সোমবার ১৩ মে ২০২৪ ৩০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভিসানীতির ‘আতঙ্কে’ বাজার মূলধন হারালো দেড় হাজার কোটি টাকা
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০২ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশি কিছু নাগরিকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি বাস্তবায়ন শুরুর খবরে চলতি সপ্তাহজুড়ে দেশের শেয়ারবাজারে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা গেছে। বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ লোকসানে শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করেছেন। এতে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমেছে। ফলে সবকটি মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। সেইসঙ্গে কমেছে দৈনিক গড় লেনদেন এবং বাাজর মূলধন।

প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার তিনগুণের বেশি। এতে বাজার মূলধন দেড় হাজার কোটি টাকার ওপরে কমে গেছে। আর দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে ৪০ শতাংশের ওপরে।

গত শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভিসানীতির বিষয়টি জানানো হয়। এরপর চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। অবশ্য শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির সঙ্গে শেয়ারবাজারের সরাসরি কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তাই এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়া যুক্তিসঙ্গত না।

২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ পররাষ্ট্র বিভাগ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করেছে বা এর জন্য দায়ী কিছু বাংলাদেশি নাগরিকের ওপর ভিসানীতি দেওয়ার পদক্ষেপ নিচ্ছে। ভিসানীতির আওতায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক বিরোধীদল।

যাদের ওপর ভিসানীতি দেওয়া হচ্ছে সেসব ব্যক্তি তা তাদের পরিবারের সদস্যরা হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে বলা হয়, ভবিষ্যতে আরও কোনো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া ক্ষুণ্ন করা বা এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেলে তারাও একই ভিসানীতির আওতায় পড়তে পারেন।

এরপর চলতি সপ্তাহের প্রথম কর্যদিবস রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই বড় দরপতন হয়। যা অব্যাহত থাকে লেনদেনের পুরো সময়। এতে একদিনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ২৯ পয়েন্ট কমে যায়। পরের তিনদিন ডিএসইর প্রধান সূচক সামান্য বাড়লেও দাম কমার তালিকায় স্থান করে নেয় বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। ফলে কমে বাজার মূলধন।

চলতি সপ্তাহের চার কার্যদিবসে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ৪৭টির শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৪টির। আর ২০৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম অপরিবর্তি থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ ফ্লোর প্রাইসে (সর্বনিম্ন দাম) আটকে রয়েছে। ক্রেতা না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।

বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। যা গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৭৯ হাজার ১০১ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা বা দশমিক ২১ শতাংশ। বাজার মূলধন কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মেলিতভাবে ওই পরিমাণ কমেছে।

এদিকে, ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২৫ দশমিক ১১ পয়েন্ট বা দশমিক ৪০ শতাংশ। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ৫ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট বা দশমিক ২৭ শতাংশ। আর ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক কমেছে ৫ দশমিক শূন্য ১ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৭ শতাংশ।

সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও কমেছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৫৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৮০০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৩৪৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বা ৪৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৮১৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ৪ হাজার ৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সে হিসেবে মোট লেনদেন কমেছে ২ হাজার ১৯০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বা ৫৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। মোট লেনদেন বেশি হারে কমার কারণ চলতি সপ্তাহে এক কার্যদিবস কম লেনদেন হয়েছে।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিডিকম অনলাইনের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ৬৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা লেনাদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফু-ওয়াং ফুড।

এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- জেমিনি সি ফুড, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, ইস্টার্ন হাউজিং, মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজ, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট এবং প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স।

শেয়ারবাজারের এ পরিস্থিতি সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির সঙ্গে শেয়ারবাজারের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে, পরোক্ষ প্রভাব থাকতে পারে, সেটাও খুব বড় কিছু না। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অবশ্য সার্বিকভাবে অর্থনীতির অবস্থা খারাপ। অনেক প্রতিষ্ঠান ভালো লভ্যাংশ দিতে পারছে না। এর নেতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়তে পারে।

 







সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ