ফেসবুকে নিরাপদে থাকতে যে জিনিষগুলো শেয়ার করা যাবে না
|
দিনে দিনে বাড়ছে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা। আর ফেসবুককে কেন্দ্র করে ঘটছে নানান অপরাধমূলক ঘটনা। অপহরণ, আর্থিক প্রতারণাসহ ঘটছে সাম্প্রদায়িক উস্কানির মতো ঘটনাও। এজন্য নিরাপদে থাকতে ফেসবুকে যে কোনো কিছুই শেয়ার করা যাবে না। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক খুবই জনপ্রিয়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই মাধ্যমটিতে রীতিমত ব্যবহারকারীরা আসক্ত হয়ে পড়ছেন। এ কারণে প্রতারণার ফাঁদ হিসেবে এখন প্রতারক চক্রের লক্ষ্য ফেসবুক। প্রতারকরা বিভিন্নভাবে প্রতারণা করেন ফেসবুকে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে- ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট হাতিয়ে নিয়ে তা ফেরত দেয়ার কথা বলে টাকা দাবি করা। কখনো আবার ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আপত্তিজনক, অনাকাঙ্ক্ষিত বা অপরাধমূলক কিছু পোস্ট করা। যে কারণে বিপদ ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এমন ঘটনার মুখোমুখি প্রায়ই হচ্ছেন মানুষ। থানায় জমা পড়ছে অপহরণ, আর্থিক প্রতারণাসহ শত শত অভিযোগ। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি। নিরাপদে থাকবেন আপনিও। নিরাপদ থাকতে ফেসবুকে যেসব কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে- ১. গোপন রাখতে হবে ফোন নাম্বার ফেসবুক আপনার একাউন্ট ভেরিফাই করার জন্য ফোন নম্বর চায়। আপনি ফোন নম্বর ব্যবহার করতে পারেন। তবে তা হাইড করে রাখাই উত্তম। ফোন নম্বর ‘পাবলিক’ করে রাখলে হয়তো কখনো দুই-একজন শুভাকাঙ্খীর ফোন পেলেও অযাচিত কল আপনার বিরক্তির কারণ হতে পারে। ২. বন্ধু তালিকা করতে হবে সীমিত যত বেশি বন্ধু তত বেশিই আপনার ব্যাক্তিগত তথ্য ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে। কারণ সবার পরিচয় আপনার জানা নাও থাকতে পারে। তাই অচেনা মানুষকে বন্ধু তালিকায় রাখা থেকে বিরত থাকতে হবে। সন্তান বা পরিবারের ছোট সদস্যদের ছবি শেয়ার করা যাবে না অনেকেই অনেক সময় সন্তান বা পরিবারের ছোট সদস্যদের আনন্দঘন মুহূর্তের ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেন। এতে বাচ্চাদের ছবির পোস্ট দেখে দুষ্কৃতিকারীরা বা কিডন্যাপাররা সুযোগ নিতে পারে আপনার সন্তানের ক্ষতি করার। ৩. জন্মদিন গোপন রাখুন আপনার জন্মদিনের তারিখ বা এর সাথে নাম, ঠিকানা হতে পারে আপনার গোপনীয়তা রক্ষার খাতিরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যার মাধ্যমে হ্যাকাররা আরও সহজে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা ব্যক্তিগত বিবরণ হস্তগত করে নিতে পারেন। তাই ফেসবুকের একাউন্ট সেটিংসে গিয়ে জন্ম তারিখ হাইড করে রাখুন। ৪. রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস না দেয়াই ভালো অনেকেই জীবনসঙ্গী পেলে বা প্রেমে পড়লে ফেসবুকের রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস পরিবর্তন করেন। নতুন রিলেশন উদযাপন কারতে চাইলেও তা ফেসবুকে করা ঠিক নয়। কারণ সম্পর্ক ভেঙ্গেও যেতে পারে এবং পরবতীতে ‘ইন এ রিলেশনশিপ’ থেকে ‘সিঙ্গেল’ স্ট্যাটাসে যাওয়াটা আরও বিব্রতকর। এটা নিয়ে অনেকসময় হাস্যরসের কারণ হতে পারেন। ৫. চেক-ইন পরিহার করুন অনেক সময় কোথাও ঘুরতে গেলে সে জায়গায় চেক ইন দিয়ে পোস্ট করেন অনেকে। এটি করলে দুষ্কৃতিকারীরা আপনার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে অবগত হবে। এতে আপনার ক্ষতির সম্ভবনা তৈরি হতে পারে। ৬. ক্রেডিট কার্ডের তথ্য দেয়া যাবে না ফেসবুক প্রোফাইল থেকে নাম, জন্মতারিখ, জন্মস্থান, বাসা বা অফিসের ঠিকানা জেনে ক্রেডিট কার্ড বা ইমেইল বা ফেসবুক আইডি হ্যাকের সম্ভাবনা রয়েছে। ফেসবুকের কোনো অ্যাপ রিকোয়েস্টে কখনোই নিজের ক্রেডিট কার্ডের তথ্য দেয়া যাবে না। পোস্ট বুস্ট করতে চাইলে বা কেনাকাটা করতে চাইলে এমন কার্ড ব্যবহার করতে হবে যেটির একাউন্টে সাধারণত খুব বেশি অর্থ থাকে না। এছাড়া ফেসবুক হ্যাক হলেও আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলেও কিছু উপায়ের মাধ্যমে তা ফিরে পাওয়া সম্ভব। যেভাবে পুনরুদ্ধার করবেন হ্যাক হওয়া আইডিটি- ১. পাসওয়ার্ড রিসেট বিভিন্ন কৌশলে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়েই দ্রুত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ফেলে হ্যাকাররা। ফলে ব্যবহারকারীরা চাইলেই নিজেদের অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারে না। এমনকি নতুন করে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা যায় না। ফলে অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হলে প্রথমেই পাসওয়ার্ড রিসেট করতে হবে। এ জন্য ফেসবুক ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ‘Forgotten password?’ অপশনে ক্লিক করে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় দেয়া মুঠোফোন নম্বর বা ই-মেইল ঠিকানা লিখতে হবে। এবার ‘Reset Your Password’ অপশনে ক্লিক করলেই পাসওয়ার্ড রিসেট হবে। ফলে নতুন পাসওয়ার্ড দিয়ে আবার ফেসবুকে প্রবেশ করা যাবে। ২. ফেসবুকে অভিযোগ ফেসবুক আইডি হ্যাক করে হ্যাকাররা যদি অ্যাকাউন্ট খোলার সময় দেয়া মুঠোফোন নম্বর এবং ই-মেইল ঠিকানা পরিবর্তন করে ফেলে, তবে চাইলেও পাসওয়ার্ড রিসেট করে ফেসবুকে প্রবেশ করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই আইডি হ্যাক হওয়ার বিষয়ে ফেসবুকের কাছে অভিযোগ করতে হবে। এ জন্য www.facebook.com/hacked ঠিকানায় প্রবেশ করে my account is compromised অপশনে ক্লিক করতে হবে। এরপর অ্যাকাউন্টটিতে থাকা মুঠোফোন নম্বর, ই-মেইল বা ব্যবহারকারীর নাম লিখে সতর্কতার সঙ্গে অ্যাকাউন্টটি শনাক্ত করতে হবে। এবার ‘security check’ অপশনে ক্যাপচা (বিশেষ কোড) লিখলেই অ্যাকাউন্টটির পুরোনো পাসওয়ার্ডসহ নিরাপত্তাবিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্ন জানতে চাইবে ফেসবুক। প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দিয়ে সাবমিট অপশনে ক্লিক করলেই ফেসবুকের কাছে অভিযোগ জমা হবে। অভিযোগ পাওয়ার পর অ্যাকাউন্টটির মালিকানা যাচাইয়ের জন্য ফেসবুক সাধারণত ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা সময় নিয়ে থাকে। আপনার দেয়া সব তথ্য ঠিক থাকলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অ্যাকাউন্টটি ফিরিয়ে দেবে ফেসবুক। ৩. ভুক্তভোগীর করণীয় হ্যাকাররা অনেক সময় ফেসবুক আইডি হ্যাক করে বন্ধু তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের অশ্লীল মন্তব্য, ছবি বা ভিডিও পাঠিয়ে থাকে। কেউ আবার বিপদে পড়ার কথা বলে অর্থও চায়। শুধু তাই নয়, সমাজ বা রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন পোস্টও দিয়ে থাকে। আর তাই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলেই ফোনকল বা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইটের মাধ্যমে ফেসবুকে থাকা বন্ধুদের বিষয়টি জানাতে হবে। ফেসবুক হ্যাকের মাধ্যমে হয়রানি কিংবা বিড়ম্বনার শিকার হলে কালক্ষেপণ না করে নিকটস্থ থানা পুলিশকে অবহিত করুন এবং জিডি অথবা মামলা করুন। পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটে অভিযোগ করুন। ইমেইলে জানাতে পারেন cyberhelp@dmp.gov.bd ঠিকানায়। অথবা সরাসরি হেল্পডেস্কে কথা বলতে পারেন ০১৭৬৯৬৯১৫২২ নাম্বারে। |