কিশোরীদের নিয়ে পর্নোগ্রাফি, গ্রেফতার হলো আসামি
|
একাধিক চাইল্ড পর্নোগ্রাফি কন্টেন্ট তৈরি, এ কাজে শিশুদের বাধ্য করা, স্থিরচিত্র ও ভিডিও ধারণ এবং সংরক্ষণ করে তা অনলাইন মাধ্যমে সরবরাহের অভিযোগে মো. ইনজামুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ৩১ মে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার ভবানীপুরের বানিয়ার চালা এলাকায় একটি টেক্সটাইল মিলের অফিস তাকে গ্রেফতার করে সাইবার পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ইনজামুল ইসলাম দিনাজপুর শহরের মোল্লাপাড়ার উত্তরাইলের মো. মাজহারুল ইসলামের ছেলে। মামলার বাদী সাইবার পুলিশ সেন্টারের উপপুলিশ পরিদর্শক ইমরান আহাম্মেদ বলেন, ‘গুগল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে এই পর্নোগ্রাফি তৈরির বিষয়টি চিহ্নিত করা হয়। এরপর গুগল থেকে আমাদের কাছে তথ্য পাঠানো হয় যে— বাংলাদেশে এক ব্যক্তি ইমেইল ব্যবহার করে চাইল্ড পর্নোগ্রাফি কন্টেন্ট তৈরি করে বিভিন্ন মাধ্যমে সরবরাহ করছে। পরে আমরা টেকনোলজির সহযোগিতায় তাকে খুঁজে পাই এবং গ্রেফতার করি।’ ঢাকার নিম্ন আদালতের পল্টন থানার নিবন্ধন কর্মকর্তা সাইফুল জানান, এ ঘটনায় গত ১ জুন ইনজামুলের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা দায়েরের পর তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে আসামি তার অপরাধ স্বীকার করে। এরপর সাইবার পুলিশ সেন্টারের উপপুলিশ পরিদর্শক ইমাম মেহেদী আদালতে ১৬৪ ধারায় ইনজামুলের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার আবেদন করেন। পরে ঢাকার মেট্রোপলিটন মাজিস্ট্রেট মাহবুব আহমেদের আদালত আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। এ মামলায় প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৩০ জুলাই দিন ধার্য করেন আদালত। ইনজামুল ইসলাম বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২১ এপ্রিল চাইল্ড পর্নোগ্রাফি কন্টেন্ট তৈরির বিষয়বস্তু নিয়ে গুগল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বাংলাদেশে চাইল্ড পর্নোগ্রাফি কন্টেন্ট তৈরি করা হচ্ছে এবং এতে শিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে— এমন একটি বার্তা আসে সাইবার পুলিশ সেন্টারের কাছে। ১৬ মে ঘটনাটি অনুসন্ধানের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে এ বিষয়ে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের অধীন সাইবার মনিটরিং সেল বিষয়টি পর্যালোচনা করে জানতে পারে— বাংলাদেশে বসবাসকারী এক ব্যক্তি গত ৮ জানুয়ারি একটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ইমেইলের মাধ্যমে কয়েকটি চাইল্ড পর্নোগ্রাফি কনটেন্ট ও ভিডিও তৈরি করেছে। সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি তার দুটি জি-মেইল আইডির মাধ্যমে চাইল্ড পর্নোগ্রাফি কন্টেন্ট তৈরির গুগল ড্রাইভে সংরক্ষণ করেছে। যেভাবে গ্রেফতার হলো আসামি এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাইবার পুলিশের উপপুলিশ পরিদর্শক ও এ মামলার বাদী ইমরান আহাম্মেদ বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় প্রথমে আমরা আসামির লোকেশন খুঁজে বের করি। তারপর তার চলাফেরা অনুসরণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে গ্রেফতার করি। পুরো অভিযানটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি।’ পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে যা জানা গেলো বাদী ইমরান আহাম্মেদ বলেন, ‘প্রথমে যার কন্টেন্ট তৈরি করা হয়েছিল, সে আসামি ইনজামুলের এক আত্মীয়। পরে সে অন্য কিশোরীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে এসব কন্টেন্ট তৈরি করে আসছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি এসব স্বীকার করেছে।’ পুলিশ জানায়, আসামি ইনজামুলের এই অনৈতিক কাজের শিকার শিশুদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইনজামুল শিশুদের ব্যবহার করে অনৈতিক কাজের মাধ্যমে ‘পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২’ এর ৮(১)/৮(২)/৮(৩)/৮(৬) ধারায় অপরাধ করেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাইবার পুলিশের উপপরিদর্শক ইমাম মেহেদী বলেন, ‘এ মামলায় গ্রেফতার ইনজামুল ইসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মামলার তদন্ত এখনও চলমান আছে। এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও গ্রেফতার করা হবে।’ এ বিষয়ে কথা বলতে আসামি ইনজামুল ইসলামের আইনজীবী সাবিত্রা রানী রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মামলার বিষয়ে আমার কাছে কোনও আপডেট নেই। ডায়েরি দেখে বলতে পারবো। অনেক মামলা থাকে, তাই মুখস্থ কিছুই বলতে পারছি না।’
|