২৪ ঘণ্টায় বিএনপির ২৬০ নেতাকর্মী আটক, দাবি রিজভীর
|
গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ২৬০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন দলটির জেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এসময়ের মধ্যে ৯টি মামলা হয়েছে, এতে আসামি এক হাজার ৫৫ নেতাকর্মী। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হামলায় বিএনপির ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলেও জানান রিজভী। শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন বিএনপির এই জেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব। রুহুল কবির রিজভী বলেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে মহাসমাবেশের চার থেকে পাঁচদিন আগে থেকে আজ পর্যন্ত মোট গ্রেফতার ১০ হাজার ৯১ নেতাকর্মী। এ সময়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ২০৮টি। এছাড়া সংঘর্ষ ও হামলায় আহত হয়েছেন বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ৩ হাজার ৮৯৬ জন নেতাকর্মী। একই সময়ে নিহত হয়েছেন ১২ জন, যাদের মধ্যে একজন সাংবাদিক। তিনি জানান, গত ২৮ জুলাই থেকে আজ পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারা দেশের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী মোট গ্রেফতার ১৩ হাজার ৭১ জন। এসময়ে মামলা হয়েছে ৬০১টির অধিক, মোট আসামি ৪৭ হাজার ৭৩ জন। সংঘর্ষ ও হামলাসহ বিভিন্ন ঘটনায় আহত ৫ হাজার ৯৮৭ নেতাকর্মী। নিহত হয়েছেন ১২ জন, যাদের মধ্যে একজন সাংবাদিক। এসময়ের মধ্যে ১৭টি মামলায় ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ১১১ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এসময় বাংলাদেশে এখন উত্তর কোরিয়ার মতই একদলীয় শাসন চলছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘এটা একটি এক দলীয় দেশ শুধু নয়, নিষ্ঠুর এক দলীয় দেশ, এখানে সেই রকম একদলীয় শাসন চলছে। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের এখন আর কোনো প্রার্থক্য নেই… একাকার হয়ে গেছে।’ ‘কথা বলা মানে হচ্ছে সে অদৃশ্য হয়ে যাবে, লাশ হয়ে পড়বে। কয়েকদিন আগে যুবদলের এক ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার দুই-তিন দিন পর তার লাশ পাওয়া গেছে। এই হচ্ছে বাংলাদেশের চিত্র।’ বিএনপির এই জেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘সরকার নানাভাবে বিরোধীদলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি সম্পর্কে বিভ্রান্তি তৈরি করার জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছে। অবৈধ সরকারের মন্ত্রীরা অনর্গল মিথ্যাচার করে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এক সন্ত্রাসী উপরিকাঠামো, সন্ত্রাসের শৃঙ্খলের মধ্যে সারা বাংলাদেশ নিশ্চুপ হয়ে গেছে। সারাদেশের মানুষ সবকিছু দেখছে।’ তিনি বলেন, ‘দেখতে দেখতে তাদের ভেতরে যে দ্রোহ, ভেতরে ভেতরে তাদের যে ক্রোধ, ভেতরে ভেতরে তাদের যে ক্ষোভ তা পুঞ্জীভূত হচ্ছে। এটা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের টের পাচ্ছেন না।’ রিজভী বলেন, ‘চিরস্থায়ী ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন ওরা বিভোর। ভেবেছে এভাবে নির্মমতা করে তারা চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকবে। তারা যেভাবে সাজিয়ে নিয়েছে এই সাজানো বাগান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে ভেবেছে ক্ষমতা থেকে তাদের কেউ বিচ্যুত করতে পারবে না। ক্ষমতার মসনদ এতই শক্ত ওরা মনে করছে। এই মসনদ শক্ত করার জন্য পৃথিবী অনেক স্বৈরশাসক ভেবেছিলো… কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম হচ্ছে যে, অত্যাচারীরা যে অস্ত্র নিয়ে আঘাত করে- স্বাধীনতাকামী মানুষ, গণতন্ত্রকামী মানুষ সেই অস্ত্র তাদের দিকেই তাক করে।’ তিনি বলেন, ‘যে দুর্বিনীত অত্যাচারের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তারা (সরকার) আবার একটা একতরফা নির্বাচন করবেন, নির্বাচনের নামে একটা প্রহসন দেবেন। ভাগাভাগির নামে তাদের তথাকথিত যে মহাজোট সেই মহাজোটের কোন দল কয়টা সিট পাবে সেটা তারা ভাগাভাগি করে নির্বাচন করবেন। সেটা সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করবে… এটা ছাড়া অন্য কোনো পন্থা তাদের নেই। না হলে একটি রাজনৈতিক দল জনগনের ওপর নির্ভরশীল দল হলে তারা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে ভয় পাবে কেন?’ আগামী রোববার থেকে শুরু হওয়া অবরোধ কর্মসূচি প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘পরশু থেকে শুরু হবে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি। এই কর্মসূচি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ- যারা গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে, যারা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে, যারা প্রকৃত গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে, যারা অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে বিশ্বাস করে, যারা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন, প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে বিশ্বাস করে- সবাই এই অবরোধ কর্মসূচি সফল করবে।’ |