মোঃ ওমর ফারুক,বিশেষ প্রতিনিধি:গাছের সাথে বেঁধে নির্মমভাবে পিটানোর ১৯দিন পর ঢাকায় চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের বাসিন্দা বাবু গাজীর মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ পেলে ঘটনা খতিয়ে দেখার আশ্বাস পুলিশের।
২৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যুর এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফরিদগঞ্জ থানার ওসি শাহ আলম।
বাবু গাজী নামে ওই ব্যক্তি ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের চররাঘবরায় গ্রামের গাজী বাড়ির বাসিন্দা। তাকে গত ৯ নভেম্বর রাতে উন্মাদের মতো পিটিয়ে আহত করা হয়। তার ছোট ছোট দু’টি বাচ্চা রয়েছে। আহতের পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এর পর বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) তার লাশ থানায় নিয়ে আসার পরে ময়না তদন্তের জন্য পুলিশ তা চাঁদপুর মর্গে প্রেরণ করে।এ ঘটনায় নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে বাবুকে পিটিয়ে আহত করা হয় এবং পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।যদিও স্থানীয়রা জানায়, গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন ও আশেপাশের এলাকায় বাবু গাজী একজন চিহ্নিত চোর হিসেবে পরিচিত। থানা পুলিশের খাতায় তার নামে ১৮ টি মামলা চলমান রয়েছে।
গত ৯ নভেম্বর বাবু গাজীকে এলাকাতে বেদম পিটুনি দেয় কয়েকজন। এতে সে মারাত্মক আহত হয়। বিষয়টি গণপিটুনি হিসেবে ছড়ানো হয়। খবর পেয়ে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ বাবুকে উদ্ধার করে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে ঢাকায় পাঠায় চিকিৎসকগণ। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পরে একটি প্রাইভেট হাসাপাতলে তিনি ২৭ নভেম্বর বুধবার বিকালে মারা যান। পরে বৃহস্পতিবার (২৮নভেম্বর) চাঁদপুরে ময়না তদন্ত শেষে তাকে বাড়ির কবরস্থানে দাফন করা হয়।স্থানীয় কতিপয় লোকজন জানায়, গত ৫ নভেম্বর বাবু গাজী ঐ এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আমানুল্লাহর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সে নিজেই ঘটনাটি স্বীকারোক্তি দিয়েছে গোয়ালভাওর বাজারে। এলাকার শফিউল্লাহ গাজীর ছেলে মনসুরের ঘরের গেট ভেঙ্গে মোটরসাইকেলও নিয়ে যায়। ওই ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়।
এছাড়াও ভাটিয়ালপুর এলাকায় আরিফ নামক একজন ব্যক্তির মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যায় বাবু। ভাটিয়ালপুর এলাকার লোকজন জানান, বাবু একটা চোর। তার জন্য অতিষ্ঠ হয়ে গেছে এলাকাবাসী। তার মৃত্যুর খবর শুনে স্বস্তি লাগছে।এদিকে নিহত বাবু গাজীর মা শাহিদা (৫৫) জানান, ঘটনার দিন রাতে বেশ কিছু সংখ্যক লোকের সাথে তার বোন পাখির বাড়িতে জমিজমা নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ঝগড়া বাঁধে। সেখানে বাবুকে বেদম মারা হয়। মার খেয়ে বাবু নিজ বসত ঘরে আশ্রয় নেয়। সেখানেও লোকজন বসত ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে বাবুকে পেটায়। পরে তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় বাইরে। এক পর্যায়ে, বাবু জ্ঞান হারিয়ে ফেললে হারুনের দোকানের অদূরে একটি গাছের সাথ বেঁধে রাখেও মারতে থাকে হামলাকারীরা।
বাবুর স্বজনদের দাবী, ওইদিন বাবুকে বিনা অপরাধে মারা হয়েছে। হাছান (৫) ও হোসেন (১ বছর) নামে দুজন শিশু ছেলে সন্তান রয়েছে বাবু গাজীর।এ বিষয়ে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহ আলম জানান, বাবু গাজীর বিরুদ্ধে থানায় অন্তত ১৮টি মামলা রয়েছে বলে তথ্য পেলাম। তবে কেউ আইন হাতে তুলে নিবে তা মেনে নেয়ার মতো নয়। তাকে বেদমভাবে মেরে আহত করার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। থানায় লাশ নিয়ে আসার পর আমরা ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ চাঁদপুর মর্গে পাঠিয়েছি। তার পরিবার থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।