জাফলংয়ে বালু খেকোদের লুটপাট : নিরব প্রশাসন
|
সিলেট প্রতিনিধিঃ সিলেট গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ের (ইসিও) এলাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় অর্ধকোটি টাকার বালু লুট করছে স্থানীয় একটি সঙ্গবদ্ধ চক্র।কিন্তু সরেজমিন গেলে দেখা যায় জামাই সুমনই সিন্ডিকেটের মেইন গডফাদার এবং মাষ্টার মাইন্ড। স্থানীয় সাংবাদিক ম্যানেজ, প্রশাসন ম্যানেজ, নেতা ম্যানেজ সবই করেন এই জামাই সুমন। জামাই সুমন হচ্ছে জাফলং এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান লেবু মিয়ার ভাতিজী জামাই, তাই সকলের কাছেই তিনি জামাই সুমন হিসাবে পরিচিত। সরেজমিনে আরো দেখা গেছে, জামাই সুমনই প্রশাসন থেকে স্থানীয় সাংবাদিক নিয়ন্ত্রণ করেন, যাতে সংবাদ প্রকাশ না করা হয়। সম্প্রতি সংবাদ প্রকাশ হলে কয়েক দিন ওসি নজরুল ইসলাম বালু উত্তোলন বন্ধ করেদেন। কিন্তু পরে আবার নতুন করে রেইট বাড়িয়ে শুরু হয় বালু উত্তোলন। সিলেটের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ইমরান হোসেনও জাফলংয়ের পরিস্থিতি নিয়ে হতাশ। তিনি জানান, ‘অবাধে লুটপাট হচ্ছে, আমরা গিয়ে জরিমানা করেছি। তবে, ওই লুটপাট সিন্ডিকেটকে ‘কঠিন’ সিন্ডিকেট বলেও অভিহিত করেছেন তিনি।’ বলেন, ‘ওরা এতোটাই ব্যাপরোয়া, অভিযান কিংবা জরিমানা যেন তাদের গায়েই লাগে না। অভিযানে গেলে তারা দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা থেকেই তারা বালু লুট করছে।’ একটি গোপন সূত্র জানায়, গোয়াইনঘাট থানার ওসি নজরুল ইসলাম নাকি অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে চান না, জামাই সুমনের কারণে। আর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছের লোক সুমন তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছেনা অদৃশ্য কারনে। তবে এসিল্যান্ড নাছুড় বান্ধা প্রতি মাসে কয়েকবার তিনি অভিযান চালান, নৌকা আটকসহ আদায় করেন জরিমানা। তবে অনুসন্ধান মতে, সুবাস মুজিবের একটি রয়েলিটি আদায়ের কাগজ রয়েছে বিআইডবিøউ কর্তৃক। তারা প্রতিমাসে কাগজটির মেয়াদ বৃদ্ধি করে আসছেন। একমাস অন্তর-অন্তর তাদের কাগজটির মেয়াদ বৃদ্ধি করতে হয়। তবে তারা গোয়াইনঘাট বসেই সেই কাগজের বলে নৌকা প্রতি রয়েলিটি আদায় করেন। তারা কখনো জাফলং এলাকায় যান না। আর জামাই সুমন, ফয়জুল, আলিম উদ্দিন, ট্রাক শ্রমিক নেতা সমেদ জাফলং এলাকা থেকে সম্পন্ন অবৈধ ভাবেই বালু উত্তোলন করে আসছেন তাদের কোন বৈধ ইজারার কাগজ নেই। ডিসি অফিসও তাদের তাদের কোন বৈধ ইজারা দেয়নি। কোন প্রকার ইজারা বা লিজের কাগজ ছাড়াই তারা দীর্ঘদিন থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। যদিও তারা বলে, জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে জাফলং বালু উত্তোলনের নৌকা থেকে রয়েলেটি আদায় করার জন্য ইজারা নিয়েছেন তারা। কিন্তু জেলা প্রশাসক অফিস ঘুরে এরকম কোন ইজারার কাগজ পাওয়া যায়নি। ডিসি অফিসের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, (ইসিও) এলাকায় কোন বালু মহাল লিজ বা ইজারা দেওয়ার বিধান নেই। যারা বালু তুলছেন তারা সম্পন্ন অবৈধ ভাবে বালু তুলছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের নজরে নিয়ে আসা হবে। সরেজমিন আরো দেখা যায়, জাফলংয়ে বেপরোয়া বালুখেকো চক্রে তান্ডবে তছনছ নদীর দুটি তীর। বিলিন হয়ে যাচ্ছেন জাফলংয়ের ঐতিহ্যবাহী চা বাগান। ফলে হুমকির মুখে রয়েছে পরিবেশ। দর্শনার্থীরা জানান, অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের কারণে লন্ডভন্ড হচ্ছে দেশের এ অন্যতম পর্যটন স্পটটি। বালুখেকোরা কোটি কোটি টাকার বালু লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে মারাত্বক হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। আর সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। গত সোমবার সরেজমিন গেলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, জাফলং নয়াবস্তি ও কান্দুবস্তি এই দুই গ্রামের উপর অবস্থিত বন্যা রক্ষার জন্য তৈরি বেরিবাধ ভেঙ্গে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছে চাঁদাবাজ শীর্ষ সন্ত্রাসী ফিরোজ, ইমরান হোসেন সুমন উরফে জামাই সুমন, সামছুল আলম, আলিম উদ্দিন, ট্রাক সভাপতি ছবেদ উরফে সমেদ। গত বছর বন্যায় মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষেত খামার দোকান পাট সব কিছু ধ্বংস করে দিয়েছিলো সেই সুবাদে জাফলংয়ের সাধারণ মানুষ বাধ্য হচ্ছে ফেইসবুক তথা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাতেন। এতো বছর থেকে ঐ চাঁদাবাজ শীর্ষ সন্ত্রাসীরা লুটেপুটে জাফলংকে খাচ্ছে মন্ত্রী মহোদয় দেখেও না দেখার ভান করছেন। তার কারণ তিনি নিজে চাঁদাবাজদের কাছ থেকে ভাগ নিচ্ছেন মনে হয়। বিগত দিনেও বিভিন্ন টিভি চ্যানেল পত্রিকা জাফলং এর ধ্বংসলিলা নিয়ে লাগাতার নিউজ করেছিলো তারপরও বন্ধ হয়নি জাফলংয়ের ধ্বংসাত্বক অবৈধ চাঁদাবাজির কর্মকান্ড । এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. তানভির হোসেন বলেন, জাফলং এলাকাটি বন বিভাগ ও পরিবেশ মন্ত্রনালয় থেকে (ইসিও) করা, এখানে কোন বালু মহাল নেই। এমনকি ডিসি অফিস বা ইউএনও অফিস কোন প্রকার ইজারা দেওয়ার প্রশ্নই আসেনা। যারা বালু লুটপাট করছে তারা সম্পন্ন অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনসহ চাঁদাবাজী করছে। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি। কিন্তু অভিযান করে চলে আসার পর আবার শুরু হয় অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন। এ বিষয়ে কথা হয় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তৌছিফ আহমেদ এর সাথে, তিনি স্পষ্ট বলেন জাফলং (ইসিও) এলাকায় তাদের কোন লিজ নেই। যারা বালু উত্তোলন করছে ,তারা সম্পন্ন অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছে। স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন। |