ছয় কংগ্রেসম্যানের চিঠি নিয়ে প্রশ্ন
|
যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির ছয় কংগ্রেসম্যান তাদের দেশের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বাংলাদেশ ইস্যুতে এক চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তারা অনুরোধ করেছেন, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের যেন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ দেওয়া না হয়। এছাড়া ব্যক্তিকেন্দ্রিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করারও অনুরোধ করেছেন তারা। বাংলাদেশে যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয় সেই যুক্তি দেখিয়েছেন মার্কিন এই ছয় জনপ্রতিনিধি। চিঠিতে সই করেছেন পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের কংগ্রেসম্যান স্কট পেরি, ভার্জিনিয়ার বব গুড, আলাবামার বেরি মুর, টেনেসির টম ব্রুচেট, ওহাইও’র ওয়ারেন ডেভিডসন এবং টেক্সাসের কিথ সেলফ। তারা ওই চিঠিতে বলেছেন, শেখ হাসিনার সরকার ২০০৯ সাল থেকে ‘বিভিন্ন গণতন্ত্রবিরোধী কার্যক্রম’ করছে। এই সময়ে বাংলাদেশে আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সাংবাদিকদের জেলে পাঠানো, বিভিন্ন ধরনের অত্যাচারের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। হিন্দু ও খ্রিষ্টান সংখ্যালঘুদের ওপর বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন চালানোর বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা ‘সবচেয়ে বড় নির্যাতনকারী’ এবং তারা ‘আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের সঙ্গে জড়িত’ বলে চিঠিতে জানানো হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ফ্রিডম হাউজের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ব্যবহারের পাশাপাশি সুইডেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নেত্র নিউজ ও জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচেভেলের বাংলা সার্ভিসের খবর থেকেও উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ছয় রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যানের হঠাৎ করে বাংলাদেশ সম্পর্কে চিন্তিত হওয়া এবং এ ধরনের একটি চিঠি লেখার বিষয়টি অনেকের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক বিশ্লেষক বলেন, ‘যে ছয় রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ওই চিঠি লিখেছেন তাদের একজনও এর আগে বাংলাদেশ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেছেন কিনা সন্দেহ। ওই চিঠিতে বাংলা ভাষার দুটি উৎস (নেত্র নিউজ ও ডয়েচেভেলে) থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে, যা মার্কিন সিস্টেমে অত্যন্ত অস্বাভাবিক। তাদের হঠাৎ এই আগ্রহ কেন সেটি জানার দরকার আছে।’ তিনি বলেন, এই চিঠি লেখা হয়েছে এটি বাস্তবতা এবং এজন্য ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখা দরকার বাংলাদেশ সরকারের। কংগ্রেসম্যানরা কখন চিঠি লেখেন এ বিষয়ে সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত ধারণা, বাংলাদেশ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কারণ কংগ্রেসম্যানদের আছে বলে মনে হয় না।’ যদি ভোটারদের কথা বিবেচনা করা হয় তবে টেক্সাস, ওহাইও এবং পেনসিলভেনিয়ায় কিছু বাংলাদেশি থাকে। কিন্তু তাদের ৯৯ শতাংশই ডেমোক্র্যাট সমর্থক। ওই সমর্থকদের কথায় রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যানরা চিঠি লিখবে বলে মনে হয় না, তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘কংগ্রেসম্যানদের চিঠি লেখার দায়িত্ব থাকে তাদের স্টাফদের ওপর এবং তাদের যাবতীয় কাজকর্মের জন্য ওই স্টাফদের ওপর তারা নির্ভরশীল। সাধারণভাবে এ ধরনের চিঠি লেখার পর তাদের কাছ থেকে সই নেওয়া হয়। সেখানে প্রভাবিত করার অথবা অর্থের বিনিময়ে চিঠি লেখার বিষয়টিও হতে পারে।’ চিঠির ফলাফল কী হতে পারে এ বিষয়ে আরেক কূটনীতিক বলেন, ‘এই চিঠির কারণে মার্কিন প্রশাসন অবিলম্বে কোনও পদক্ষেপ নেবে বলে মনে হয় না। তবে ভবিষ্যতে যদি পদক্ষেপ নেয় তবে এটি একটি সাপোর্টিং ডকুমেন্ট হিসেবে উপস্থাপিত হবে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাটরা ব্যবস্থা নিয়েছে। ছয় রিপাবলিকানের এই চিঠি লেখা দেখে মনে হয়, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াটিকে একটি বাই-পার্টিজান বা উভয় পক্ষের মত আছে, এমন একটি রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশের করণীয় সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, ‘মার্কিন সিস্টেমে কংগ্রেসে উভয় দলই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় আছে বলে এমন মনে করার কোনও কারণ নেই যে রিপাবলিকানরা দুর্বল। এ জন্য সব দলের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক রাখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’
|