গরমে মশারি টানাতে অনীহা রোগীদের
|
সারাদেশের মতো বরিশালেও বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বিভাগের জেলাগুলোতে লাফিয়ে লাফিয়ে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসা করাতে বেগ পেয়ে বেশিরভাগ রোগীই ভিড় করছেন বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে। রোগীর সংখ্যা বাড়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তবে ভর্তি হওয়া রোগীদের মশারি টানাতে অনীহা প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তারা বলছেন, ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা না থাকায় গরমে মশারি টানিয়ে রাখা যায় না। রোববার (২৩ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শেবাচিম হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ড ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। এদিন সকাল থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নতুন করে ৯ ডেঙ্গু রোগীকে হাসপাতারে ভর্তি হতে দেখা যায়। এদের মধ্যে পাঁচজন নারী ও চারজন পুরুষ ছিলেন। আর হাসপাতালে মোট ভর্তি ছিলেন ২১৪ জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগী মো. শামীম বলেন, ‘ঢাকার ধানমন্ডি বাসায় থাকাকালীন জ্বরে আক্রান্ত হই। পরে বরিশাল এসে হাসপাতালে ভর্তি হলে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। কিন্তু ডেঙ্গু ওয়ার্ডের যে অবস্থা গরমে থাকা যায় না। যে পরিমাণ ফ্যান দরকার তার অর্ধেকও নেই। তবে ডাকলেই চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে।’ আরেক রোগী বাপ্পী ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে এক সপ্তাহ আগে শেবাচিমে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু এখনো প্লাটিলেট বাড়েনি। ওয়ার্ডে বেড সংকট থাকায় খুব কষ্ট হচ্ছে। বরগুনার পাথরঘাটা থেকে আসা সবুজ বলেন, ‘প্রথমে ঢাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হই। পরে বাড়ি গিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হই। সেখান থেকে চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে রেফার করেন। দুদিন হলো শেবাচিমে চিকিৎসা নিচ্ছি।’ তবে হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, রোগীদের মশারি টানাতে অনীহা। ডেঙ্গু ওয়ার্ডে কর্মরত নার্স শিরিন আক্তার বলেন, ‘আমরা রোগীদের একটু পরপরই মশারি টানানোর জন্য বলছি। যখন বলি ওখন মশারি টানায়। তবে একটু সরলেই মশারি খুলে ফেলে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নার্স রোগীদের পাশে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো? এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে তাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে। অন্যথায় তাদেরই ভুগতে হবে।’ ডেঙ্গু ওয়ার্ডে কর্মরত চিকিৎসক মাশরেফুর রহমান বলেন, ‘সচেতন না হওয়ায় অনেকেই দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আমরা সাধ্যমতো রোগীদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের চিকিৎসক স্বল্পতা আছে, তারপরও সাধ্যমতো সেবা দিয়ে যাচ্ছি। নার্স পর্যাপ্ত থাকলেও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংকট রয়েছে। তবে চিকিৎসা সংক্রান্ত সব উপকরণ মজুত আছে আমাদের এখানে। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় ২০০ শয্যা রয়েছে। আরও ১০০ শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে তা ব্যবহার করা হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ দাস বলেন, গত ১ জানুয়ারি থেকে বিভাগের হাসপাতালগুলোতে দুই হাজার ৮৭২ জন রোগী ভর্তি হন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন দুই হাজার ১৮৪ জন। বিভাগে এখন পর্যন্ত তিন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। |