ইরান ও ইসরায়েল উত্তেজনায় কোন দেশ কার পক্ষে?
|
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে বিশ্ববাসী যখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কায় ঠিক এর মাঝখান দিয়েই মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিনের ওপর চড়াও হয় ইসরায়েল। এ সংঘাতকে কেন্দ্র করে ১ এপ্রিল দামেস্কে ইরানি দূতাবাসের কনস্যুলার সেকশনে ইসরায়েল বিমান হামলা চালায়। পরে এর প্রতিশোধ হিসেবে রবিবার (১৪ এপ্রিল) ভোরে ইরান শাস্তিমূলক মিশন ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ’ চালায় ইসরায়েলের ওপর। যদিও ইসরায়েলের মিত্রশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে পাল্টা জবাব না দিতে বারণ করেছিলো। এদিকে আমেরিকার নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন মিত্ররা ইরান-ইসরায়েল সংঘাতকে কেন্দ্র করে অনেকটা দ্বিধা-বিভক্ত ও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। শক্তিশালী ইসরায়েলের ওপর ইরানের এমন অভূতপূর্ব হামলার জেরে অনেকটা ভয়েই স্পষ্ট করে ইসরায়েলের পক্ষ নিতে পারছে না এসব আরব দেশ। এর মধ্যে কিছু দেশ আরব ও মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হওয়া সত্যেও ইহুদিবাদী ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে এই দুই দেশের সংঘাত নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে পরাশক্তিগুলোও। ফলে স্পষ্টতই এই সংঘাতে আরো একটি ভূরাজনৈতিক মেরুকরণ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ব। পরমাণু শক্তিধর দেশ দুইটির মধ্যে এ উত্তেজনায় মুসলিমসহ কোন দেশ কার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে? ইসরায়েলের ওপর ইরানের হামলার সম্ভাব্য পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে বেশ আগে ভাগেই যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের চার মার্কিন মিত্র সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও কুয়েত। দেশগুলো জানিয়েছে, তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ইরানের ওপর কোনো প্রকার হামলা চালাতে দেয়া হবে না। অন্যদিকে আরেক আরব রাষ্ট্র জর্ডান খোদ ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে ইরানি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে মাঠে নেমেছে। ইরানের হামলা মোকাবিলায় এরইমধ্যে ইসরায়েলকে সহযোগিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। পাশাপাশি ইসরায়েলের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও জার্মানি। অন্যদিকে, ইসরায়েলে ইরানের হামলার পর সৌদি আরব সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অঞ্চলে ‘সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং ‘যুদ্ধের বিপদ’ এড়াতে উভয় পক্ষকে সংযমের আহ্বান জানায়। তেহরানের এমন হামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আরেক সুপার পাওয়ার ও পরমাণু পরাশক্তি চীন। বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, চীন চলমান উত্তেজনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বৃহৎ আকারে সংঘাত প্রতিরোধ করতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে শান্ত ও সংযমী আচরণ করার আহ্বান জানায়। এদিকে ইরানের এ হামলার জবাবে পাল্টা হামলা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি তেল আবিব। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে রবিবার (১৪ এপ্রিল) সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া নিয়ে পালটা হামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বসেছিল ইসরায়েল। তবে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে সেই বৈঠক। রবিবার বাইডেন প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ‘খুব সাবধানে এবং কৌশলগতভাবে চিন্তা করার’ অনুরোধ জানিয়েছেন। অন্যদিকে, ইরান ও ইসরায়েলের চরম উত্তেজনার মধ্যে তেল আবিবের প্রতি ইস্পাতদৃঢ় সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিলেও ইরানে পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের সঙ্গে অংশ নেবে না মার্কিন বাহিনী। এমনকি এই ইসরায়েলি হামলায় তারা সমর্থন পর্যন্ত দেবেন না। রবিবার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে মার্কিন নিউজ ওয়েবসাইট অ্যাক্সিওস। |