বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাতি নিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধ করবে কে
প্রকাশ: শনিবার, ২০ মে ২০২৩, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘদিন ধরে রাজধানী ও রাজধানীর বাইরে হাতি দিয়ে চাঁদাবাজি করে আসছে কতিপয় ব্যক্তি। বিশেষ করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অলিগলি এবং সড়কে যানবাহন ও পথচারীদের চলাচল বন্ধ করে হাতি দিয়ে টাকা নিতে প্রায়ই দেখা যায়। একপ্রকার ভয়ে ও বাধ্য হয়ে হাতিকে চাঁদা দিতে হচ্ছে বলে মনে করেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও পথচারীরা। ব্যবসায়ীরা প্রতিষ্ঠানের পণ্য নষ্ট হওয়ার ভয়ে টাকা গুঁজিয়ে দেন। তবে এসব বিষয়ে কেউ কথা বলে না; কারা হাতি নিয়ে চাঁদাবাজি করছে? কে থামাবে হাতির এই চাঁদাবাজি?—এমন প্রশ্ন জেগেছে জনেমনে।

হাতির পিঠে চুপ করে বসে থাকেন মাহুত। তার ইশারায় এক দোকান থেকে আরেক দোকানে যায় হাতি। ১০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করে নিচ্ছে দোকানদের কাছ থেকে। যতক্ষণ পর্যন্ত শুঁড়ের মাথায় টাকা গুঁজে না দেবে, ততক্ষণ শুঁড় সরায় হাতি; স্থানও ত্যাগ করে না। আবার টাকা না পেলে প্রশিক্ষিত এই প্রাণীটি ক্ষুব্ধ হয়ে উচ্চ স্বরে হুংকার ছাড়ে। আর টাকা পেলে শুঁড় দিয়ে মাহুতকে দিচ্ছে। আর পথচারীদের অনেকে আনন্দ পেয়ে টাকা দিলেও, বেশির ভাগই বন্য প্রাণী দিয়ে টাকা তোলাকে অনৈতিক বলছেন।

এ বিষয়ে ডিএমপি বলছে, ডিএমপির প্রতিটি মিটিংয়ে হাতি দিয়ে চাঁদাবাজির বিষয়ে আলোচনা হয়। যেখানে এমন সংবাদ পাওয়া যাবে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আর বন্য প্রাণী দমন অপরাধ ইউনিট বলছে, হাতি লালনপালনের নির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। যারা হাতি নিয়ে দোকানে দোকানে এভাবে টাকা তোলে, এটা নিঃসন্দেহে অপরাধ।

গত বুধবার (১৭ মে) রাজধানীর উত্তরায় ট্রেনের ধাক্কায় একটি হাতির মৃত্যু হয়। এ হাতিটির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাতির চাঁদাবাজি নিয়ে নতুন কর আলোচনায় আসে বিষয়টি। দুপুরে উত্তরার পূর্ব বাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনার পর হাতির মালিককে খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এ বিষয়ে উত্তরা দক্ষিণখান থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জহিরুল ইসলাম জানান, দুপুর ১২টার দিকে দুটি হাতি উত্তরা রেললাইনের পাশে ঘাস খাচ্ছিল। এ সময় কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসা চট্টলা এক্সপ্রেসের ধাক্কায় একটি হাতি মারা যায়।

তিনি জানান, হাতির পেছনের পা ট্রেনের সঙ্গে জড়িয়ে গেলে ৭০ থেকে ৮০ ফুট দূরে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই হাতিটি মারা যায়। পরে বিকালের দিকে ভেকু দিয়ে রেললাইন থেকে হাতির মরদেহ সরিয়ে নেওয়া হয়।

গত এপ্রিল মাসে ঈদের কয়েক দিন আগে হঠাৎ হাতি নিয়ে এক মাহুত হাজির হন রাজধানীর শুক্রবাদ কাঁচাবাজার এলাকায়। সেখানে হকার থেকে শুরু করে প্রতিটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে হাতি দিয়ে টাকা তোলা হয়। বাজারের মুদি ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দোকানে অনেক কিছু সাজানো থাকে। হাতিটি যদি দোকানের মালপত্র নষ্ট করে, এ ভয়ে কিছু বলি না। যেভাবে শুঁড় এগিয়ে দেয়, ভয়ে টাকা কে না দেবে? না দিলে তো দাঁড়িয়ে থাকে, জোরে হুংকার করে।

আরেক ব্যবসায়ী বিল্লাল উদ্দিন বলেন, বিশালকায় হাতি দেখলেই ভয় করে। যে লোকটা হাতি নিয়ে আসে, তাকে তো কেউ কিছু বলে না। এভাবে টাকা নেওয়াটা তো কোনও বিনোদন হতে পারে না। যারা এভাবে বন্য হাতি নিয়ে চাঁদাবাজি করে, তাদের আইনের আওতায় আনা দরকার। তাহলে হাতি নিয়ে আর কেউ এভাবে রাস্তায় নামবে না। হাতির চাঁদাবাজি বন্ধে প্রশাসনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

আরেক ব্যবসায়ী এগিয়ে এসে বলেন, শুধু শুক্রাবাদ নয়, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হাতি নিয়ে চাঁদাবাজি এখন প্রায়ই দেখা যায়। তাই ব্যবসায়ীদের দাবি, দ্রুত যেন এসব চাঁদাবাজি বন্ধ করার উদ্যোগ নেয় প্রশাসন।

হাতি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি হচ্ছে রাজধানীতে। এসব চাঁদাবাজি থামানোর জন্য পুলিশ কি কোনও ব্যবস্থা নেবে? জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন বলেন, ‘হাতি দিয়ে হোক আর হিজড়ারা হোক—এসব চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আমাদের কমিশনার স্যারের কড়া নির্দেশ দেওয়া আছে। ডিএমপির প্রতিটি মিটিংয়ে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। এমন সংবাদ যেখানে পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

ডিসি আরও বলেন, ‘ঢাকা শহরে এমনিতে যানজট। তার ওপর যদি বিশালদেহী হাতি সড়কে নামে বা কোন গলিতে ঢোকে, তাহলে যানজটও বাড়ে, মানুষের চলাচলের সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। যারা হাতি নিয়ে এভাবে ঘুরে বেড়ায়, দোকানে দোকানে টাকা তোলে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

এ প্রসঙ্গে বন্য প্রাণী দমন অপরাধ ইউনিটের পরিচালক মো. ছানাউল্যা পাটওয়ারী বলেন, ‘হাতি লালনপালনের নির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। যিনি হাতি লালন-পালন করবেন, তাকে শর্ত মেনেই করতে হবে। হাতি আগে কীভাবে ব্যবহার হতো, সেটাও সবাইকে জানতে হবে। দুর্গম এলাকায় মালামাল পরিবহন, সার্কাস অনুষ্ঠান, হাতির পিঠে চড়ে বিয়ে করতে যাওয়া শত শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্য এখন আর নেই। সুতরাং হাতিকে বাঁচিয়ে রাখতে তাকে পর্যাপ্ত খাবারও দিতে হবে। আর এই খাবার দিতে হলে অনেক টাকার প্রয়োজন। কিন্তু হাতির মালিক এত টাকা পাবেন কোথায়?

পরিচালক আরও বলেন, এখন তো আগের মতো সার্কাস নেই। বিয়ে করতেও হাতি নিয়ে যাওয়া হয় না। এই আধুনিক যুগে হাতি দিয়ে মালামাল পরিবহন তো প্রশ্নই আসে না। তবে যারা হাতি নিয়ে দোকানে দোকানে এভাবে টাকা তোলে, এটা নিঃসন্দেহে অপরাধ। হাতি নিয়ে বর্তমানে আলোচনা হচ্ছে। সবাই মিলে আলোচনা করে একটা সমাধানের পথে যেতে হবে। হাতিগুলোকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।’







সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ