ডলার কেন শক্তিশালী হচ্ছে?
|
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা চলতি বছর যে একটি বিষয়ে একমত হবেন সেটি হলো, ডলার দুর্বল হচ্ছে। কিন্তু গত দুই মাস ধরে ডলারের মূল্য ২ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দিষ্টভাবে সংশয়ের জন্ম দিয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী মাসে হয়তো সুদের হার বৃদ্ধি স্থগিত করতে পারে। ফলে ডলার দুর্বল হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে উল্টোটা ঘটছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয় ভূমিকা রাখতে পারে। একটি হলো একাধিক উদ্বেগ- যুক্তরাষ্ট্রের ঋণসীমা নিয়ে আলোচনা, ব্যাংকগুলোর অবস্থা এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির পূর্বাভাস ডলারকে নিরাপদ মুদ্রায় পরিণত করছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আবারও সুদের হার বাড়াতে পারে বলে ইঙ্গিত রয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু কারিগরি বিষয় জড়িত ডলার শক্তিশালী হওয়ার পেছনে। ঋণসীমা নিয়ে উদ্বেগ এই প্রবণতার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা হিসেবে মুদ্রা কৌশলবিদরা বলছেন, চলমান ঋণসীমা নিয়ে উদ্বেগ ডলারকে শক্তিশালী করছে। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা যুক্তরাষ্ট্রের ঋণগ্রহণের সীমা ৩১.৪ ট্রিলিয়ন পর্যন্ত বৃদ্ধির জন্য সমঝোতার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। অনেক ব্যাংক দুর্বল হওয়ার কারণে মার্কিন অর্থনীতির বিপর্যকর খেলাপি হওয়ার হুমকিও বাড়ছে। বাজারে যখন এমন ধরনের উদ্বেগ বিদ্যমান থাকে তখন বিনিয়োগকারীরা কম ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ, যেমন- বন্ড, স্বর্ণ ও ডলার ক্রয় করেন। কমার্জব্যাংকের মুদ্রা কৌশলবিদ এস্টার রেইশেল্ট বলেন, অজ্ঞাত আশঙ্কায় নিরাপদ মনে করার কারণে ডলার সম্প্রতি শক্তিশালী হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি কতটা গুরুতর এবং মার্কিন ঋণসীমার বিরোধ বাড়লে কী ঘটতে পারে? বৈশ্বিক অর্থনীতির উদ্বেগজনক প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিতের কারণেও অনেক বিনিয়োগকারী নিরাপদ মনে করে ডলার কিনতে পারেন। চলতি সপ্তাহে চীনের প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশটির অর্থনীতি এপ্রিল মাসে প্রত্যাশাজনক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারেনি। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা শেষ হয়নি ট্যান বলছেন, উদ্বেগ হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনও মূল্যস্ফীতিকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। গত সপ্তাহে ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের এক জরিপ প্রতিবেদন অনুসারে, মে মাসে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২ শতাংশ হয়েছে। এর ফলে বন্ড ও ডলারের মূল্য বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই বছরের শেষ দিকে সুদের হার উল্লেখযোগ্য কমাবে। কারণ, তারা একটি অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা করছেন। তবে আলভিন ট্যান বিষয়টি নিয়ে সন্দিহান। তিনি বলেন, আমাদের মনে হয় যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার আরেকটু বাড়ার সুযোগ রয়েছে। ডলার এখনও ক্রমাগত পতনের দিকে বলে যে যুক্তি তুলে ধরা হচ্ছে তা আমরা এখনও মেনে নিতে পারিনি। স্বাভাবিক ঘুরে দাঁড়ানো বিনিয়োগকারীরা ডলারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের বাজি ধরেছেন। কমোডিটি ফিউচার্স ট্রেডিং কমিশনের তথ্যে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে হেজ ফান্ড ও মুনাফা লাভের অপর পন্থায় বিনিয়োগের পরিমাণ ১৪.৫৬ বিলিয়ন ডলার। যা ২০২১ সালের মাঝামাঝির পর থেকে বৃহত্তম। ধারণার বিপরীতে এই অবস্থান ডলারকে শক্তিশালী করতে পারে। ডলারের মূল্য যদি সামান্য বাড়ে তাহলে কিছু ব্যবসায়ী সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ডলার কেনা বন্ধ করতে বাধ্য হবেন। এতে মুদ্রাটি শক্তিশালী হবে। বিসিএ রিসার্চের এফএক্স স্ট্র্যাটেজিস্ট চেস্টার এনটনিফোর বলেছেন, ডলার খুব বেশি বিক্রি হয়। এটি একটি কারিগরি সূচক। কিন্তু একটি সাধারণ কারিগরি সূচক হলো ডলারে একটি সরল রেখার পতন খুবই স্বাভাবিক।
|