শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আদালতে এসে নিজেই ধরা দিলেন মাদক কারবারি
প্রকাশ: শনিবার, ২৭ মে ২০২৩, ০৪:২৯ অপরাহ্ণ

চলতি বছরের গত ২ জানুয়ারি ৬০ হাজার পিস ইয়াবাসহ রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে পাঁচ কারবারিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় মো. শফিকুল নামে এক সদস্য কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় গত ৩ এপ্রিল শফিকুলের নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতির সুপারিশ করে চার্জশিট দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির সাব-ইন্সপেক্টর আছমত আলী।

গত ১৪ মে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে মামলার চার্জশিট গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। ওইদিন আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপস্থিত হন। পলাতক আসামি শফিকুলও ছিলেন কাঠগড়ায়। এ মামলায় গ্রেফতার দেখানোর জন্য তার আইনজীবী আবেদন করলে কারাগার থেকে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে তার আইনজীবী অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। ‘কাঠগড়ায় থাকা শফিকুলকে চেনেন কি না’, আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করলে তিনি ‘না’ বলে উত্তর দেন। এসময় শফিকুল নিজের পরিচয় দেন। পরে শফিকুলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন আদালত।

এ মামলার অন্য পাঁচ আসামি ওসমান গণি (৩১), মিন্টু বিশ্বাস (২৫), মবিন উল্লাহ (২৯), আমিন উল্লাহ (২৫) ও সজীবের (২৫) বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) ১০(গ) ও ৪১ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত মর্মে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

ওইদিন বিচারক আদেশে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে শফিকুল পলাতক হন এবং হাতেনাতে আটক হন পাঁচ আসামি। ৬০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারের অভিযোগে মামলা করে পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই আছমত আলী তদন্ত শেষে পলাতক আসামি শফিকুলের সঠিক নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় এবং গ্রেফতার করতে না পারায় তাকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন। অন্য পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) ১০(গ) ও ৪১ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

কিন্তু পলাতক আসামি শফিকুলের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও মানি লন্ডারিং আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি কারাগারে আটক। শফিকুলকে এ মামলায় আটকের জন্য তার পক্ষের আইনজীবী আবেদন করলে তার কাস্টডি ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়। তাকে কাস্টডি ওয়ারেন্ট মূলে গত ১৪ মে আদালতে হাজির করা হয়। অভিযোগপত্র গ্রহণ বিষয়ে শুনানির জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা ওইদিন আদালতে হাজির হন। আদালতের জিজ্ঞাসাবাদে তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, তিনি যাচাইয়ের জন্য ওই আসামির নাম-ঠিকানা পাঠিয়ে উত্তর সংগ্রহ করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

আদালত বলেন, এ মামলায় হাতেনাতে গ্রেফতার মো. ওসমান গণির সঙ্গে পলাতক আসামি শফিকুল দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে কেনাবেচা করছিল মর্মে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। শফিকুলের বাড়িও কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায়। সে হিসেবে ওসমান গণিকে গ্রেফতারের পর ঠিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অথবা পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে শফিকুলের পূর্ণ ঠিকানা ও তার অবস্থান সম্পর্কে জানা যেতো। কিন্তু এ মামলায় ৬০ হাজার পিস ইয়াবার মতো বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধারের পরও কোনো অজ্ঞাত কারণে কোনো আসামিরই রিমান্ড চায়নি পুলিশ।

বিচারক আদেশে বলেন, আসামি শফিকুলের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে একাধিক মামলা রয়েছে। সে মামলাগুলোতে তার যে ঠিকানা সেই ঠিকানার সঙ্গে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা তার নাম, বাবার নাম, উপজেলা ও জেলার নামের মিল আছে। শুধু তার গ্রামের নামের ক্ষেত্রে কিছু ভিন্নতা রয়েছে। শফিকুল আদালতের কাঠগড়ায় হাজির থেকে এবং তদন্ত কর্মকর্তার সামনে আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে নিজেই স্বীকার করেছেন, তিনি এ মামলার পলাতক আসামি।

আদালত বলেন, এ অবস্থায় হাতেনাতে আটক আসামিরা তাদের সঙ্গে থাকা পলাতক আসামির ঠিকানা প্রকাশের ক্ষেত্রে ঠিকানার কোনো একটি নাম ভুল বা ভিন্ন করে উল্লেখ করলেই তাকে খুঁজে বের করতে না পারার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। মামলাটি ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর তদন্ত করেছে এবং তদন্ত কার্যক্রম সহকারী পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান তদারকি করেছেন। তারা যথাযথ ও নিষ্ঠার সঙ্গে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করলে পলাতক আসামি শফিকুলকে খুঁজে না পাওয়ার কোনো কারণ দেখা যায় না।

আদেশে আদালত আরও বলেন, শফিকুল একজন মাদক কারবারি। তাকে খুঁজে পাওয়ার সহজ পথ দৃশ্যমান ছিল। এরপরও তার নাম-ঠিকানা না পাওয়া ও গ্রেফতার করতে না পারায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করার বিষয়টি নিছক সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং তদন্ত তদারকি কর্মকর্তার অবহেলা, অদক্ষতা ও অযোগ্যতা নাকি এর সঙ্গে অন্য কোনো বিষয় জড়িত তার যথাযথ তদন্ত হওয়া হওয়া উচিত। ১৪ মে আদালতে হাজির মামলার পলাতক আসামি শফিকুলকে তার আবেদন মঞ্জুর ক্রমে এ মামলায় আবারও গ্রেফতার করা হলো। যেহেতু পলাতক আসামির অব্যাহতি চেয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে, ফলে অভিযোগপত্র ত্রুটিপূর্ণ মর্মে তা অগ্রাহ্য করা হলো। মামলাটির অধিকতর তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআই ঢাকা বরাবর পাঠানো হোক।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আছমত আলী বলেন, পলাতক শফিকুলের নাম-ঠিকানা যাচাইয়ের জন্য তার এলাকায় ইএস পাঠিয়েছি। সেখানকার স্থানীয় মেম্বার শফিকুল নামের এমন ব্যক্তি খুঁজে না পেয়ে প্রতিবেদন দিয়েছেন। শফিকুলের নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় এবং পলাতক থাকায় তার অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করা হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ৬০ হাজার ইয়াবা উদ্ধারের মামলায় আসামির নাম-ঠিকানা সঠিক না পেয়ে অব্যাহতির আবেদন করা সঠিক হয়নি। এটা তদন্তকারী কর্মকর্তার গাফিলতি। তদন্ত কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া উঠিত। বিচারকের সিদ্ধান্ত সঠিক।

তিনি আরও বলেন, এ ধরনের বড় মামলায় প্রসিকিউটর বিভাগ থেকে তদন্তকারী কর্মকর্তার মতামত নেওয়া উঠিত। তাহলে চার্জশিট দাখিলের ক্ষেত্রে এমন গ্যাপ থাকতো না। তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশকে আরও সচেতন হতে হবে।

 







সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ