ট্রলিং জালে সব মাছের পোনা মারা যাচ্ছে। আমাদের সমুদ্রের মৎস্য সম্পদ রক্ষা করতে হলে অবৈধ ট্রলিং জাল বন্ধ করতে হবে।’ কলাপাড়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ‘ইলিশ হচ্ছে গভীর সমুদ্রের মাছ। জলবায়ু পরিবর্তন, প্রচণ্ড গরম, অনাবৃষ্টির কারণে মাছ কম পানিতে আসছে না। তাই কুয়াকাটার উপকূলে কম ইলিশ ধরা পড়ছে। আশা করছি আবহাওয়া পরিবর্তন হলে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়বে। কুয়াকাটা সংলগ্ন সমুদ্রে দীর্ঘ ডুবোচর থাকায় রামনাবাদ, আগুনমুখা, আন্ধারমানিক ও বলেশ্বর মোহনায় ইলিশের আনাগোনা কমে গেছে Please follow and like us: |