বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশের অর্থনীতির সকল খবর নিচ্ছে আইএমএফ
প্রকাশ: শনিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র জানতে সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের প্রায় সব খবর নিচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। ঋণদাতা এই সংস্থাটিকে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের প্রকৃত অবস্থা জানাতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ কী পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ নিয়েছে— তার তথ্যও জানাতে হবে আইএমএফকে। এভাবে দেশের অর্থনীতির বেশ কিছু বিষয়ে জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশকে মানতে হচ্ছে সংস্থাটির দেওয়া বেশ কিছু শর্ত। বিনিময়ে আইএমএফের কাছ থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন (৪৭০ কোটি) ডলার ঋণ নিচ্ছে সরকার। সংস্থাটি ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাত কিস্তিতে এই ঋণ দেবে। ঋণের প্রথম কিস্তি ৪৭৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার গত ৩০ জানুয়ারি ছাড় করা হয়েছে। আগামী নভেম্বরে ছাড় হবে দ্বিতীয় কিস্তি। দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ পেতে যে শর্ত বা সংস্কারমূলক কাজ করার কথা, তার অগ্রগতি দেখতে আইএমএফ প্রতিনিধিদল এখন ঢাকায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের হালনাগাদ অবস্থা জানার পাশাপাশি আর্থিক খাতের নীতি ও কাঠামো সংস্কারের মধ্যে চলা বাংলাদেশের অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ও তা উত্তরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিকল্পনা জেনে নিচ্ছে আইএমএফ।

আলাদা আলাদা কয়েকটি বৈঠকে আর্থিক খাতের নীতি ও কাঠামো সংস্কারের যেসব উদ্যোগ গত জুলাই থেকে নেওয়া হচ্ছে, সেগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও ফলাফল আইএমএফ প্রতিনিধি দলের কাছে তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

বিশেষ করে বাণিজ্যক ব্যাংক পরিদর্শনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদ্ধতিতে আনা পরিবর্তন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে ঝুঁকিভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করা, ঋণ বিতরণে স্বচ্ছতা আনার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

প্রথম দিনের বৈঠক শেষে বিফ্রিংয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, ‘তারা (আইএমএফের প্রতিনিধি দল) সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের অগ্রগতি নিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছে। রিজার্ভ, জিডিপি, মূল্যস্ফীতি, বিনিময় হার, মূল্যস্ফীতি ও অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা নিয়ে সার্বিক আলোচনা হচ্ছে। শুধু ঋণকে আলাদা করে কোনও আলোচনা হয়নি। আমরা সামষ্ঠিক অর্থনীতির সব সূচক নিয়েই আলোচনা করছি।’

সফরকারী ৮ সদস্যের এ প্রতিনিধি দল ঢাকায় অবস্থানকালে বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়াও সরকারের নীতি নির্ধারকসহ অন্যদের সঙ্গে বৈঠক করবে।

আইএমএফের ঋণ চুক্তি অনুযায়ী, আগামী জুন ও সেপ্টেম্বরের মধ্যে যেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে, সেগুলোর বাস্তবায়ন পরিস্থিতি যাচাই করবে সংস্থাটি। এছাড়া ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে যেসব শর্ত বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে সরকার, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য আসছে বাজেটে কী কী উদ্যোগ থাকছে, তা-ও পর্যালোচনা করবে সংস্থাটি।

মিশনটি সুদের হার করিডর ব্যবস্থা বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ ও সময়, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক স্বায়ত্তশাসন ও শাসন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য আইএএমএফের ২০২২ সালের সুরক্ষা মূল্যায়নের সুপারিশের অবস্থা, বিনিময় হারের গতিবিধি, কার্ব মার্কেট, বিনিময় হার নীতি, বৈদেশিক ঋণ ছাড়ের তথ্য, সাম্প্রতিক বাণিজ্যিক পারফর্ম্যান্স, এফডিআই প্রক্ষেপণ, জাতীয় সঞ্চয়পত্র সংস্কার ইত্যাদি খতিয়ে দেখছে। বাংলাদেশকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কর্মক্ষমতার অবস্থা এবং নন-পারফর্মিং লোন ও রিক্যাপিটালাইজেশন, তারল্য ও বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির পাশাপাশি ঋণ কার্যক্রম মোকাবিলার পরিকল্পনার অবস্থা জানাতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত অ্যানুয়াল ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টে ব্যাংকগুলোর পুনঃতফসিল করা ঋণ এবং নন-পারফর্মিং লোনের তথ্য পৃথকভাবে তুলে ধরার শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। এ শর্ত পূরণে বাংলাদেশ ব্যাংক কী করছে, তা সফরকালে যাচাই করবে আইএমএফ মিশন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, আইএমএফ যেভাবে চাচ্ছে— কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছে। আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী, সুদের সীমা তুলে দেওয়া হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাবায়নে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘আমরা আমদানিতে মার্জিন বাড়িয়েছি অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে। কোনও পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করতে মার্জিন-বাড়ানো হয়। আবার কমানো হয়। সবই অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার অংশ। যখন যেটা প্রয়োজন হয় বাংলাদেশ ব্যাংক নিচ্ছে।’

তিনি উল্লেখ করেন, আগামী জুন পর্যন্ত রিজার্ভ যাতে আইএমএফের বেঁধে দেওয়া সীমার মধ্যে থাকে, সে ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংক থেকে জুনের মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলার পাওয়া যাবে। এছাড়া, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের কাছে ৪০০ মিলিয়ন ডলার, জাইকার কাছে ৩২০ কোটি ডলার এবং কোরিয়ার কাছে ১০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সাপোর্ট চেয়েছে সরকার, যা আগামী জুনের মধ্যেই পাওয়ার কথা। এসব ঋণ পাওয়া গেলে জুনের মধ্যে রিজার্ভে বাড়তি ১ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার যোগ হবে। এতে জুনের মধ্যে রিজার্ভের শর্ত পূরণ হতে পারে। এছাড়া আগামী সেপ্টেম্বরে ২৫ দশমিক ৩১৬ বিলিয়ন ডলারের শর্ত পূরণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় রিভিউ রিপোর্টের ভিত্তিতে আগামী নভেম্বরে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় করবে সংস্থাটি। ফলে সেপ্টেম্বরের মধ্যে শর্ত অনুযায়ী অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হবে বাংলাদেশকে।

যদিও আইএমএফ গত মার্চে ২২.৯৪৭ বিলিয়ন ডলার নিট রিজার্ভ রাখার শর্ত দিয়েছিল, যা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। আগামী জুনে ২৪.৪৬২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার শর্ত রয়েছে সংস্থাটির। আগামী সেপ্টেম্বরে নিট রিজার্ভের পরিমাণ বাড়িয়ে ২৫.৩১৬ বিলিয়ন ডলার এবং ডিসেম্বরে ২৬.৪১১ বিলিয়ন ডলারের সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে আইএমএফ।

বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করে না। সংস্থাটি গ্রস রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করে, যেখানে এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড, শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া ঋণ, দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত তহবিলের অর্থও রিজার্ভে দেখানো হয়। এসব অর্থ বাদ দিয়ে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে খরচ করার মতো যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশ ব্যাংকের রয়েছে, সেগুলোকে নিট রিজার্ভ হিসেবে চিহ্নিত করে আইএমএফ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ইডিএফের আকার ৭ বিলিয়ন ডলার থেকে কমিয়ে ৫.২ বিলিয়ন ডলার করেছে। ইডিএফ থেকে নতুন করে ঋণ বিতরণও কমানো হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘জুনের মধ্যে বাড়তি ৪ বিলিয়ন ডলার যোগ করতে পারলে আইএমএফ সন্তুষ্ট হবে। তা না-হলে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের আউটলুক প্রণয়ন করার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় বিবেচনা করে, সেটি সংশোধন করতে বলবে আইএমএফ।’

বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে এক বৈঠকে আইএমএফের সদস্যরা বাংলাদেশ কী পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ নিয়েছে, তার ডাটাবেজের তথ্য চেয়েছেন। এ ছাড়া ডাটাবেজে কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, সেটিও জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ সফরে আসা এ প্রতিনিধি দল।

এ প্রসঙ্গে ইআরডি সচিব শরিফা খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইএমএফ আমাদের কাছে ঋণ সংক্রান্ত ডাটাবেজ নিয়ে জানতে চেয়েছে। আমরা তা নিয়েই আলোচনা করেছি।’ তিনি জানান, তারা আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে— ডাটাবেজের কোন পদ্ধতি ব্যবহার করি। আমরা বলেছি, বাংলাদেশ আংকটাডের পদ্ধতি অনুসরণ করে।

এর আগে গত বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে বৈঠকে ব্যাংক খাতের উল্লেখযোগ্য সংস্কারসহ সব ধরনের শর্ত প্রতিপালন হচ্ছে কিনা— তা খতিয়ে দেখতে সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনের খসড়া চেয়েছে আইএমএফ। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ নিয়ে সংস্থাটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। একইসঙ্গে জানতে চেয়েছে— বর্তমান রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের সর্বশেষ অবস্থা। সফররত প্রতিনিধি দল রাশিয়ার সঙ্গে অ্যাডজাস্টমেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে কিনা তাও জানতে চেয়েছে। সংশোধিত উন্নয়ন বাজেট নিয়ে জানতে চেয়েছে তারা।

বৈঠক সূত্র জানায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন সম্পর্কেও জানতে চেয়েছে আইএমএফ। এ ক্ষেত্রে এডিবি কত টাকা ধরা হয়েছিল, কত টাকা ছেঁটে ফেলা হয়েছিল (সংশোধিত এডিবি) এসব জানতে চায় প্রতিনিধি দল। একইসঙ্গে ইআরডির ডাটা সিস্টেম বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়।

ইআরডি সূত্র বলেছে, বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধিদল বর্তমান সরকারের বৈদেশিক ঋণের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চায়। এ ক্ষেত্রে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ এবং উচ্চ এবং স্বল্প সুদের ঋণের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেয় তারা। পাশাপাশি আগে দেওয়া আইএমএফের কারিগরি সহায়তা ব্যবহারের বিষয়টিও উঠে আসে আলোচনায়।

আলোচনায় এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের (স্বল্পন্নোত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ) বর্তমান অবস্থা এবং উত্তরণ পরবর্তী ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কেও জানতে চায় প্রতিনিধি দল। এসব বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে ইআরডির পক্ষ থেকে।

এদিকে সরকারি কর্মচারীদের চাকরি শেষ করার পর প্রাপ্ত পেনশনকে সামাজিক নিরাপত্তার ব্যয় বলে মানতে নারাজ আইএমএফ। সরকারও সম্মত হয়েছে যে, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের মধ্যে এ ব্যয়কে দেখানো হবে না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সঙ্গে গত বুধবার সচিবালয়ে আইএমএফের ঢাকা সফরকারী স্টাফ কনসালটেশন মিশনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে।

মিশনটি গত মঙ্গলবার থেকে সরকারের বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে বৈঠক করছে, যা চলবে আগামী সপ্তাহেও। এ মিশন আগামী ২ মে পর্যন্ত ঢাকায় থাকার কথা থাকলেও আইএমএফের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান ও মিশন চিফ রাহুল আনন্দ এখন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন।

জানা গেছে, দু-এক দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ওয়াশিংটনে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার বৈঠক রয়েছে। ওই বৈঠকে অংশ নেওয়ার পর রাহুল আনন্দের ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।

জানা গেছে, আইএমএফের ঋণ নিতে ছোট-বড় ৩৮টি শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। শর্তগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই আর্থিক খাতের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আর্থিক খাতের মধ্যে আবার বড় অংশজুড়ে রয়েছে ব্যাংক খাত। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব সংক্রান্ত। এর মধ্যে গত মার্চ পর্যন্ত অর্জন এবং আগামী জুন ও সেপ্টেম্বরের মধ্যে যেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে, সেগুলোর বাস্তবায়ন পরিস্থিতি যাচাই করছে এবারের মিশন।

এ ছাড়া ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে যেসব শর্ত বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে সরকার, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য আসছে বাজেটে কী কী উদ্যোগ থাকছে, তাও পর্যালোচনা করা হবে।

সরকার চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ দেখিয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যেই রয়েছে সরকারি কর্মচারীদের পেনশন বাবদ ২৮ হাজার ৩৭ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্রের সুদ সহায়তা বাবদ ৭ হাজার ৯০৭ কোটি টাকাও বরাদ্দ রয়েছে চলতি অর্থবছরে। আইএমএফ এই অঙ্ককেও সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বাইরে রাখার কথা বলেছে। জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ ভালো থাকবে কিনা, আইএমএফ মূলত তা নিয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ আইএমএফের মিশনকে জানিয়েছে যে, দেশে চাহিদার তুলনায় বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ কম। দেশের অর্থনীতি এখন বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে ভুগছে। রফতানি আয় ও প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) দিয়ে সংকটের মোকাবিলা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে মার্কিন ডলারের অভাবে পণ্য আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা কমিয়ে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমদানি ব্যয় ছিল যেখানে ৮৩২ কোটি ডলার, এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে তা দাঁড়ায় ৫১৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছর আগের তুলনায় শুধু এক মাসে আমদানি ব্যয় কম হয়েছে ৩৮ শতাংশ।

এদিকে পৃথক বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে আগামী বাজেটে কর অব্যাহতির অঙ্ক জানতে চেয়েছে আইএমএফ। পাশাপাশি কর-জিডিপি অনুপাত দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে কর ব্যবস্থা সংস্কার ও রাজস্ব আয় বাড়ানোর রূপরেখা জানতে চায় তারা।

এছাড়া ব্যাংকের পাশাপাশি দেশের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডাটাভিত্তিক হালনাগাদ তথ্যও চেয়েছে আইএমএফ। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমানো এবং ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের পরিচালকদের ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে আইন সংস্কারে অনমনীয় মনোভাব দেখিয়েছে সংস্থাটি।

বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট, অনসাইট ও পরিসংখ্যান বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের চলমান কার্যক্রম উপস্থাপন করেন আইএমএফের প্রতিনিধি দলের কাছে।

মিশনকে জানানো হয়েছে, সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের মানুষও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ভুগছে। কোভিড মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় ব্যাঘাত ঘটার কারণেই এমন পরিস্থিতি হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি রফতানি আয় ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্যাংকগুলোতে বৈদেশিক মুদ্রার তারল্য ধীরে ধীরে বাড়ছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ আইএমএফ মিশনকে আরও জানায়, ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০২৩ গত ২৮ মার্চ অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা কমিটি। এটা এখন সংসদে পাঠানো হবে।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এনবিআর সংস্কার এবং ব্যাংক ও আর্থিক খাতে খেলাপি ঋণ কমানোসহ শৃঙ্খলা ফেরানোর ক্ষেত্রে তেমন কোনও পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না।’

উল্লেখ্য, ঋণের তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে সেপ্টেম্বর ও ২০২৪ সালের এপ্রিল-মে মাসে আরও দুটি রিভিউ করবে আইএমএফ।

 







সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ