২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ওই বছরের ২৩ মে পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মোট ২৬৪ জন। চলতি বছর একই সময়ে তা ছাড়িয়ে গেছে দেড় হাজারে। আর ২০২২ সালে উল্লিখিত সময়ে ডেঙ্গুতে মৃত্যু না থাকলেও এ বছর এখনও পর্যন্ত ১৩ জন মারা গেছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের একটি বড় অংশই ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকায় বাসিন্দা এবং হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি রোগী আসছেন যাত্রাবাড়ী থেকে। তবে মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই এ রকম ডেঙ্গু পরিস্থিতি দেখেননি কেউ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১ জানুয়ারি (২০২৩) থেকে ২৩ মে পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৫৩৩ জন। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ৯৭১ জন এবং ঢাকার বাইরে ৫৬২ জন ভর্তি ছিলেন। গত বছর একই সময়ে ২৪ ঘণ্টায় রোগী ভর্তির সংখ্যা ১০ জনের নিচে থাকলেও এবার তা ৫০ জনে ছাড়িয়েছে। গত ২০ মে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৫২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর ৭২২ জন রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখতে পায়, ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার যাত্রাবাড়ীতে ডেঙ্গু রোগী সবচেয়ে বেশি। হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীদের ৬১ দশমিক ৮ শতাংশই ঢাকা দক্ষিণ সিটির বাসিন্দা। এছাড়া ভর্তি রোগীদের ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার এবং ঢাকার বাইরে রয়েছে ২১ দশমিক ৯ শতাংশ। যাত্রাবাড়ীর পর কেরানীগঞ্জ ও কাজলা এলাকায় রোগী বেশি। ঢাকার সরকারি চার হাসপাতাল, পাঁচটি বেসরকারি ও একটি স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ভর্তি রোগীর তথ্য-বিশ্লেষণ করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা এ তথ্য জানিয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী আছেন মুগদা মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে। ৭২২ জনের মধ্যে ১৬০ জন রোগী ভর্তি ছিলেন এই হাসপাতালে। তবে প্রতি দিনই রোগীর চাপ বাড়ছে বলে জানান, হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘প্রতি দিনই রোগী আসছেন। রোগীর চাপ আছে এখানে। গত ২৪ ঘণ্টায় (২৩ মে) ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন। কাজলা এলাকা থেকে এখানে রোগী বেশি আসছেন। যদিও রোগীদের মধ্যে রোগের তীব্রতা কম।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের জরিপে ডেঙ্গুর জন্য ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ অন্যান্য এলাকার মধ্যে রয়েছে— উত্তরা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মুগদা ও জুরাইন। অধিদফতরের তথ্য বলছে, মুগদা মেডিক্যালের পর এ বছর ডেঙ্গু রোগী ভর্তির দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এরপর আছে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল। সরকারি এই তিন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হওয়ার প্রবণতা বেশি।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী রশিদ উন নবী বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। তবে আমরা এখনও চাপে পড়িনি। আজকে আমাদের এখানে ১৭ জন রোগী আছেন। তবে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ বছর আমাদের এখানে এক দিনে ১৭ জন রোগী এই প্রথম এসেছেন।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের (সিডিসি) লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, চলতি বছরে বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ অবস্থায় গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গু রোগী বাড়তে পারে।’
ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং এ বছরের সঙ্গে তুলনা করে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও এখনও বর্ষা মৌসুম শুরু হয়নি। সেজন্য আমরা মনে করি, আগাম সতর্কতা এবং প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্ষাকাল দীর্ঘায়িত হচ্ছে, যার ফলে ডেঙ্গুর মৌসুম দীর্ঘ হচ্ছে। সাধারণত সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমার কথা থাকলেও গতবছর নভেম্বর পর্যন্ত তা দীর্ঘায়িত হয়েছে।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘এবার যে ধরন আমরা দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে— এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে গত বছরের তুলনায়। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে রয়েছে— অপরিকল্পিত নগরায়ন। এছাড়া আছে পানি প্রবাহের সিস্টেম এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। সব মিলিয়ে মৌসুম যেমন ছিল, সেটি হয়তো থাকবে না। ডেঙ্গুর পিক সিজন আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসকে ধরা হয়। কিন্তু গতবছর তার ব্যতিক্রম ছিল। পিক হয়েছিল অক্টোবর মাসে। মার্চে সার্ভে করা হয়েছিল এডিস মশার। তবে এখন সেটা অনেকখানি পরিবর্তন হয়ে গেছে, যার কারণে ডেঙ্গু বেড়েছে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের বর্ষা-পরবর্তী (গত বছরের) সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার চেয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় এডিস মশার উপস্থিতি বেশি। যেসব বাড়িতে এডিস মশা পাওয়া গেছে, তার মধ্যে ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ বহুতল ভবন এবং ৩২ শতাংশ নির্মাণাধীন ভবন।
জরিপের তথ্যমতে, ২০২২ সালে এটা ছিল গড়ে ১১ শতাংশ। ঢাকার ৪ শতাংশের বেশি বাড়িতে এডিস মশার উপস্থিতি রয়েছে। চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকার দুই সিটি এলাকার ১০৮টি ওয়ার্ডে চালানো হয় এই জরিপ। এর মধ্যে উত্তর সিটির ৪০টি এবং দক্ষিণ সিটির ৫০টি ওয়ার্ডের তিন হাজার ১৫০টি বাড়িকে জরিপের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।




আমার কলিজার টুকরোটা কোথায়? নিখোঁজ তামিমকে খুঁজে পেতে চাচা-বাবা-মায়ের আকুতি,
চাঁদপুরে একাত্তর ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ঔষধ বিতরণ:দুই শতাধিক রোগীর মুখে স্বস্তির হাঁসি
চাঁদপুর সদরের ৭,৮,ও ৯নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী সম্মেলন- সম্মেলনে ঐক্যের জোয়ার
প্রাইভেটকার জব্দ হাজীগঞ্জে ভোররাতের চেকপোস্টে গাঁজা ফেনসিডিল ও ইয়াবাসহ ঢাকার যুবক-যুবতী আটক
চাঁদপুরের বিনিময় নাট্ট গোষ্ঠীর সভাপতি বাহার:সম্পাদক কৃষ্ণ গোপাল 