শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কমতির দিকে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ০২ মে ২০২৩, ১২:০৮ অপরাহ্ণ

প্রতিবছর ঈদ ও রমজানকে কেন্দ্র করে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় বাড়লেও এবার ঈদের মাসে চাঙা হয়নি রেমিট্যান্স। এপ্রিল মাসের ২১ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলে মাত্র ১২১ কোটি ডলারের সমপরিমাণ প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। অর্থাৎ দৈনিক গড়ে রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৫ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, এপ্রিল মাসের শুরুতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও মাসের শেষ দিকে রেমিট্যান্স কমতির দিকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১ এপ্রিল থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংকিং চ্যানেলে ৪৭ কোটি মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে এসেছে। এই হিসাবে মাসের প্রথম দিকে দৈনিক গড়ে এসেছে ৬ কোটি ৮১ লাখ ডলার।

এদিকে রফতানি আয়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, গত মার্চ মাসে দেশের রফতানি আয় কমেছে। মাসটিতে ৪৬৪ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে দেশ থেকে। এই আয় আগের বছরের চেয়ে ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ কম। ২০২২ সালের মার্চ মাসে ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছিল। আর ২০২৩ সালে মার্চ মাসে রফতানি আয়ের লক্ষ্য ছিল ৫০২ কোটি ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় মার্চ মাসে রফতানি কম হয়েছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার মধ্যে রফতানি আয়ের মাধ্যমে আসে ৭০ শতাংশ, ২৮ শতাংশ আসে রেমিট্যান্সের মাধ্যমে। অর্থাৎ মোট বৈদেশিক মুদ্রার আড়াইগুণ আসছে রফতানি আয়ের মাধ্যমে। বাকি ২ শতাংশ আসে অন্যান্য খাত থেকে। ফলে রফতানি আয় কমে গেলে সার্বিক বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা বড় ধরনের চাপে পড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মোট রফতানি আয়ের ৮৬ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক থেকে। এরমধ্যে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে রফতানি আয়ের ৭৮ শতাংশই আসছে। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ২৬ শতাংশ এবং ইউরোপে ৫২ শতাংশ আসছে। বাকি ২২ শতাংশ আসছে অন্যান্য দেশে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক রফতানি আয়ে ঝুঁকি কমাতে নতুন বাজার খোঁজার পাশাপাশি একক পণ্যের ওপর নির্ভরতার পরিবর্তে নতুন নতুন পণ্য সংযোজনে গুরুত্বারোপ করেছে। যদিও নতুন বাজারে পণ্য রফতানি বাড়ছে খুব ধীরগতিতে। মোট রফতানি আয়ের মাত্র ৪ শতাংশ হচ্ছে নতুন বাজারে।

এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘রফতানির নতুন বাজার চাইলেই ধরা যায় না। নতুন বাজার ধরতে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে পরিচিত হতে হয়। সময় লাগে। এতে খরচ বেশি পড়ে। নানা অনিশ্চয়তাও থাকে। ঝুঁকির ভার কেবল উদ্যোক্তাকেই বহন করতে হয়। সরকার বা ব্যাংক কোনও দায় নেয় না। যে কারণে নতুন বাজারের দিকে কম যাচ্ছেন উদ্যোক্তারা।’

যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের রফতানি আয় কমে যাওয়ার পেছনে রয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ছাড়াও বাংলাদেশের প্রধান রফতানির বাজারগুলোতে প্রবল অর্থনৈতিক মন্দা ও দেশের ভেতরে ডলার, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ও রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণ না থাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের পোশাকের বড় বাজার ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে এখন চলছে বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দা। ২০২০ সালে করোনার সংক্রমণের পর থেকে এ মন্দা শুরু হয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে রাশিয়া ইউক্রেনকে আক্রমণ করলে বিশ্বব্যাপী পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে দাম বেড়ে যায়। এতে ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যায়। অর্থনৈতিক মন্দা প্রকট হতে থাকে। এতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে গত অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বরে বাংলাদেশের রফতানির প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সাড়ে ৪১ শতাংশ, চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা কমে হয়েছে ১৬ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের ওই সময়ে প্রবৃদ্ধি তো হয়নি, উল্টো আরও কমেছে ২ দশমিক ২১ শতাংশ। অন্যান্য দেশে রফতানির প্রবৃদ্ধি ৩৩ শতাংশ থেকে বেড়ে সাড়ে ৫০ শতাংশ হয়েছে। তবে এসব দেশে রফতানি কম বলে মোট রফতানির আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি, বরং মোট রফতানি আয় কমেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে, রফতানি আয়ের আদেশ কমে যাওয়ার কারণে এ শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমে গেছে। গত অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারির তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৩৪ শতাংশ এবং আমদানি কমেছে ১০ শতাংশ। এতে আগামীতে রফতানি আয় আরও কমতে পারে। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে রফতানির আদেশ কমেছে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। রফতানি আয় আসার গতিও কমে গেছে। মন্দায় অনেক উদ্যোক্তা রফতানির অর্থ পরিশোধ করতে পারছেন না।

রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সের এমন পরিস্থিতিতে প্রতি ডলারে ১ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। রবিবার (৩০ এপ্রিল) ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের সংগঠন বাফেদার যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। ফলে আগামী মঙ্গলবার থেকে রেমিট্যান্সে ডলারপ্রতি ১০৮ টাকা এবং রফতানি বিল নগদায়নে ১০৬ টাকা দেবে ব্যাংকগুলো। এ ছাড়া রেমিট্যান্স ও রফতানি বিল কেনার গড় দরের সঙ্গে সর্বোচ্চ ১ টাকা যোগ করে আমদানিকারকের কাছে ডলার বিক্রি করা হবে।

 







সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ