বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশের সেমাই বিশ্বের ৪০ দেশে
প্রকাশ: রবিবার, ৩১ মার্চ ২০২৪, ১১:২৫ অপরাহ্ণ

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশি ব্র্যান্ডের সেমাই এখন বিশ্বের ৪০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ওইসব দেশে এখন উৎসব ও অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক পণ্য বাংলাদেশি সেমাই। সারা বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সেমাই বিক্রি হয়, তবে সেমাইয়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে দুই ঈদের সময়। এখন ঈদের আগে দেশ-বিদেশে সেমাইয়ের বিক্রি বেড়েছে।

বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ঈদের সকালে খাবারের তালিকার অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হয়ে উঠেছে সেমাই। এই অঞ্চলের মানুষ এখন বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত। তারাই অন্য দেশে এ বাংলাদেশি সেমাইয়ের বড় ক্রেতা। মূলত তারাই বাংলাদেশি সেমাইয়ের বড় বাজার তৈরি করেছে বিশ্বের ওইসব দেশে। এতে সেসব দেশেও এখন উৎসবকেন্দ্রিক পণ্য এ সেমাই।

দেশে ৪০টির বেশি কোম্পানি রয়েছে, যারা তাদের উৎপাদিত সেমাই মোড়কজাত করে বিক্রি করে। এসব কোম্পানির বাইরে অনেক মৌসুমি প্রতিষ্ঠান উৎসবকেন্দ্রিক খোলা ও মোড়কজাত সেমাই উৎপাদন করে। তবে এ বাজারে এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে বড় বড় কোম্পানি। যারা রপ্তানিতেও বড় সাফল্য দেখিয়েছে গত কয়েক বছর।

এদিকে এখন ঈদবাজারে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে বেড়েছে সেমাই বেচাকেনার পরিমাণ। সেমাই প্রস্তুতকারকরা বলছেন, প্রতি বছর দেশ-বিদেশে ঈদের সময় সেমাইয়ের চাহিদা বাড়ে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদের মৌসুমেও সেমাইয়ের ভালো বেচাকেনা হবে বলে আশা তাদের। এ বছর বিক্রি ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বাড়বে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত এক দশকে চিত্র কিছুটা বদলেছে। সেমাই এখন পরিণত হয়েছে অনেকের নিত্যনৈমিত্তিক খাবারেও। উৎসব-পার্বণ ছাড়াও থাকে চাহিদা। এ অল্প সময়ের মধ্যে সেমাইয়ের বাজারেও এসেছে একটি বড় পরিবর্তন। আগে বাজারে সনাতন পদ্ধতিতে তৈরি খোলা সেমাইয়ের প্রাধান্য থাকলেও এখন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোড়কজাত সেমাই বেশি বেচাকেনা হতে দেখা যায়। তাদের বিদেশেও রপ্তানি দ্রুত বাড়ছে। দেশ-বিদেশ মিলিয়ে পণ্যটির বাজার এখন হাজার কোটি টাকা ছুঁইছুঁই।

মোড়কজাত সেমাই উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস বদলাচ্ছে। আগে শুধু ঈদে সেমাই খাওয়ার রেওয়াজ থাকলেও এখন বছরজুড়েই এ খাদ্যপণ্যটির চাহিদা থাকে। ফলে সেমাইয়ের বাজারও বিস্তার লাভ করছে।

শফিকুর রহমান বলেন, এক দশক আগেও দেশে সেমাইয়ের উৎপাদন অর্ধেকের কম ছিল। করপোরেট কোম্পানিগুলো এ বাজারকে এক ভিন্নমাত্রায় এনেছে। বেশকিছু কোম্পানি সেমাই রপ্তানি করছে। মানুষ এখন স্বাস্থ্য বিষয়ে বেশ যত্নশীল, সেটাও সেমাইয়ের বাজার বড় হওয়ার কারণ।

দেশের চাহিদা মিটিয়ে ঈদ মৌসুমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেমাই রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। জানা যায়, আমেরিকা-ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ প্রতিবেশী দেশ ভারতেও সেমাই রপ্তানি করছে দেশীয় কোম্পানিগুলো। এর মধ্যে প্রাণ, স্কয়ার, বনফুল, কিশোয়ান, ইস্পাহানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সেমাই বিদেশে রপ্তানি করেছে। এছাড়া বিডিফুড, বসুন্ধরা, ড্যানিশ, রোমানিয়া, কোকোলা, ডেকো ও ওয়েল ফুড দেশে তৈরি সেমাইয়ের বড় ব্র্যান্ড, যারা শুধু দেশের বাজারে সেমাই বিক্রি করছে। বড় বিনিয়োগ, উন্নত প্রযুক্তি ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অঙ্গীকারে এসব প্রতিষ্ঠানের সেমাই এখন গ্রাহক চাহিদার শীর্ষে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেমাইয়ের বাজার মোটা দাগে তিন শ্রেণিতে বিভক্ত। এগুলো হলো- সাধারণ বেকারির তৈরি, ছোট ছোট অঞ্চল বা এলাকাভিত্তিক ব্র্যান্ড এবং প্রতিষ্ঠিত বড় কোম্পানির কারখানায় উৎপাদিত সেমাই। সাধারণ বেকারির মধ্যে আবার অধিকাংশ শুধু ঈদকেন্দ্রিক। অঞ্চলভিত্তিক জনপ্রিয় ব্র্যান্ডও রয়েছে। যেমন- উত্তরবঙ্গে বগুড়ার আকবরিয়া একটি জনপ্রিয় সেমাইয়ের ব্র্যান্ড। ওই এলাকা থেকে এশিয়া, শ্যামলী, কোয়ালিটি, খাজা বেকারি, ফুড ভিলেজের মতো আরও বেশ কিছু ব্র্যান্ড সারাদেশে সেমাই বিক্রি করছে।

দেশে সেমাইয়ের বড় ব্র্যান্ড বনফুল। কোম্পানিটি ১৯৮৯ সাল থেকে সেমাই উৎপাদন করছে। বনফুল অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, রুচির পরিবর্তন, ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য সচেতনতা- এ তিন কারণে এখন বাজারে প্যাকেটজাত সেমাইয়ের চাহিদা অনেক বেশি। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে পণ্যটির রপ্তানিও বাড়ছে। শুধু ঈদে নয়, সেমাইয়ের ভালো চাহিদা এখন বছরজুড়েই।

বনফুলের পরে বাজারে বড় কোম্পানি প্রাণ। লাচ্ছা ও খোলা সেমাই বিক্রি করে কোম্পানিটি। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তৌহিদুজ্জমান বলেন, ঈদের চাহিদার কারণে প্রাণ পুরো সক্ষমতা ব্যবহার করে সেমাই উৎপাদন করছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর সেমাইয়ের ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি ২৫ শতাংশের মতো। পুরোদমে রপ্তানিও হচ্ছে। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও এখন ভালো সেমাই বিক্রি হচ্ছে।

একসময় সেমাই উৎপাদনে জনপ্রিয়তা পাওয়া বগুড়ার এমন অনেক কারখানা এখন বন্ধ উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্রেড বিস্কিট অ্যান্ড কনফেকশনারি দ্রব্য প্রস্তুতকারক সমিতি উত্তরবঙ্গ পরিষদের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও খাজা কনফেকশনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বায়েজিদ শেখ বলেন, এখন এ এলাকায় দেড়শ কারখানা রয়েছে। যেখানে আগে আরও কয়েকশ কারখানা সেমাই বানাতো। এর বাইরে আরও কিছু ব্যবসায়ী শুধু ঈদে সেমাই তৈরি করতেন। সেগুলো এখন নেই। তারা খরচের সঙ্গে টিকতে পারছেন না। এর মধ্যে এবছর ময়দা, চিনি তেলসহ অন্য সব উপকরণের দাম বাড়ার কারণে অনেকে লোকসানের আশঙ্কায় সেমাই তৈরি বন্ধ করে দিয়েছেন।

এছাড়া খোলা লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৮০ থেকে ২২০ টাকায়। খোলা চিকন সেমাইও অনেকটা কাছাকাছি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।







সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ