ইসলাম কি গনতন্ত্রের পক্ষে না বিপক্ষে ??
|
মোঃ সানাউল্লাহ, মালয়েশিয়াঃ গণতন্ত্রের দুইটা ডাইমেনশন আছে একাট হল ম্যানেজমেন্ট আরেকটা হল এর আইনের উৎস। যখন কোন ইসলামী গণতান্ত্রিক দল গণতন্ত্রকেও ইসলাম সম্মত বলে, তারা মূলত গণতন্ত্রের ম্যানেজমেন্টের কথা বলে। কারণ ম্যানেজমেন্ট তো মানুষে সুবিধার জন্য তৈরী করা বিভিন্ন টেকনিক। মুসলিমরা রোমান-পারসিদকের থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন টেকনিক পূর্বেও এডপ্ট করেছিল। সেগুলো কি তাহলে ইসলাম সম্মত ছিল না? এর উত্তর হচ্ছে, বিষয়টা ইসলাম সম্মত হবার বিষয় না, বিষয়টা হল, তা ইসলামের কোন মূলনীতি ব্রেক করে কিনা। খিলাফতের রাশিদার পর, যেসব খিলাফত, সালতানাত এসেছিল, তাদের সকল কাজ তো শরীয়াতের মূল উৎস না, আদর্শ খিলাফতের নমুনাও না। হতে পারে কাফিরদের বিভিন্ন টেকনিক এডপ্ট করা হালাল অথবা হারাম। এখানে কুফরের আলাপ করছি না। কুফরের আলাপ আসে, তখন যখন আইনের উৎসের কথা বলা হয়। পূর্বে গণতান্ত্রিক ইসলামী দলগুলোর ধারণা ছিল গণতন্ত্র শুধুই ম্যানেজমেন্টের ইস্যু। অর্থাৎ একে ইসলামীকরণ করা সম্ভব। আইনের উৎস হিসেবে তারা সেকুলারসিমকে চিহ্নিত করতো, এবং এটাকে কুফরও ভাবতো। কিন্তু যারা গণতন্ত্রকে কুফর বলে, তারা আসলে সেকুলারিসম আর গণতন্ত্র উভয়টাকেই একসাথে কুফর বলে। কারণ গণতন্ত্র তার চারিত্রিক কারণে সেকুলার। কিভাবে? বিষয়টা বুঝিয়ে বলি। যেমন একমাত্র বিধান দাতা আমাদের স্রষ্টা আল্লাহ তাআলা এবং কুরআন-সুন্নাহই আইনের উৎস ধরে নেয়া হলে, সেকুলারিসমের মূল কথা আর থাকছে না – তা হল রাষ্ট্র পরিচালনায় আসমানী বিধান চলবে না। আর গণন্ত্রের মূল নীতি হল রাষ্ট্র যাদের শাসন তাদের। কিন্তু এখানে একটা সূক্ষ্ণ পার্থক্য আছে যে, জনগণ যদি ইসলামী শাসন চায়, তাহলে গণতন্ত্র অনুযায়ী রাষ্ট্রে ইসলামী শাসনই চলবে। কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং লিখিত সাংবিধানিক পদ্ধতিতে পার্লামেন্ট ব্যবস্থায় জনগণই আইনের উৎস। অর্থাৎ জনগণ ইসলামী আইন আনলেও, আদতে সেটা জনগণ চেয়েছে তাই, আল্লাহ ফরজ করেছেন এ জন্য না। জনপ্রতিনিধিদের ইসলাম কায়েম করতে হলে প্রতিটা ফরজ ইস্যুকে সংসদে পাশ করাতে হবে, নতুবা তা কায়েম হবে না। অর্থাৎ তা গণতন্ত্রই, ইসলাম না। হ্যাঁ যদি জনগণ একেবারে সেকুলারিসমের মূলনীতি অস্বীকার করে ফরজ বিষয়গুলো নিঃশর্তভাবে রাষ্ট্রে কায়েম করা কথা লিখে দেয়, এবং সেটা কায়েম হয় – তখন আর কুফরের বিষয়টা থাকছে না। কিন্তু গণতন্ত্র কখনোই সেকুলারিসমকে তার অস্তিত্বগত কারণেই বিনাশ করতে দিবে না। কারণ গণতন্ত্র হল একটা ধারণা বা একটা ন্যারেটিণ একটা শব্দ, একটা ধর্ম ব্যবস্থা – যেটা গণতান্ত্রিক ধর্মের ব্যবসায়ীরা এ কারণে করে থাকে যেন নিজেদের মত জনগণের নামে চাপিয়ে দেয়া যায়, বৈধতা অর্জন করা যায়। এবং এই যে, নিজেরা নিজেদের মনমত আইন বানাবে, আল্লাহ যা হালাল করেছেন তা হালাল, যা হারাম করেছেন তা হারাম – এর বিপরীতে যাওয়ার অধিকারটাই হল সেকুলারিসম। প্রত্যেক ধর্মের নাগরিকদের সাথে সুবিচার করা, কিংবা পক্ষপাতিত্ব না করা আসলে সেকুলারিমের মূল বিষয় না, যেটা ধর্মনিরপেক্ষতার নামে অনেক সেকুলাররাই রেটোরিক হিসেবে প্রচার করে। বাস্তবতা হল সেকুলাররা তারা সেকুলার ধর্মের বাহিরের সকলের সাথে বৈষম্য করে, তাদের ন্যায্য অধিকার দেয়া তো দূরে কথা, কোন স্পেস দিতেই রাজি নয়। সেকুলারিসম হল স্বৈরচারের সবচেয়ে বড় হাতিয়াড় – আর প্রতিটা তথাকথিত গণতন্ত্র একটা সময় গিয়ে তার স্বৈরাচারী রূপ প্রকাশ করবে। কারণ সে স্বৈরাচার বলেই নিজেদের খেয়াল খুশিকে ”গণের” আকাঙ্ক্ষা হিসেবে প্রচার করে ক্ষমতায় পাকাপোক্ত হয় – এরপর নিজেদের ক্ষমতা নিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে গেলেই তার চূড়ান্ত আগ্রাসী স্বৈরাচারী রূপ প্রকাশ করতে থাকে। |