অস্তিত্ব সংকটে কুয়াকাটা খাল
|
সাগরকন্যা কুয়াকাটার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কুয়াকাটা খাল। দুই পাড়ে বসবাসকারী ও ব্যবসায়ীদের অবাধ দখল আর নির্বিচারে বর্জ্য ফেলার কারণে নর্দমায় পরিণত হয়েছে খালটি। হারানো অস্তিত্ব ফিরিয়ে আনতে বছরখানেক আগেও খালটি খনন করা হয় । স্থানীয় বাসিন্দা ও মাছ ব্যবসায়ীদের অসচেতনতার কারণে এটি আবারও অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (কুটুম) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আমির বলেন, ‘খালটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সবার আন্তরিক হতে হবে। খালের জমি উদ্ধার করে একটি নান্দনিক লেক করতে পারলে পর্যটনের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।’ সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা পৌর শহরের এই খালটির দুই পাশে একাধিক স্থাপনা নির্মাণ করে দখল করা হয়েছে। খালের মধ্যে পিলার বসিয়ে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বাসাবাড়ির বর্জ্য, আবাসিক হোটেলের পয়ঃনিষ্কাশন ও ময়লা আবর্জনা নির্বিচারে ফেলা হচ্ছে। এছাড়া কুয়াকাটার মাছ বাজারের ময়লা-আবর্জনা যাচ্ছে খালের পানিতে। ফলে কুয়াকাটা পৌরসভার মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত খালটির পানি কালচে রং ধারণ করেছে। পানির দুর্গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে। কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে মেয়ের পরীক্ষা দেখতে এসেছেন খলিলুর রহমান। পৌর ভবনের সামনে চায়ের দোকানে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পানির দুর্গন্ধের মধ্যে মানুষ বাস করে কীভাবে? কুয়াকাটা পর্যটন এলাকার খালটির দুরাবস্থা দেখে আমি রীতিমত হতাশ। খালটি হতে পারে কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রের একটি নান্দনিক লেক। এতে কুয়াকাটা আগত পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়বে।’ কালভার্টের পাশের চায়ের দোকানদার রিয়াদুল মোল্লা বলেন, ‘মাছ বাজারের ময়লাযুক্ত পানি খালে নামানোর কারণে পানি নষ্ট হয়ে গেছে। জোয়ার-ভাটায় পানি ওঠা নামা করলে এ অবস্থা হতো না।’ কুয়াকাটা খালটি পৌরসভার পাশ দিয়ে পূর্বদিকে নবীনপুর এবং পশ্চিমে লতাচাপলী ইউনিয়নের ফাঁসিপাড়া পর্যন্ত প্রবাহিত হয়েছে। দীর্ঘ পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খালটির দু’পাড়ে বাস করছে কয়েকশ পরিবার। খালের দুপাড়ে বসবাসকারীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। মহিপুর ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এসএ রেকর্ড অনুযায়ী কুয়াকাটা খালটির অবস্থানভেদে প্রস্থ ৬০ থেকে ১০০ ফুট। খালটির আয়তন ছিল ৬০ একর ৫৯ শতাংশ। বর্তমান বিএস জরিপে দেখানো হয়েছে, ৩৭ একর ৭৮ শতাংশ। এর মধ্যে সাত একর লতাচাপলী ইউনিয়নে বাকি অংশ কুয়াকাটা পৌরসভায়। এসএ নকশা অনুসারে ৬০ একর ৫৯ শতাংশ খালের সীমানা চিহ্নিত করে খালটি উদ্ধার করার দাবি পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কলাপাড়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন মাননু বলেন, ‘খালটির অস্তিত্ব রক্ষা করা খুবই জরুরি। দখল আর দূষণের কবল থেকে খালটি রক্ষা করতে না পারলে পৌর শহরটি ঝুঁকিতে পড়বে। আমরা অনেক বছর পর্যন্ত এ অঞ্চলের নদী-খাল দখল, দূষণ ও ভরাটের কবল থেকে রক্ষার দাবিতে সামাজিক আন্দোলন করছি। কিন্তু এ নিয়ে প্রশাসনের কোনও পদক্ষেপ দেখেছি না।’ বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন বলেন, ‘খালটি মরে গেলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে পৌরবাসী । খালের দুপাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা জরুরি। অন্যথায় যৌবন হারিয়ে মরে যাবে খালটি।’ কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে খালটি খনন করার পরিকল্পনা রয়েছে। খালের পাশের মাছের বাজারটি অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা আছে। বাজারটি সরাতে পারলে খালে বর্জ্য ফেলা কিছুটা কমবে। কলাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, ‘খালটির অবৈধ দখলদারদের বিষয়ে সরেজমিনে খোঁজ খবর নিয়ে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
Please follow and like us: |