মুমিন তওবা করবে এবং গুনাহমুক্ত জীবনে ফিরে আসবে
|
রমজান মাসে তওবার মাধ্যমে গুনাহমুক্ত থেকেছে মুমিন রোজাদার। গুনাহ থেকে ফিরে আসা মানুষের এ পথচলা অব্যাহত রাখা জরুরি। এ জন্য রমজান পরবর্তী এ সময়েও তওবাহ-ইসতেগফারে নিয়োজিত থাকার বিকল্প নেই। মানুষ গুনাহ ও ভুল-ত্রুটি থেকে মুক্ত নয়। প্রত্যেক আদম সন্তান গুনাহ করে তবে সর্বোত্তম পাপী হলো, তওবাকারী। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বাণীতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন- وَأَنِ ٱسۡتَغۡفِرُواْ رَبَّكُمۡ ثُمَّ تُوبُوٓاْ إِلَيۡهِ يُمَتِّعۡكُم مَّتَٰعًا حَسَنًا إِلَىٰٓ أَجَلٖ مُّسَمّٗى وَيُؤۡتِ كُلَّ ذِي فَضۡلٖ فَضۡلَهُۥۖ وَإِن تَوَلَّوۡاْ فَإِنِّيٓ أَخَافُ عَلَيۡكُمۡ عَذَابَ يَوۡمٖ كَبِيرٍ আল্লাহ তাআলা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার কথা এভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন- (হে মুহাম্মাদ) আপনি বলুন, আমিও তোমাদের মতই মানুষ, তবে আমার প্রতি ওহী আসে যে, তোমাদের মা‘বুদ একমাত্র মা‘বুদ। অতএব তাঁরই পথ দৃঢ়ভাবে অবলম্বন কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর।’ (সুরা হা-মীম-সিজদাহ: আয়াত ৬) আল্লাহ তাআলা মুমিনদের উদ্দেশ্যে তওবার করার নির্দেশ দিয়ে বলেন- মানুষ আল্লাহর কাছে কীভাবে ক্ষমা করবেন, কীভাবে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ তাআলা মানুষের পাপগুলো মুছে দেবেন সে বর্ণনা তুলে ধরে মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন- হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর, খাঁটি তওবা। আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত।’ (সুরা আত-তাহরিম: আয়াত ৮) নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তওবাকারী এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন।’ (সুরা আল-বাকারা: আয়াত ২২২) নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকের একাদিক বর্ণনা তওবাকারীর কথা এভাবে তুলে ধরেছেন- ২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- আল্লাহর শপথ! অবশ্যই আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি ও ৭০ বারেরও অধিক তাওবা করি।’ (বুখারি ৬৩০৭) ৩. হজরত আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- বান্দা যখন আল্লাহর কাছে তওবা করে, তখন আল্লাহ ওই ব্যক্তির চেয়েও বেশি খুশি হন, যে বিশাল বিস্তৃত মুরুভূমিতে সফর করছিল, হঠাৎ তার বাহন হারিয়ে গেল, যে বাহনে তার খাদ্য ও পানীয় ছিল। কোনো উপায় না দেখে সম্পূর্ণ নিরাশ হয়ে মৃত্যুর অপেক্ষায় একটি গাছের ছায়ায় সে শুয়ে পড়লো। এমতাবস্থায় হঠাৎ বাহনটি তার পাশেই উপস্থিত হলো। সে লাগাম হাতে নিয়ে আনন্দের অতিশয্যে বলে ফেললো, আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা এবং আমি তোমার প্রভু। অতি আনন্দে ভুল বলে ফেলল।’ (মুসলিম ২৭৪৭) আল্লাহ তাআলা বান্দার তওবাতে বেশি খুশি হওয়ার কারণ হচ্ছে- তিনি তওবা ও ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। অনুরূপভাবে তিনি এটাও ভালোবাসেন যে বান্দা তার কাছ থেকে পলায়ন করার পর আবার তার কাছে ফিরে আসছে। ৪. হজরত আনাস এবং ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুম বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- বনি আদমের যদি স্বর্ণের একটি উপত্যকা থকে, তাহলে সে তখন দু’টি উপত্যকার কামনা করে। মাটিই একমাত্র তার মুখ ভরতে পারে। আর যে তওবা করে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন।’ (বুখারি ৬৪৩৬, মুসলিম ১০৪৯) সুতরাং বোঝা গেলো তওবা হলো, আল্লাহর নাফরমানি ছেড়ে, তার আনুগত্যে ফিরে আসা। যখনই বান্দার মাঝে প্রভুর অবাধ্যতা প্রকাশ পাবে, তখন সেটা থেকে তওবা হচ্ছে, তার কাছে ভীত, সন্ত্রস্ত, লজ্জিত ও নত হয়ে ফিরে আসা ও তার দরজায় দাড়ানো। গুনাহ বা অন্যায় হয়ে গেল তাৎক্ষণিকভাবে তওবা করা ওয়াজিব। অন্যায়ের পর তওবার ক্ষেত্রে বিলম্ব করা বা গড়িমসি করা জায়েয নেই। কারণ, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারে আদেশ করেছেন। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদেশ তৎক্ষণাৎ পালনীয়। কারণ, বান্দার জানা নেই যে, বিলম্বে কী পরিণতি হবে। হতে পারে হঠাৎ তার মৃত্যু এসে যাবে, আর তওবার সুযোগ ঘটবে না। তওবা কবুল হওয়ার শর্ত দ্বিতীয় শর্ত: কৃত অপরাধের জন্য লজ্জিত হতে হবে তৃতীয় শর্ত: তৎক্ষণাৎ সে গুনাহ বর্জন করা চতুর্থ শর্ত: ভবিষ্যতে আর গুনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প করা পঞ্চম শর্ত: তওবা কবুলের সময় অতিক্রান্ত না হওয়া মনে রাখতে হবে, গুনাহে লিপ্ত থাকা অবস্থায় তওবা কবুল হয় না। উদাহরণস্বরূপ- যতক্ষণ পর্যন্ত তওবা কবুল হয় যে দিন আপনার পালনকর্তার কোনো নিদর্শন আসবে, সে দিন এমন কোনো ব্যক্তির ঈমান আনয়ন তার জন্য ফলপ্রসু হবে না যে আগে থেকে ঈমান আনয়ন করেনি কিংবা স্বীয় ঈমান অনুযায়ী কোনোরূপ সৎকর্ম করেনি।’ (সুরা আল-আনআম: আয়াত ১৮৫) তওবা সর্বদা কবুল হতে থাকে সূর্য পশ্চিম আকাশ হতে উদিত হওয়া পর্যন্ত। উদয় হলে প্রত্যেকের অন্তরে মোহর মেরে দেওয়া হয়। মানুষের জন্য তার আমল যথেষ্ট হয়ে যায়।’ (আহমাদ ১/১৯২; ইবন কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া পৃ. ১৩৭) হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয়ের আগে তওবা করবে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন।’ (মুসলিম ২৭০৩) যখন তওবা কবুল হবে না وَلَيۡسَتِ ٱلتَّوۡبَةُ لِلَّذِينَ يَعۡمَلُونَ ٱلسَّئَِّاتِ حَتَّىٰٓ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ ٱلۡمَوۡتُ قَالَ إِنِّي تُبۡتُ ٱلۡـَٰٔنَ আর এমন লোকদের তওবা কবুল হবে না যারা মন্দ কাজ করে। এমনকি যখন তাদের কারো কাছে মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন বলতে থাকে আমি এখন তওবা করছি।’ (সুরা আত-তাওবা: আয়াত ১৮) হজরত আবদুল্লাহ ইবন ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- নিশ্চয়ই আল্লাহ বান্দার তাওবা গরগরার (রূহ ওষ্ঠাগত হবার) পূর্ব পর্যন্ত কবুল করেন।’ (মুসনাদে আহমাদ ২/১৩২, তিরমিজি ৩৫৩৮, ইবনে মাজাহ ৪২৫৩) যখনই মুমিন বান্দা সব শর্ত পূরণের মাধ্যমে তাওবা করবেন, তখন তার তওবা বিশুদ্ধ ও গৃহীত হবে। আল্লাহ তাআলা বান্দার গুনাহসমূহ মুছে দেবেন। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন- قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ (হে রাসুল!) আপনি বলুন, হে আমার বান্দারা যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছো তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করবেন। তিনি ক্ষমাশীল দয়ালু।’ (সুরা আয-যুমার: আয়াত ৫৩) ‘যে গুনাহ করে কিংবা নিজের ওপর জুলুম করে এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তখন সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও করুণাময় পাবে।’ (সুরা আন-নিসা: আয়াত ১১০)
|