মালয়েশিয়ায় বেকার বাংলাদেশির সংখ্যা নগণ্য: হাইকমিশন
|
মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর কাজ না পাওয়া কর্মীর সংখ্যা মোট আসা কর্মীর তুলনায় খুবই নগণ্য। এটি এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণযোগ্য সীমার মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন। শনিবার (১৫ এপ্রিল) কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের সর্বশেষ পরিস্থিতি সংক্রান্ত জরুরি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের সব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশনের নিবিড় কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে গত ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে নতুন কর্মী নিয়োগের ওপর চার বছর আগে জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। পরে ২০২২ সালের ২ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পর দুই দেশের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অফিসে প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্কিং হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার স্থাপন পূর্বক আনুমানিক ২০২২ সালের আগস্টে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি নতুন কর্মী নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের লেবার ডিপার্টমেন্ট ৮ হাজার ৭২৭টি নিয়োগের চাহিদার বিপরীতে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৮৯২ জন বাংলাদেশি নতুন কর্মী নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। ইতোমধ্যে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯৫ জন নতুন কর্মী মালয়েশিয়ায় এসে পৌঁছেছেন। বাকি প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর আসা প্রক্রিয়াধীন আছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে মালয়েশিয়ায় আনুমানিক মোট পাঁচ লাখ নতুন বাংলাদেশি কর্মীর কর্মসংস্থান হবে বলে বাংলাদেশ হাইকমিশন আশাবাদী। মালয়েশিয়ায় আসার পর কিছু সংখ্যক বিদেশি কর্মী সঠিক কাজ পাচ্ছেন না বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়া ও ব্যক্তিগত সোর্স থেকে জানা গেছে। এর মধ্যে কিছু সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী সমস্যায় পড়েছেন বলে বাংলাদেশ হাইকমিশন অবহিত হয়েছে। এ বিষয়ে হাইকমিশন নিজস্ব উদ্যোগে এবং মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সহায়তায় তড়িৎ ব্যবস্থায় সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নিয়েছে। কিছু সংখ্যক কর্মীদের কাজ প্রদানে নিয়োগকর্তাকে বাধ্য করতে সমর্থ হয়েছে, বাকী কর্মীদের নতুন নিয়োগকর্তার অধীনে নিয়োগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মালয়েশিয়ায় বিদেশী কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়াটির বিষয়ে সর্বসাধারণের জ্ঞাতার্থে কিছুটা আলোকপাত করা প্রয়োজন বলে বাংলাদেশ হাইকমিশন মনে করে। মালয়েশিয়া সরকারের বিদেশি কর্মী নিয়োগের অনুমোদন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হলে একজন কর্মীও কর্মহীন হবার কথা নয়। কারণ, সারাদেশেই লেবার ডিপার্টমেন্টের শাখা-প্রশাখা রয়েছে। একমাত্র তারা যদি সঠিক যাচাই-বাছাই করে বিদেশি কর্মী নিয়োগের আবেদন অনুমোদন করে, তাহলেই বিদেশি কর্মীদের সঠিক চাকরি, কর্ম পরিবেশ, আবাসন ও মজুরি নিশ্চিত হবে। তা ছাড়া, মালয়েশিয়ার আইন অনুযায়ী দেশি-বিদেশি সব কর্মীর আইনগত সকল অধিকার নিশ্চিতের দায়িত্ব লেবার ডিপার্টমেন্টের ওপর এবং সে লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানকে সাংগঠনিক ও আইনগত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কোনো দেশের দূতাবাসের পক্ষেই শতভাগ যাচাই-বাছাই করে কর্মী নিয়োগের ডিমান্ড সত্যায়ন করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে, দূতাবাসকে আবশ্যিকভাবে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের ওপর নির্ভর করতে হবে। এটি বাংলাদেশসহ সব সোর্সিং কান্ট্রির দূতাবাসের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বাংলাদেশ দূতাবাস আনুমানিক ৯৫ শতাংশের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সঠিক আছে কি না সে সংক্রান্ত কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে ডিমান্ড সত্যায়ন করে থাকে। বাকি আনুমানিক ৫ শতাংশ ডিমান্ডের বিপরীতে দূতাবাস নিয়োগকর্তার অফিস/প্রজেক্ট সাইট ইত্যাদি ভিজিট করে সত্যায়ন করে থাকে। শতভাগ প্রজেক্ট /ফ্যাক্টরি তথা হাজার হাজার নিয়োগ প্রতিষ্ঠান সরেজমিনে ভিজিট করা দূতাবাসের পক্ষে বাস্তবিকভাবেই অসম্ভব। এটা মালয়েশিয়ার লেবার ডিপার্টমেন্টের পক্ষেই একমাত্র সম্ভব। তাই, মালয়েশিয়ার লেবার ডিপার্টমেন্টের ছাড়পত্রের ওপর আস্থা রেখে শ্রমিক পাঠানোই যুক্তিসঙ্গত। অন্য সব শ্রমিক পাঠানো দেশ এমনটিই করছে। শতভাগ প্রজেক্ট দূতাবাস কর্তৃক ভিজিট করে ডিমান্ড (চাহিদা) সত্যায়ন করতে হলে কর্মী আসার গতি এতই ধীর হবে যে, যেটা কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না। প্রতিযোগী দেশগুলো সেই সুযোগ নেওয়ার কারণে বাংলাদেশ তার যথাযথ সুফল থেকে বঞ্চিত হবে। তবে এক্ষেত্রে ডিমান্ড সংগ্রহকারী বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো তাদের মালয়েশিয়ার সহযোগী এজেন্সির মাধ্যমে নিয়োগকর্তার সঠিকতা এবং বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের সক্ষমতা যথাযথভাবে যাচাই করার পর শ্রমিক পাঠানোর কার্যক্রম নিলে শ্রমিকদের কর্মহীনতার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে। আরেকটি বিষয় এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ দূতাবাসকে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে সতর্ক করেছে যাতে দূতাবাস কোন প্রজেক্ট সাইট/ কোম্পানি সরেজমিনে যাচাই করতে না যায়। উক্ত কূটনৈতিক পত্রে তারা জানিয়েছেন যে, মালয়েশিয়ার যেকোনো কোম্পানি পরিদর্শনের একমাত্র এখতিয়ার মালয়েশিয়ার লেবার ডিপার্টমেন্টের। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময়ে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক সভায়ও বিষয়টি বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে এবং কর্মী নিয়োগের ডিমান্ডের যথার্থতা নিশ্চিতের দায়িত্ব মালয়েশিয়ার সরকারের বলে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উচ্চতর প্রতিনিধির মাধ্যমে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ হাইকমিশনকে কোম্পানি ভিজিট থেকে বিরত থাকার জন্য পুনরায় বলা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় আসার পর কাজ না পাওয়া কর্মীর সংখ্যা মোট আসা কর্মীর তুলনায় খুবই নগণ্য। এটি এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণযোগ্য সীমার মধ্যে রয়েছে। এটি শুধু বাংলাদেশি কর্মীদের ক্ষেত্রেই হচ্ছে না, নেপাল, মিয়ানমারসহ অন্যান্য অনেক দেশের শ্রমিকও এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। এই শ্রেণীর বাংলাদেশি কর্মীদের নতুন নিয়োগকর্তার অধীনে নিয়োগ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ভবিষ্যতে যাতে এই পরিস্থিতির অবনতি না হয়, সে বিষয়ে মালয়েশিয়ার সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে যাতে করে বৈধভাবে আসা একজন বাংলাদেশি কর্মীও মালয়েশিয়ায় বিড়ম্বনার শিকার না হয়। মালয়েশিয়ায় বিদেশী কর্মী নিয়োগ এবং ব্যবস্থাপনার বাস্তবতার বিষয়টি সব সচেতন মহল সম্যক অবহিত আছে। মালয়েশিয়ার নতুন সরকার এ সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের সভায় বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের দীর্ঘদিনের পুরানো ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিতে মালয়েশিয়ার বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের প্রচেষ্টা ও পরিকল্পনাকে বাংলাদেশ হাইকমিশন সাধুবাদ জানাচ্ছে। বাংলাদেশ হাইকমিশন এই বিশাল কর্মযজ্ঞ পূর্ণ আন্তরিকতা ও সর্বোচচ স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে বদ্ধপরিকর, যাতে করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মীর নিরাপদ অভিবাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে। এক্ষেত্রে, কর্মীদের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে সব চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় রেখে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন শ্রমিক নিয়োগের ডিমান্ডসমূহের অনুমোদনের সত্যতা এবং নিয়োগকারীর সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য ক্ষেত্রবিশেষে কিছু কিছু কোম্পানি সরেজমিনে তদন্তের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এই কার্যক্রম পরিচালনায় হাইকমিশনের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় কোনো প্রকার শিথিলতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে না। এই মহৎ কার্যক্রমে সব সচেতন মহল ও অংশীজনের যথাযথ দায়িত্ববোধ, পূর্ণ আন্তরিকতা ও সহায়তা প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ হাইকমিশন।
|