হাঁকডাকেই শেষ সড়ক নিরাপত্তা, থামছে না মৃত্যুর মিছিল
|
কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাব, অদক্ষ চালক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদাসীনতা, মাদক আর অব্যবস্থাপনায় সড়কে চলছে মৃত্যুর মিছিল। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় সড়কে ঝরছে প্রাণ। দিনের পর দিন যেন সড়কে বেড়েই চলছে প্রাণহানি। এতকিছুর পরও যেন কেউ দেখেও দেখছে না। প্রতিবছর দেশে গড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার বা এর চেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয় সড়কে। আহত হওয়ার সংখ্যাও কম নয়। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণের পর খোঁজ রাখে না কেউ। দিবস এলেও নিরাপদ সড়কের দাবি পোশাকি পালনের মধ্যেই থাকে সীমাবদ্ধ। আদতে সড়ক থেকে যাচ্ছে সেই অনিরাপদ। সবার জন্য সড়ক নিরাপদ করতে চার বছর আগে ২০১৮ সালে বড় ধরনের আন্দোলন করেছিল শিক্ষার্থীরা। সরকারের পক্ষ থেকে তখন সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর বিষয়ে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এরপর অবশ্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন আসেনি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর চার বছর পর হলেও নিরাপদ হয়নি সড়ক। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে ঢাকায় মেয়ের বাসায় বেড়াতে আসেন মুজিবুল হক ভূঁইয়া (৬৫)। তবে শেষ পর্যন্ত মেয়ের বাসায় পৌঁছাতে পারেননি। গত ২ অক্টোবর বিকেল পৌনে ৫টার দিকে রাজধানীর উত্তর বাড্ডার প্রগতি সরণি এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময় কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কা লাগে তার। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পূজার কেনাকাটা করে বাড়ি ফেরার পথে ট্রাক ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে চম্পা রানী রায় (২২) ও তার ভাগনে জয় রায় (৫) নিহত হয়। পুলিশ জানায়, চম্পা তার ভাগনে জয়কে নিয়ে দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার সেতাবগঞ্জ শহরে পূজার কেনাকাটা করতে যান। কেনাকাটা শেষে তারা মোটরসাইকেলে করে বাসায় ফিরছিলেন। পথে বোচাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ প্রধান ফটকের সামনে একটি ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন চম্পা। শিশু জয়কে বোচাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকেও মৃত ঘোষণা করেন। শেরপুর থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী একটি বাস ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার চেলেরঘাট আসতেই চাকা বিকল হয়ে যায়। পরে বাসটি রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে চাকা সারানোর চেষ্টা করছিলেন চালক ও স্টাফরা। তবে চাকা সারাতে কত সময় লাগবে এমন চিন্তা করে ওই বাসের কয়েকজন যাত্রী অন্য আরেকটি বাস থামিয়ে তাতে ওঠার চেষ্টা করেন। এসময় অপর একটি বাস এসে থেমে থাকা বাস ও যাত্রীদের ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনজন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে একজন ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুইজন মারা যান। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) রোড সেফটি শাখার তথ্যমতে, প্রতিদিন সারা দেশে ১০ থেকে ৩০ জন মারা যাচ্ছেন সড়ক দুর্ঘটনায়। এসব দুর্ঘটনায় আহত হচ্ছেন তিন থেকে ৫০ জন পর্যন্ত। সড়ক দুর্ঘটনা কমানো নিয়ে যত আলোচনা, পরামর্শ, তর্কবিতর্ক- এর প্রায় সবটাই রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক। ঢাকায় বসেই দুর্ঘটনা কমানোর নানা প্রতিশ্রুতি দেন মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ সরকারের নীতি-নির্ধারকরা। অথচ খোদ ঢাকায় দুর্ঘটনা ও মৃত্যু কমার বদলে বাড়ছেই। গত বছর সারা দেশে যত দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার প্রায় ২৭ শতাংশই হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এমনকি দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ঢাকার সড়কেই দুর্ঘটনা ও মৃত্যু এখন সর্বোচ্চ। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক নিরাপদ করার কথা সরকার মুখে যেভাবে বলছে, বাস্তবে সেভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রেই সরকারের উদ্যোগে উদাসীনতা দেখা যায়। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে এবং নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে কী করণীয়, তা সরকারের অজানা নয়। কিন্তু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থের কারণে প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা বাস্তবায়নে উদ্যোগের যথেষ্ট অভাব। হাঁকডাকেই শেষ সড়ক নিরাপত্তা, থামছে না মৃত্যুর মিছিল দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তি এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের আর্থসামাজিক যে ক্ষতি হচ্ছে, তার একটা হিসাব তৈরি করেছে বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই)। প্রতিষ্ঠানটির হিসাব বলছে, গত তিন বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় এমন ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা। কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা যদি নির্ভরশীল মানুষের তুলনায় বেশি হয়, তাহলে সেটিকে জনসংখ্যা বোনাস বা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বলা হয়। বাংলাদেশ এ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের জন্য গর্ব করে। সড়ক দুর্ঘটনা এ গর্বের জায়গাতেই বেশি আঘাত হানছে। পুলিশের তথ্যভান্ডার বিশ্লেষণ করে এআরআই বলছে, গত এক দশকে দেশের সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ৫৪ শতাংশের বয়স ১৬ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। আর দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের সাড়ে ১৮ শতাংশ শিশু। এদের বয়স ১৫ বছরের নিচে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব মতে, নিহতদের ৫১ শতাংশ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মানবসম্পদের যে ক্ষতি হয়েছে, তার আর্থিক মূল্য ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ৮ হাজার মানুষের প্রাণহানির তথ্য মিলেছে। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, সড়কে প্রতিদিন ৬৪ জনের প্রাণহানি ঘটছে। এ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ হাজার ৩৬০ জন নিহত হন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হচ্ছেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ। আহতদের মধ্যে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ছেন। এর মধ্যে ১২ হাজারের বেশি শিশু, যাদের বয়স ১৭ বছরের কম। এ হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ২২০ জন প্রতিবন্ধী হচ্ছে কেবল সড়ক দুর্ঘটনায়। তবে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য আরও ভয়াবহ। সংস্থাটির হিসাব বলছে, সারা বিশ্বে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান ১৩ লাখ মানুষ। বছরে বাংলাদেশে মারা যান ২৪ হাজার ৯৫৪ জন। সংস্থাটির তথ্যমতে, হতাহতদের ৬৭ শতাংশই ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছেন ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সীরা। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনাজনিত জিডিপির ক্ষতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। হেলমেট-সিটবেল্ট ব্যবহারে মৃত্যুঝুঁকি কমানো সম্ভব ঢাকা আহছানিয়া মিশন বলছে, প্রতিবছর বিশ্বে ১৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অব রোড সেফটি ২০১৮’ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাঁচ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। আর এসব মৃত্যুর ৯০ শতাংশ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে হয়। হেলমেট পরিধান সরাসরি দুর্ঘটনার ঝুঁকির উৎস নয়, তবে দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের হার কমাতে ভূমিকা রাখে। সঠিকভাবে হেলমেট ব্যবহারে দুর্ঘটনায় মৃত্যুঝুঁকি ৪০ শতাংশ কমাতে পারে এবং মাথার আঘাতের ঝুঁকি ৭০ শতাংশ কমানো সম্ভব। সিটবেল্ট ব্যবহার চালক ও সামনের আসনে যাত্রীর মধ্যে মৃত্যুঝুঁকি ৪৫-৫০ শতাংশ এবং পেছনের আসনের যাত্রীদের মৃত্যু এবং গুরুতর আঘাতের ঝুঁকি ২৫ শতাংশ কমায়। শিশুদের জন্য নিরাপদ বা সুরক্ষিত আসন একইভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু যাত্রীদের বিশেষ করে ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ এবং বড় শিশুদের ক্ষেত্রে ৫৪-৮০ শতাংশ মারাত্মক আঘাত পাওয়া এবং মৃত্যু কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি পাঁচ লাখের বেশি উচ্চ রক্তচাপ-চোখের সমস্যায় ভুগছেন অধিকাংশ চালক ১০ বছরে হানিফ ফ্লাইওভারে ১১৪৬ জন নিহত, বেশি দুর্ঘটনা মোটরসাইকেলে হাঁকডাকেই শেষ সড়ক নিরাপত্তা, থামছে না মৃত্যুর মিছিল সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সাউদি লুব্রিক্যান্টসের ‘সেইফ হাইওয়েজ’ সেভ দ্য রোডের মহাসচিব শান্তা ফারজানা বলেন, দেশে সড়ক সংস্কারের অভাবে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা বাড়ছে। পৃথক বাইক লেন না থাকায় ৬৬টি জাতীয় মহাসড়ক এবং ১২১টি আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং প্রায় ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ সেতুতে দুর্ঘটনার পাশাপাশি আহত এবং নিহতর সংখ্যা বাড়ছে। জাতীয় মহাসড়কের সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ৯০৬ দশমিক শূন্য ৩ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ৪৮২ দশমিক ৫৪০ কিলোমিটার। এছাড়া জেলা সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ১৩ হাজার ২০৬ দশমিক ৯২৩ কিলোমিটার এবং উপজেলা পর্যায়ের সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ১০ হাজার ৮ দশমিক শূন্য ৫০ কিলোমিটার। সারা দেশে মোট ৩১ হাজার ৬০৩ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার সড়কের ১৭ হাজার ২২২ দশমিক ২৫ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের অভাবে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা বাড়ছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার থাকলেও সড়ক নিরাপত্তায় দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই। দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিএ ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে রোড সেফটি ইউনিট গঠিত হলেও মূলত গণমাধ্যমে কথা বলা ছাড়া দুর্ঘটনা প্রতিরোধে তাদের কোনো গবেষণা কার্যক্রম নেই। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে নানান ইউনিট ও প্রতিবছর ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট থাকে। অথচ সড়ক দুর্ঘটনা থেকে দেশের মানুষকে রক্ষায় কোনো বাজেট নেই। এ মন্ত্রণালয়ে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কোনো গবেষক নেই, গবেষণা নেই, কোনো বাজেট বরাদ্দ নেই। ফলে প্রতিবছর সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছেই। নিরাপদ সড়ক চাই’র মহাসচিব লিটন এরশাদ বলেন, ২০১৮ সালের আইন এবং প্রধানমন্ত্রীর ২৩টি নির্দেশনা কিছু কিছু জায়গা বাস্তবায়ন হয়েছে, কিছু কিছু জায়গায় হয়নি। আইনের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, যে কারণে আমরা আইনের বিধিমালা করার প্রস্তাব করি। সরকার এই বিধিমালা বাস্তবায়ন করেছে। আইনকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে হলে বেশকিছু ইনফাস্ট্রাকচারগত এবং প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। বিশেষ করে যাত্রী ও পথচারীর বিষয়ে আইন অস্পষ্ট। যে কারণে তাদের নিরাপত্তার জায়গা স্পষ্ট হয়নি। পরিবহন খাতের তুমুল বিরোধিতার মধ্যে এই আইন উঁকিঝুঁকি মারছে। একবার আলোতে আসে আবার পেছনে চলে যায়। এই দোদুল্যমান অবস্থায় গত ৫ বছর ঢেউয়ের মতো খেলা হচ্ছে। যে কারণে সড়কের নিরাপত্তা এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি বলেই সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের দাবির চেয়ে সরকার নিজের কমিটমেন্ট রক্ষার যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করা জরুরি। এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হলে এটি দ্রুত করা প্রয়োজন। ঢাকা আহছানিয়া মিশনের রোড সেফটি প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী শারমিন রহমান বলেন, একটি দুর্ঘটনা ঘটলে দেখা যায় কোনো না কোনো শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ৫-২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর ৮ম বৃহত্তম কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অব রোড সেফটি ২০১৮ এর তথ্য অনুসারে, সারাবিশ্বে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১০ লাখ ৩০ হাজার মানুষ সড়কে মারা যাচ্ছে এবং আহত হচ্ছে গড়ে প্রায় ৫ কোটি। এসব মৃত্যুর ৯০ শতাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে হয়। রোড ক্র্যাশের ফলে দেশে শতকরা ৫ ভাগ জিডিপি কমে যাচ্ছে। যানবাহনে শিশুবান্ধব আসনের ব্যবহার শিশুদের সড়ক দুর্ঘটনায় আঘাতের ঝুঁকি ৭১ শতাংশ থেকে ৮২ শতাংশ হ্রাস করে। তিনি বলেন, উচ্চগতি এবং গাড়িতে আটকে থাকা রাস্তা, চালকদের বেপরোয়াতায় ভ্রমণের সময় শিশুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই শিশুদের নিরাপদ পরিবহনের জন্য তাদের উপযোগী সুরক্ষিত আসন অত্যন্ত জরুরি। শিশুদের সুরক্ষিত আসনের অভাব। বাংলাদেশের সড়ক ও সড়ক পরিবহন শিশুবান্ধব নয়। শিশুদের জন্য উপযোগী যানবাহন নেই। সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ তে শিশুদের সুরক্ষিত আসন নিয়ে কিছু বলা নেই। কিন্তু আমাদের দেশের যানবাহনে শিশুআসন খুবই জরুরি। তাই বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে যানবাহনে (বিশেষ করে ছোট গাড়িতে) শিশুদের জন্য সুরক্ষিত আসন প্রচলনে আইন আবশ্যক। বুয়েটের দুর্ঘটনা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, সড়ক নিরাপদে প্রথমেই জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল (এনআরএসসি) রোড সেফটির অথরাইজড বডি। তাদের দায়িত্ব সব স্টেকহোল্ডারদের যে কার্যক্রম তা মনিটর করা। সড়ক নিরাপদ করতে এরই মধ্যে ১১১টি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা এখনো বাস্তবায়ন হচ্ছে না এবং ধীরগতি। যারা রাস্তা নির্মাণ করছে সেটি নিরাপদ কি না তা চেক করা তাদের দায়িত্ব। গাড়ির মালিকের উচিত চালককে তিনি যে গাড়ি দিচ্ছেন তার সঠিক লাইসেন্স আছে কি না নিশ্চিত করা। চালক দক্ষ কিংবা শারীরিক কোনো সমস্যা আছে কি না সেটিও চেক করা। সর্বোপরি সড়ক ব্যবহারে সবাইকে সচেতন থাকা। আইন মানার ক্ষেত্রে সবাই সচেতন হলে সড়কে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে। |