লাইসেন্স ও নম্বরপ্লেট ছাড়াই রাজশাহী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আটোরিকশা
|
জশাহী নগরীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে লাইসেন্স ও নম্বরপ্লেট বিহীন আটোরিকশা। সিটি করপোরেশনের হিসাবে নগরীতে ১৭ হাজার চার্জার ও অটোরিকশার অনুমোদন থাকলেও সড়কে চলছে দ্বিগুণেরও বেশি। নগরীতে শৃঙ্খলা ফেরাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও বেশি পেশাদার হওয়ার কথা বলছেন পরিকল্পনাবিদরা। সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, নগরীতে চার্জার রিকশা রয়েছে ৬ হাজার এবং অটোরিকশা রয়েছে ১১ হাজার। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র বলছে, নগরীতে চলাচল করছে অন্তত ৩৮ হাজার অটোরিকশা। রাজশাহী নগরীর যেখানেই তাকানো যায়, সেখানেই মিলবে আটোরিকশা। পাড়া থেকে মহল্লা সবখানেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব আটোরিকশা। এসব রিকশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন লাইসেন্স দিয়েছে। নির্ধারণ করে দিয়েছে সময়। তবে সেই নির্ধারিত সময় মানছেন না কেউই। সব সড়কেই একসঙ্গে চলাচল করতে দেখা যায় এসব আটোরিকশাকে। এতে নগরীতে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ঘটছে দুর্ঘটনাও। ট্রাফিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, লাইসেন্স ও নম্বরপ্লেট বিহীন এবং নম্বরপ্লেট টেম্পারিং করা এসব রিকশা বিভিন্ন প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে নগরীর অলিগলি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। নগরবাসী বলছে এ যেন দেখার কেউ নেই। নগরীর সাহেব বাজারে কথা হয় স্থানীয় ব্যবসায়ী সুজন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, অনেক বছর ধরেই রাজশাহীতে রিকশা দেখছি। তবে এখন রিকশা বেড়ে গেছে। এদের কারণে রাস্তায় চলাই মুশকিল। প্রতিটি সড়কে তীব্র গতিতে গাড়ি চালায় তারা। এগুলো নিয়ে পুলিশ কাজ করে না। তারা শুধুমাত্র কয়েকটি মোড়ে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র চেক আর সিগন্যাল দিয়েই দায়িত্ব সারছে। রাজশাহী রেলগেইট এলাকার বাসিন্দা আব্দুল কাদের বলেন, আগে রাজশাহীতে কিছু পরিমাণে গাড়ি ছিল। এগুলো এখন কয়েকগুণ বেড়েছে। তারা কোনো নিয়মই মানে না। ফলে আমাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে যে আটোরিকশা নিয়ে আসা হয়েছিল সেই যানই এখন আমাদের প্রধান সমস্যা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নগরীতে রিকশা তৈরির প্রতিষ্ঠান রয়েছে অন্তত ৫০টি। যেখান থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৫০০টি নতুন রিকশা তৈরি হচ্ছে ও যুক্ত হচ্ছে এই বহরে। যদিও সিটি করপোরেশন বলছে, নতুন করে লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রয়েছে। কিন্তু এসব রিকশা চলছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকাতেই। রাজশাহীর তালাইমারী মোড় এলাকায় আটোরিকশা তৈরি হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠানে। এই প্রতিষ্ঠানটি মাসে অন্তত ৪টি আটোরিকশা তৈরি করে। প্রতিষ্ঠানের মালিক মোহাম্মদ লালন বলেন, আমাদের মতো অন্তত ৫০টি প্রতিষ্ঠান এই শহরে আছে। সবাই রিকশা বানায়, মেরামত করে। আমরা প্রতিমাসে অন্তত ৪-৬টি আটোরিকশা তৈরি করি। তিনি বলেন, এগুলো তৈরিতে আমাদের কোনো বাধা নেই। অর্ডার দিলেই আমরা বানিয়ে দিই। তবে এটি কীভাবে সড়কে চলে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. নূর-ঈ-সাইদ বলেন, আটোরিকশার নতুন করে কোনো লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না। প্রতিটি বাড়িতে একটি করে লাইসেন্স নীতিতে আমরা লাইসেন্স দিয়েছি। কিছু বাকি আছে এগুলোও পরবর্তীতে দেবো। তিনি বলেন, এভাবে অটোরিকশা চলাচল করাতে আমরা রাজস্ব হারাবো। এগুলো নিয়ে আমরা পুলিশকে বলেছি। তারা এগুলো নিয়ে কাজ করছে। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার অনির্বান চাকমা বলেন, আমরা প্রতিনিয়তই অবৈধ অটোরিকশা ধরছি। তাদের ডেকে নিয়ে এসে সচেতনতা সভাও করছি। পাশাপাশি তারা যাতে রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি না চালায় সেজন্য লিখিত মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি। ভবিষ্যতেও অভিযান অব্যাহত থাকবে। এছাড়া দুই ধরনের গাড়ি কালার মেনেই সড়কে নামছে বলে জানান তিনি। তবে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. কামারুজ্জামান বলেন, নগরীতে শৃঙ্খলা ফেরাতে অটোরিকশার বিকল্প নিয়ে ভাবার পাশাপাশি এই যানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে ট্রাফিক বিভাগকে আরও বেশি পেশাদারিত্ব দেখাতে হবে। তবেই রাজশাহীর সড়কগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরবে। |