সরকার পরিবর্তনের এখতিয়ার বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের নেই
|
দেশের বিষয় নিয়ে ক্ষণে ক্ষণে বিদেশিদের ধরনা দেওয়া দেশবিরোধী কাজ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘দেশ আমাদের। এ দেশের মালিক জনগণ। সরকার নির্বাচিত করার, সরকারকে বিদায় দেওয়ার দায়িত্ব কিংবা ক্ষমতা বা এখতিয়ার শুধু জনগণের। এ দেশের সরকার পরিবর্তনের এখতিয়ার বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের নেই। এটি বিদেশিদের কাজও নয়। যে রাজনৈতিক দল বা যে রাজনৈতিক নেতারা ক্ষণে ক্ষণে দেশের রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে বিদেশিদের কাছে ধরনা দেন, বিদেশিদের হাতে পায়ে ধরেন, সেটি দেশবিরোধী কাজ। বিএনপি যদি এ কথা বলে থাকে সেটিও দেশবিরোধী বক্তব্য।’ সোমবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তথ্যমন্ত্রী। এসময় তিনি সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়েও আলোচনা করে। এর একপর্যায়ে সাংবাদিকরা বিএনপির প্রস্তাবিত রাজনৈতিক বিষয়ে বিদেশিদের মধ্যস্থতা নিয়ে প্রশ্ন করলে তার জবাবে হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যদি কোনো সমস্যা থাকে সেটি, আমাদেরই সমাধান করতে হবে। অতীতেও আমরাই সমাধান করেছি। বিএনপির কোনো বক্তব্য থাকলে তারা নির্বাচন কমিশনে বলতে পারেন। তাদের যদি কোনো বক্তব্য থাকে যে তারা সরকারের সঙ্গে কথা বলতে চান, সেটাও তারা বলুক। বিদেশিদের কাছে গিয়ে ধরনা দেওয়া দেশবিরোধী কাজ।’ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা বিষয়ে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। সেখানে সরকারের ভূমিকা গৌণ। সরকার শুধু ফ্যাসিলেটেটরের ভূমিকা পালন করে। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি দপ্তর ও তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত হয়।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন এরইমধ্যে সফলভাবে বেশ কয়েকটি নির্বাচন করেছে। সামনে সিটি মেয়র নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনগুলো নিয়ে কোনো প্রশ্ন আসেনি। গাইবান্ধার ভোট কমিশন নিজেই বাতিল করেছিল। যদিও সেই বাতিল প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু এরপরও নির্বাচন কমিশনই বাতিল করেছিল। অর্থাৎ তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে, দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।’ ড. হাছান আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, নির্বাচন কমিশনের অধীনে আগামী নির্বাচন অবাধ, অংশগ্রহণমূলক, উৎসাহব্যঞ্জক ও সবার অংশগ্রহণে বিশ্বময় গ্রহণযোগ্যভাবে অনুষ্ঠিত হবে। সেই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে, দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি যেমন আগে বিচক্ষণতার সঙ্গে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন, এক্ষেত্রেও অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।’ ‘আপনারা জানেন যে, আজ বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিন শপথগ্রহণ করেছেন। একইসঙ্গে ২১তম রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিদায় নিয়েছেন। দেশের ইতিহাসে প্রথম একজন রাষ্ট্রপতি ১০ বছর সম্মানের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার পর বিদায় নিয়েছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত আছে বিধায় এটি সম্ভব হয়েছে’ যুক্ত করেন মন্ত্রী। আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যদিও গণতন্ত্রকে নসাৎ করার জন্য গত ১৪ বছরে বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে, নির্বাচন ভণ্ডুল করার অপচেষ্টা হয়েছে। গণতন্ত্রের চর্চাকে ব্যাহত করা, বিশেষ ধরনের সরকার আনার অনেক অপচেষ্টা হয়েছে। এখনো তা অব্যাহত আছে। কিন্তু দেশের ইতিহাসে একজন রাষ্ট্রপতি ১০টি বছর অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পর বর্ণাঢ্যভাবে তাকে আমরা বিদায় জানাতে সক্ষম হয়েছি। আমি মনে করি, এতে গণতন্ত্রেরই বিজয় হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।’ নতুন রাষ্ট্রপতির জীবনের ওপর আলোকপাত করে তিনি আরও বলেন, ‘মোঃ সাহাবুদ্দিন একজন প্রাজ্ঞ, বিজ্ঞ, বিচক্ষণ মানুষ। তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জেলা জজ, দুর্নীতি দমন কমিশনার, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করেছেন। সব ক্ষেত্রে তিনি তার যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। একইসঙ্গে তিনি মুক্তিযোদ্ধা এবং পঁচাত্তরের পরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে কারাবরণ করেছেন। পদ্মা সেতু থেকে যখন বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নিলো, তখন দেশের পক্ষে অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে আজকে শপথগ্রহণ করেছেন, তিনি অত্যন্ত যোগ্যতার সঙ্গে, বিচক্ষণতার সঙ্গে সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতির মতো জনবান্ধব রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।’ পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এ দেশ রচনার, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দেশ পরিচালনার সার্থকতাটা সেখানেই যে, পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে আমরা অনেক এগিয়ে গেছি। যে পাকিস্তানিদের অনেকেই আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বলেছিল, ভুখা বাঙালি চলে গেছে, খুব ভালো হয়েছে। আজ সেই পাকিস্তান, পাকিস্তানের জনগণ, রাজনীতিবিদরা এমন কি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীও আমাদের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।’ হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের দেশে যে রাজনীতিবিদরা পাকিস্তানপন্থি কিংবা পাকিস্তানপন্থি হিসেবে পরিচিত ছিল, তাদেরই সন্নিবেশ ঘটিয়ে বিএনপি তৈরি হয়েছে। আর ফখরুল সাহেবও যে পাকিস্তানপন্থি, কদিন আগে পাকিস্তানই ভালো ছিল বলে সেটা উনি প্রমাণ করেছেন। পাকিস্তানে এবার রমজানের সময় ১৬ জন পদদলিত হয়ে মারা গেছেন, যে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি ৩১ শতাংশের ওপরে, যে পাকিস্তানকে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক ঋণ দিচ্ছে না, সেই পাকিস্তানই ভালো ছিল বলেছেন ফখরুল সাহেব। |